শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ টিয়ারশেল বহু আহত তীব্র যানজট
চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি, লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দুপুরে মিছিল নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। এরপর শিক্ষার্থীরা দাবি মেনে নিতে বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যায় কিনা সে বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। তারা বিষয়টি নিয়ে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে পরামর্শ দেবে। দুই উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলনকারীদের দাবিকে যৌক্তিক বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তারা আজ সরকারের গঠিত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কাকরাইল থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল সড়কের দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা। রহিম নামে এক বাইকার বলেন, শুধু কাকরাইল মোড় পার হতে ৪০ মিনিট লেগেছে। রফিক নামে এক সিএনজিচালক বলেন, কয়েকটি রাস্তা ঘুরে কাকরাইল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত আসতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। জানা যায়, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সোমবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা জাদুঘরের সামনে এসে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে যমুনার সামনে অবস্থান নিতে যান। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। পরে তারা যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিসহ নানা স্লোগান দেন। সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা মিছিল ও স্লোগান দিয়ে ব্যারিকেড সরিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ এবং অনেককে লাঠিচার্জ করে। শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করার সময় তারাও জামা খুলে বুক পেতে দেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকজন বুকে গুলি করতে বলেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈষম্য দূর করার জন্য ছাত্র-জনতা রাজপথে রক্ত দিয়ে স্বৈরাচার সরকারকে বিদায় করেছে। অথচ আপনারা আবার এসেছেন ছাত্রদের রক্তাক্ত করতে। চাকরিতে প্রবেশে বৈষম্য রেখে দেশ থেকে কোনোদিন পুরোপুরি বৈষম্য দূর করা যাবে না। সমাবেশে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি নতুন নয়। আমরা এখানে ৩৫-এর দাবি নিয়ে এসেছি। শাহবাগ থেকে এখানে আসার পথে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে আমাদের বাধা দিয়েছে। একপর্যায়ে তারা আমাদের লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে অনেককে আহত করেছে। আরেক আন্দোলনকারী বলেন, সেশনজট, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের বয়সসীমা পার হয়ে যাওয়ায় এখন আমরা ভুক্তভোগী। আমরা চাকরি চাই না, অন্তত প্রতিযোগিতা করার সুযোগ চাই। সোহেল নামের এক আন্দোলনকারী জানান, বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এক ঘণ্টা শেষ হলে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদলকে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ডাকা হয়। পরে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ভেতরে যান। দলের সদস্যরা হলেন-রতন, রুমান, মিয়াজি, সুরাইয়া, সাদ, সুমি ও রাসেল। সেখানে তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেরিয়ে আসেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। তখন রুমান, সাদ ও রাসেল সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের দাবিকে প্রধান উপদেষ্ট ইতিবাচক বলেছেন। আজ তারা এ বিষয়ে গঠিত কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবি বাস্তবায়নের বিষয়ে কথা বলবেন। এছাড়া সোমবার রাতে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেবেন। এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হাসান মাহমুদ নাছের বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হালকা লাঠিচার্জ করলেও কাউকে আটক করা হয়নি। চাকরিতে বয়স বৃদ্ধির দাবি পর্যালোচনায় কমিটি : কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক সচিব আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান। কমিটির সদস্য সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস-উর রহমান। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ পেশ করবে। সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, এই কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার দাবি এবং চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের যৌক্তিক বয়সসীমা নির্ধারণের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে। তিনি বলেন, কমিটির আহ্বায়ককে ক্ষমতা ও এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, যে কজন সদস্য প্রয়োজন উনি কমিটিতে নেবেন।