সালমানের আশীর্বাদে হাজার কোটি টাকার মালিক শাকিল, ৩শ কোটি পাচার
একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরালেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের আশীর্বাদে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন পুরান ঢাকার শাকিল হোসেন।তিনি বিদেশেই পাচার করেছেন প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, বিতর্কিত ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ৪৬ হাজার কোটি টাকার সিংহভাগই এই শাকিলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের অবৈধ লেনদেনের কারণে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদেরকে লাল তালিকাভুক্ত করে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, লালবাগের আজিমপুরের ৬/৯ শেখশাহেব বাজার এলাকার মৃত জামাল উদ্দিনের ছেলে শাকিল হোসেন ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই অর্থবিত্তে ফুলে-ফেঁপে উঠেন।সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে ও তার ছত্রছায়ায় শাকিল গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। আজিমপুরের ছাপড়া মসজিদ এলাকায় একসময় ভাড়া বাসায় থাকলেও বর্তমানে ওই এলাকায় তিনি ১২ থেকে ১৫টি বাড়ির মালিক।এ ছাড়া কানাডার বেগমপাড়ায়ও তার বাড়ি রয়েছে।কেরানীগঞ্জে ৪৫ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কল-কারখানা। এসব কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সালমান এফ রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করেও শাকিল এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। শাকিল নিজেও বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে কয়েকশ কোটি টাকা পাচার করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সূত্র জানায়, দুটি ব্যাংকের চকবাজার শাখায় নাম সর্বস্ব কোম্পানি কেরানীগঞ্জে স্মার্ট লাইফ ফুটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ, বাবর সু-ইন্ডাস্ট্রিজ, এম আলী ট্রেডিং, ঢাকার ইসলামবাগের শহিদবাগ শাকিল পিভিসি পলিমার অ্যান্ড রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও লালবাগের এটুজেড ট্রেডিং হাউজের অধীনে বিদেশে এলসির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করতেন শাকিল। বর্তমানে এই হিসাবগুলোকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার ইসলামবাগের শহিদবাগ শাকিল পিভিসি পলিমার অ্যান্ড রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে প্রতিষ্ঠানটি একটি জীর্ণশীর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা গেছে। ৫ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটি আর খোলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী কাউকে দেখা যায়নি। আশপাশের কয়েকজন জানায়, কারখানাটির মালিক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী শাকিল। বেশ কিছুদিন থেকে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। তবে ব্যাংক লেনদেনের তথ্যের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বাইরের রূপে কোনো মিল নেই। এই কারখানার নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হতো বলে শুনে আশেপাশের লোকজন উষ্মা প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা ওই সময় ব্যাংকের মধ্যে এলসি চাইলে বিভিন্নভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু শাকিলের কোম্পানিকে শত কোটি টাকার এলসি করতে কোনো কার্পণ্য করা হতো না। আর শাকিল এসব প্রভাব বিস্তার করত সালমান এফ রহমানের সহায়তায়। নাম সর্বস্ব এসব কারখানার নামে বিদেশ থেকে বন্দরে মাল আনতেন শাকিল।পরে এই মাল দেশে বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে শাকিল হোসেনকে দিয়ে সালমান এফ রহমান বিদেশে অর্থ পাচার করতেন। অভিযোগ রয়েছে, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই- এই অর্থ পাচার করা হতো। সালমান এফ রহমান প্রায়ই শাকিলের অফিসে গোপনীয় মিটিং করে বিদেশে টাকা পাচার করতে দিকনির্দেশনা দিতেন। তাদেরকে প্রায়ই প্রকাশ্যে দেখা যেত। একসঙ্গে তাদেরকে হজ এবং ওমরাসহ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতেও দেখা গেছে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সালমান জেলে যাওয়ায় শাকিল গা ঢাকা দিয়েছেন এবং বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন বলে জানান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ বিষয়ে একটি ব্যাংকের চকবাজার শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার বলেন, শাকিল হোসেনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক সমস্য রয়েছে। তারা ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত ছাড়াও তাদের হিসাবগুলো ‘রেডব্লক’ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাকিল হোসেনের মোবাইল ফোনে কল ও খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। পরে তার আজিমপুরের বাসায় গিয়েও তার সঙ্গে দেখা বা কথা বলা সম্ভব হয়নি।