নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। আর নির্বাচন কবে হবে, তার সময়সীমাও এখনই তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। ইতোমধ্যে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, ওই কমিশন সুপারিশ দিলে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বুধবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে তিনি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নকর্তাকে ড. ইউনূস পালটা প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে দেখে কি মনে হয়, আমি নির্বাচনে লড়ব?’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, করপোরেট সংস্থার প্রতিনিধি, অধিকারকর্মী ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিরা অংশ নেন। মানবাধিকার বিষয়ক অপর এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার দেশে মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়া বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। আজ নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমসের অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে, তার কোনো সময়সীমা আমার কাছে নেই। ইতোমধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা সামনের মাসগুলোতে সংস্কারের সুপারিশ দেবে বলে আশা করছি। ওই সুপারিশের পর নির্বাচনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ড. ইউনূসের কাছে প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে আছেন। তাকে ফেরানো হবে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, কেন হবে না? অপরাধ করে থাকলে তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্ব বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আটকে থাকবে, ততক্ষণ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি কার্যকর হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সীমিত করার লক্ষ্যে ‘প্যারিস চুক্তি’ করা হয়। বৈশ্বিক এই চুক্তি ২০১৬ সালে কার্যকর হয়। অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বলেন, এই ব্যবস্থা (অর্থনৈতিক ব্যবস্থা) সর্বাধিক মুনাফাকেন্দ্রিক। ব্যবস্থাটি একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য সম্পদ তৈরি করছে। এটি ব্যাপক বর্জ্য উৎপন্ন করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তা এই গ্রহ ধ্বংসের মূল। মানুষ একটি ‘আত্মবিনাশী সভ্যতা’ তৈরি করেছে। ড. ইউনূস আরও বলেন, প্যারিস চুক্তিতে যে পরিবর্তনই করা হোক না কেন, বিশ্বের মৌলিক ব্যবস্থাগুলোকে নতুন করে না সাজানো পর্যন্ত তা কোনো পার্থক্য বয়ে আনবে না। তার মতে, ধনী দেশগুলোর মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া জলবায়ুর ক্ষতির বোঝা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বহন করা উচিত নয়। এই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, আপনারা আমাদের ওপর যেসব ধ্বংসের ভার চাপিয়েছেন, তা কেন আমরা বহন করব? ক্ষতির কারণ আপনারা, আর ফলাফল ভোগ করছি আমরা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-প্রখ্যাত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মী জেন গুডাল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা আলী জাইদি, গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ তেল কোম্পানি অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের প্রধান নির্বাহী ভিকি হলুব, নর্থ ক্যারোলিনার গভর্নর রয় কুপার, যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভিয়ানের প্রধান নির্বাহী আর জে স্ক্যারিনজ, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক সংগঠন হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কেভিন ডি. রবার্টস প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ব্লিঙ্কেনের সাক্ষাৎ : প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তারা সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট, সন্ত্রাস দমন, শ্রমবিষয়ক সংকট ও পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এ সময় ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এ কথা জানানো হয়েছে। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স হ্যান্ডলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা আরও গভীরতর করার প্রসঙ্গটি আলোচনায় এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। জাতিসংঘে ভাষণ : আজ নিউইয়র্ক সময় সকাল ১০টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস। এই ভাষণে তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বীরত্ব গাথা বিজয়কে তুলে ধরবেন। এছাড়াও স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : নিউইর্য়কের একটি হোটেলে বুধবার শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময়ে তিনি বলেন, তার সরকার দেশে মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বৈঠকে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময় সংঘটিত নৃশংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার ও জবাবদিহিতা নিয়ে আলোচনা হয়। মানবাধিকার কর্মকর্তারা স্বৈরশাসকের সময় সম্পাদিত প্রায় ৩ হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ড. ইউনূস আরও বলেন, এই সরকার কোনো সমালোচনায় বিচলিত নয়। আসলে আমরা সমালোচনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সরকার দেশে কারও কণ্ঠরোধ করবে না। এ সময় রাষ্ট্র সংস্কারে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি। মানবাধিকারকর্মীরা নিরাপত্তা খাতের সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার ও নির্বিঘ্নে ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং শেখ হাসিনার স্বৈর শাসনামলে বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটক কেন্দ্রের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে রবার্ট এফ কেনেডি মানবাধিকারের সভাপতি কেরি কেনেডি নয়জন মানবাধিকার কর্মকর্তার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড।