২০ হাজার পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন

১ অক্টোবর, ২০২৪ | ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ভিসার জন্য আবেদনকারী ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে। ভিসার দাবিতে ‘বিক্ষোভ ও হুমকির’ জেরে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। রোববার ভারতের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দ্য প্রিন্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ইন ঢাকা, ফেসিং প্রটেস্টস অ্যান্ড থ্রেটস, রিটার্নস ২০,০০০ ভিসা অ্যাপলিক্যান্টস পাসপোর্টস’ শিরোনামে রোববার প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম দ্য প্রিন্ট। সেই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়া আবার টাইমট্রাভেল বিভাগে ‘ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ইন ঢাকা রিটার্নস ২০,০০০ পাসপোর্টস অ্যামিড প্রটেস্টস অ্যান্ড থ্রেটস’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মূলত গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ভারতীয় হাইকমিশনের ভিসা পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। আপৎকালীন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনকে উদ্দেশ করে ব্যাপক বিক্ষোভ ও হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মূলত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ফলে এই পাসপোর্টগুলো ভারতীয় হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে, বর্তমানে শুধু সীমিতসংখ্যক জরুরি ভিসার আবেদনগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে। অবশ্য এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ভিসা আবেদনও রয়েছে, যেমন জরুরি চিকিৎসা, স্টুডেন্ট ভিসা এবং তৃতীয় দেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় ডবল-এন্ট্রি ভিসা। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনেকাংশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তাই ভিসা আবেদনকারী অনেকের পাসপোর্ট ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনেই ছিল। ভিসা সেবা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ আবেদনকারীদের অনেকেই ব্যাপকভাবে হাইকমিশনে ই-মেইল করছেন, এমনকি কিছু ই-মেইলে ভাঙচুরের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতীয় ভিসা আবেদনকেন্দ্রের স্টাফদেরও নাজেহাল করা হয়েছে। ভিসা আবেদন কেন্দ্রের সদস্যরা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জনগণের অসন্তোষ প্রকাশের স্থানে পরিণত হয়েছে। ক্ষুব্ধ ভিসাপ্রার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ জানানোর সময় প্রায়ই হাইকমিশনকে ট্যাগ করছে। অবশ্য ভারতে বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভ্রমণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে বাংলাদেশ। শুধু ২০২৩ সালে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা ইস্যু করেছিল ভারত, এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। আর এ বছর আগস্ট পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশিদের জন্য আট লাখ ভিসা ইস্যু করেছে। এর মধ্যে দুই লাখই হচ্ছে চিকিৎসার জন্য। তবে হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে ভারতীয় ভিসা প্রদান কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যেহেতু বাংলাদেশে অনেক দেশের কূটনৈতিক মিশন নেই, তাই বাংলাদেশিরা প্রায়ই অন্য দেশের ভিসা পেতে ভারতের ওপর নির্ভর করেন। যারা ভ্রমণ বা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে এসব দেশ ভ্রমণে যাবেন, তাদের ভিসার আবেদন জরুরি হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ অবস্থায় হাইকমিশনের কাছে আটকে থাকা পাসপোর্টগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্গাপূজা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ভিসা আবেদনের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, উভয় দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে হাইকমিশন সতর্কতা অবলম্বন করছে। এছাড়া অস্থায়ী ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে হাইকমিশন। কারণ চিকিৎসার প্রয়োজন না হলেও অন্য উদ্দেশ্যে ভারতে মেডিকেল ভিসায় ভ্রমণের মতো ভিসার বেশ কিছু অপব্যবহারের ঘটনা সামনে এসেছে। এদিকে দুই দেশের সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।