নাসরুল্লাহর অবস্থান কীভাবে খুঁজে পেল ইসরাইল, জানা গেল সেই তথ্য
দখলদার ইসরাইলের বিমান হামলায় শুক্রবার রাতে নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে প্যারিসিয়েন জানিয়েছে, ওই বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরাইলকে নাসরুল্লাহর অবস্থান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানিয়ে দেয় এক ইরানি গুপ্তচর। এরপরই ইসরাইলি বাহিনী তাকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। লেবাননের নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ইরানি গুপ্তচর ইসরাইলকে জানায়, শুক্রবার বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন নাসরুল্লাহ। তিনি যখন মাটির নিচে অবস্থিত সদর দপ্তরে প্রবেশ করেন তার কিছুক্ষণ পরই বিমান হামলা চালানো হয়। এতে ব্যবহার করা হয় বাঙ্কার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। যা হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরকে ধসিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ২০০৬ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর ইসরাইল হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি তারা হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব সাফল্য পেয়েছে, সেগুলোর সবই এই গোয়েন্দা তৎপরতারই ফল। তারা হিজবুল্লাহ সম্পর্ক গোপন তথ্য সংগ্রহে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হলো গুপ্তচর নিয়োগ করা। এছাড়া ইসরাইলি সিগন্যাল গোয়েন্দা এজেন্সি ইউনিট ৮২০০ এমন কিছু অত্যাধুনিক সাইবার টুলস তৈরি করে, যেগুলো দিয়ে খুব ভালোভাবে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইসে আঁড়ি পাতা যেত। এছাড়া গোয়েন্দাদের নতুন দলটি তৈরি করা হয় সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে। যেন সেনা এবং বিমান বাহিনীর কাছে তারা সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য পৌঁছে দিতে পারে। এদিকে হালা জাবের নামের এক বিশ্লেষক, যিনি ‘হিজবুল্লাহ: বর্ন উইথ এ ভেঞ্জেন্স’ বইটির লেখক, তিনি আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু লেবাননের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক হবে। সানডে টাইমসের সাবেক সংবাদদাতা বলেন, ‘ইসরাইল মনে করে নাসরুল্লাহ ও তার সহকর্মী এবং কয়েকজন কমান্ডারকে হত্যা করেই তারা এই সংগঠনকে শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো আমাদের দেখিয়েছে যে, একজন নেতা চলে গেলে আরেকজন তার জায়গায় আসেন এবং শক্ত ভাবে হাল ধরেন’। জাবের আরও বলেন, হিজবুল্লাহর নতুন নেতৃত্ব সাধারণত ‘আরও তীব্র, আরও দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ এবং আরও অগ্রগামী’ হয়ে থাকবে। ১৯৯২ সালে যখন হিজবুল্লাহর পূর্ববর্তী নেতা আব্বাস আল-মুসাভিকে ইসরাইল হত্যা করে, তখন নাসরুল্লাহ এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। জাবেরের মতে, ‘নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সংস্কার করেছেন, পরিপক্ব করেছেন এবং একে আজকের অন্যতম শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেছেন’।