এতিমের ‘উন্নতমানের’ খাবারে আ.লীগ নেতার ভাগ, ভিডিও ভাইরাল
পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ১৩ বছর বয়সি এক কিশোর বাইসাইকেলে চড়ে আসছিল। বিভিন্ন বয়সি কয়েকজন ব্যক্তি ওই কিশোরকে পথরোধ করে দাঁড় করালেন। কিশোরটির সাইকেলের ঝুলানো টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাবার দেখছেন তারা। এরপর ওই ব্যক্তিরা কিশোরটির কাছে এই খাবার কোথায় যাবে, কোথায় থেকে এলো জানতে চান, প্রতি উত্তরে কিশোর জবাব দেয় যশোর শহরের কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া এতিমখানার শিক্ষার্থী। এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে। ওই শিক্ষার্থী জানায়, এভাবেই প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা সভাপতির বাড়িতে যান খাবার নিয়ে। এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোমবার রাত থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের খাবার প্রতিদিন এভাবে সভাপতির বাড়িতে যাওয়ার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে; যা নিয়ে নানা পেশার মানুষ করছেন তীব্র সমালোচনাও। অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মাদ্রাসার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। আমারও মাদ্রাসা থেকে কিছু পাওয়ার হক রয়েছে। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস ও কিনডির রোগী তিনি। মাদ্রাসার খাবার খেলে আমি এতদিন বাঁচতাম না। ফলে আমি কখনো মাদ্রাসার খাবার খাইনি। জানা গেছে, যশোরের ঐতিহ্যবাহী এতিমখানা ও মাদ্রাসা হচ্ছে কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া। হাফিজিয়া ও এতিমখানা মিলে দুই শাখায় অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন এখানে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আংশিক অর্থায়নে ও জেলার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের টাকায় চলে এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একে এম খয়রাত হোসেন। মাদ্রাসাটিতে এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা জন্য তিনজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থীদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তিরা বিশেষ দিনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেন। সেই খাবারই খায় মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। মাদ্রাসা সূত্রে ও সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসাটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেনের তিনবেলা খাবারও এই মাদ্রাসা থেকে যায়। দুপুরে শিক্ষার্থীরা দিয়ে আসে। আর রাতে মাদ্রাসাটির শিক্ষকরা সভাপতির বাড়িতে দিয়ে আসেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে এতিমদের খাবারে ভাগ বসিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। সোমবার নাজমুল হোসেন মিলন নামে ফেসবুক আইডি থেকে সভাপতির বাড়িতে খাবার নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি মঙ্গলবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত ৮৫ হাজার মানুষ দেখেছেন। এছাড়া ডাউনলোড করে জেলার বিভিন্ন মানুষ ভিডিওটি পোস্ট করে সমালোচনাও করেছেন। ভিডিওটিতে ইউসুফ নামে একজন ব্যক্তি সমালোচনা করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত চাচা পাঁচ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে। এক বেলায় যদি তিনি ৬০ টাকার খাবার খান, তাহলে তিন বেলা খেয়েছেন ১৮০ টাকা। সেই হিসাবে পাঁচ বছরে তিনি ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার খাবার খেয়েছেন। এতিমদের খাবার খেয়ে তিনি তাদের হক মেরেছেন। এই টাকা এতিমদের দিতে হবে।’ মাদ্রাসাটির সাংগঠনিক কমিটির এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেন যশোরের বিশিষ্ট ও বিত্তশালী ব্যক্তি। তার স্ত্রী মারা গেছেন। তিন মেয়ে তারাও উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। খয়রাত হোসেনের শহরে মার্কেট ও বাসা রয়েছে। তারপরও তিনি এতিম শিশুদের খাবার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার এ ধরনের কার্যক্রম নিম্ন মানসিকতার। একইসঙ্গে অন্যায়ও বটে! তবে মাদ্রাসার সুপার হাফেজ মো. মহিব উল্লাহ দাবি করেছেন, সভাপতি সাহেব যশোরে সব সময় থাকেন না। তার স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়েরাও কাছে থাকেন না। যখনই তিনি যশোরে থাকেন, মাঝে মধ্যে মাদ্রাসা থেকে খাবার যায়। ভাইরাল হওয়া খাওয়ারটি এতিম শিশুদের জন্য পাঠিয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। ভালোমানের খাবার হওয়াতে টিফিন ক্যারিয়ারে সভাপতির জন্য পাঠানো হয়েছিল।