টানা বর্ষণে জনজীবন স্থবির, তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা
তিন দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। পানির চাপ সামলাতে ব্যারাজের সব জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে। দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৯৭ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বর্ষণ আর উজানের ঢলে দিনাজপুরের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই কারণে রংপুরের কাউনিয়ায় বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। এতে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুরসহ নিম্নআয়ের মানুষ। জানা গেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেশ কিছুদিন তাপদাহের পর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে উত্তরাঞ্চলে। এতে তাপমাত্রা কমে আসায় গরম থেকে স্বস্তি মিললেও বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। এছাড়া শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় দিনাজপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কিছু রাস্তায় হাঁটুপানি জমেছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ১৮৭ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জুয়েল রানা বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রতিটি নদীর পানিই শুক্রবার বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিনি বলেন, পুনর্ভবা নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৩১ দশমিক ১৯ মিটারে। ইছামতি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২৭ দশমিক ৪৫ মিটারে। আত্রাই নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৩৬ দশমিক ৭৪ মিটারে। বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তবে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শুক্র ও শনিবার দুদিন পর্যন্ত রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আছে। এর ফলে এ দুদিন রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এতে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রংপুরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকালে কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।