বার্তা পরিষ্কার হবে উন্মোচিত হবে সম্ভাবনার দ্বার
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশন সোমবার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বের দেড় শতাধিক রাষ্ট্রপ্রধান যোগ দিচ্ছেন এবারের অধিবেশনে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস অধিবেশনে এলে তাকে স্বাগত জানান জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এটি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম বৈঠক। সাধারণ অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাষণ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী এমন এক চ্যাঞ্জেলের মুখে রয়েছি যা আগে কখনো দেখিনি। বৈশ্বিকভাবেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যুদ্ধ বেড়েই চলছে এবং তার শেষ হওয়ার কোনো উপায় দেখছি না। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান, ভাষণ প্রদান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার অনেক দ্বার খুলে দেবে। বাংলাদেশের অনেক বিপক্ষ শক্তি জানবে বাংলাদেশ একা নয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশকে যারা চাপে ফেলতে চায় তাদের কাছেও এই বার্তা যাবে যে, বাংলাদেশের পাশে বৃহৎ শক্তি এবং শান্তিকামীরা আছেন। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক সচলায়তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সফর। এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। ড. ইউনূসের সফরের বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। দেশের ইতিহাসে গত ৩০ বছরে এমনটি হয়নি। এর আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্র প্রধানের অধিবেশনের সাইডলাইনে কথা হয়নি। কিন্তু ড. ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। নোবেল বিজয়ী। ছাত্র-জনতা দেশের এই ক্রান্তিকালে তার হাতে যে গুরুদায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তার বিশ্ব স্বীকৃতি এটি। বার্তাটি এমন যে, তিনি এমন একটি সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, আলাপ করছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অনেকে না চিনলেও ড. ইউনূসকে অনেকে চেনেন। জাতিসংঘে তিনি ভাষণ দেবেন এটি বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন। ভাষণের বিষয়ে শুনেছি, যে গণবিপ্লব ঘটে গেল এবং স্বৈরতন্ত্র ব্যবস্থার পতন ঘটাল এর পটভূমি বিশ্বের অনেকে জানেন না। কারণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র এটি বিক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করেছে। সুতরাং তিনি পুরো পটভূমি বলবেন। বিশ্বনেতারা শুনবেন। এর বাইরে দেশের কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন সেটিও বলবেন এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাহায্য, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা চাইবেন। সারা বিশ্ব তার বক্তৃতা শুনবে। নোবেল লরিয়েট হিসাবে ড. ইউনূসের বক্তৃতা শোনার জন্য মানুষ টিকিট কাটেন। অনেক সময় সেই টিকিট পাওয়াও যায় না। আজকে তিনি যখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে বক্তৃতা দেবেন তখন এটি একটি যুগান্তকারী বিষয়। তার সফর বাংলাদেশের জন্য অনেক অর্থবহ উল্লেখ করে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শক্তিরা বুঝবে, বাংলাদেশ একা নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ শক্তি আছে। এবং বিভিন্ন পশ্চিমা শক্তি এবং শান্তিপ্রিয় সব দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে আছে। বিরাট একটি বার্তা যাবে বাংলাদেশের সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছেও। যারা বাংলাদেশকে নানামুখী চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে তারাও তাদের অবস্থান বুঝতে পারবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের কাছেও বার্তা যাবে যে, ড. ইউনূস দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন সে পর্যায়ে যেতে তাদের অনেক কজ করতে হবে। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতির অবস্থা উন্নতির দিকে যাবে। কারণ হাসিনা সরকার প্রচুর ঋণ করেছে। বিদেশে টাকা নিয়ে গেছে। অনেক রিপেমেন্ট আছে যেগুলো এখন সম্ভব নয়। ড. ইউনূস অনুরোধ করবেন তারা যেন এগুলো দেরি করে নেয়। বিভিন্ন সংস্থা যেন বাংলাদেশের জন্য ফান্ড নিয়ে এগিয়ে আসে। ড. ইউনূসের সফরের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূস একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি। সারা পৃথিবীতে তার সমর্থন ব্যাপক। তার প্রতি সব স্তরের মানুষের শ্রদ্ধাবোধ আছে। সেটি রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত। জাতিসংঘে তার উপস্থিতি এবং বাংলাদেশের পক্ষে তিনি যখন সারা বিশ্বের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন, অন্যদের সঙ্গে আলাপ করবেন এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে। সম্ভাবনার অনেক দ্বার উন্মোচিত হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ড. ইউনূসের প্রথম বিদেশ সফর। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।