ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সেক্রেটারির বাজিমাত
ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে রগ কাটার অভিযোগের বিষয়ে কোনো নথি নেই বলে দাবি করেছেন ইসলামি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি জেনারেল এস এম ফরহাদ। বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বরং গুগলে সার্চ করলে রগ কাটার সব অপরাধ ছাত্রলীগের নামে পাওয়া যাবে।” আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দেড় মাস পর শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম প্রকাশ পায়। এরপর এটিই প্রথম সংবাদ সম্মেলন। ফরহাদ বলেন, “আপনি রগ কাটা লিখে গুগলে সার্চ করলে দেখবেন সব অপরাধ ছাত্রলীগের নামে। শিবিরের নামে কোনো নথি আপনি পাবেন না। ফ্যাসিবাদ যে বয়ান তৈরি করেছে, তার বিরোধিতা কেউ করতে পারেনি। “আমাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। আপনি জরিপ করলে ছাত্রশিবিরের বিষয়ে ৯০ শতাংশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাবেন।” গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হিসেবে অংশ নেন সাদিক কায়েম, পরে ফেইসবুক পোস্টেও তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে পরের দিন প্রকাশ পায় ফরহাদের নামও। ছাত্রলীগের একটি কমিটিতে তার নাম ছিল। তবে ফরহাদ দাবি করেছেন, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেননি। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের কমিটির কিছু প্রক্রিয়া আছে। আমি কখনও সেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করিনি। কখনও সিভি জমা দেইনি। তবুও কেন আমাকে পদ দিল, সে প্রশ্ন ছাত্রলীগকে করা উচিত।” বিতর্ক সংসদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার ছবি দেখা গেছে। সেখানে তিনি কেবল আয়োজক হিসেবে ছিলেন, এমন কথাও বলেন তিনি। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ফরহাদ বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠায় কিছু প্রধান বাধা মনে করে। সে কারণে প্রথমে তারা সেনাবাহিনীকে ‘হত্যা করে’। তারপর তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বাধা মনে করে ছাত্রশিবিরকে। এমনও হয়েছে যে, কেউ নামাজ পড়ছে এমন অবস্থায় তুলে নিয়েও বলেছে ‘অস্ত্রসহ আটক’।” ছাত্রশিবির নিয়ে যে ‘ভীতি’ তৈরি করা হয়েছিল, সেটি ভেঙে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সাথেই ছিলাম। দীর্ঘ ৫ বছর আমাকে যারা পর্যালোচনা করেছেন, তারা এখন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।” তিনি বলেন, আমার ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা জানে। গোপন রাজনীতি কেন? কয়েক বছর গোপনে রাজনীতি করার বিষয়ে এক প্রশ্নে ফরহাদ বলেন, “২০০৯ সাল পর্যন্ত ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছিল। এরপরও যেখানে সম্ভব হয়েছে, সেখানে প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছে। হত্যার ভয়ে শিবির নেতাকর্মীদের পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছিল। “ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিকে ৫৬ দিনের রিমান্ডে দেওয়া হয়, বিভিন্ন শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে গুম করা হয়, ক্রসফায়ার দেয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে দেয়; কেউ কিছু বলে না। এমন পরিস্থিতিতে ‘তুমি কেন পরিচয় দিচ্ছ না’, এই প্রশ্ন যৌক্তিক নাকি ‘তোমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই’ এ প্রশ্নটি যৌক্তিক?” শিবিরকে মজলুম সংগঠন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের শত শত দায়িত্বশীল এখনো গুম রয়েছে। আমাদের পূর্ববর্তী কয়েকটি কমিটির সদস্যদের ক্রসফায়ার দেওয়া হবে এবং পরের কেউ হত্যার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না- (এমন পরিস্থিতিতে) একটি মজলুম সংগঠনকে এই প্রশ্ন করা আরও বড় জুলুম।” ৯ দফা দাবিতে ভূমিকা কী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফারি যে দাবিটি পরে এক দফায় পরিণত হয়, সেই ৯ দফা ফরহাদের পরামর্শে করা হয় বলে এর আগে জানিয়েছিলেন সমন্বয়ক আবদুল কাদের। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি বলেন, “এই আন্দোলনটা সকল মানুষের ছিল। বিভিন্ন নেতাকর্মীরা নিজেদের দলের পরিচয় ভুলে গিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী এখানে শামিল হয়েছেন। ছাত্রশিবিরও তার রিসোর্স নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। কোনটা কার পরিকল্পনা, কীভাবে তা বাস্তবায়ন হয়েছে- এসব কৃতিত্ব নেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্পিরিটের সাথে যায় না। এখানে ছাত্রদল, বাম ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছে।” তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের মনে রাজনীতি নিয়ে এখন যে চিন্তা গঠন আছে, এটা গত ১৫ বছরে ‘ফ্যাসিবাদী বয়ানের’ আউটপুট। তারা দেখেছে, ছাত্ররাজনীতি মানে নেতাকে প্রটোকল দেওয়া, হলে আসন বণ্টন করা, ভিন্নমতকে নির্যাতন করা এবং কেউ কথা বলতে না পারা। কিন্তু আমূল সংস্কারের পর এসব পরিবেশ পরিবর্তন হলে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি গ্রহণ করবে।” শিবির সেক্রেটারির এই সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিও দেখে অনেকে মন্তব্য করেছেন শিবির সেক্রেটারি প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বাজিমাত করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কঠিন কঠিন প্রশ্নকে অতি সহজে নিজে সাজিয়ে গুচিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে একাই ছিলেন।