আন্দোলনে থাকা সব দলকে নিয়ে জনগণের সরকার গঠনের অঙ্গীকার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরেছেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। পতন হওয়ার পরেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশে রয়ে গেছে। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা তাদের ষড়যন্ত্রকে অব্যাহত রেখেছে। গণতন্ত্রের পক্ষে সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিটি মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। একইভাবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করব। দেশে সব বিপদ কেটে যায়নি, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অন্তর্বতীকার্লীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না। জনগণের প্রত্যাশা জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়া। বিগত ১৭ বছর সংগ্রাম করে সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে; কিন্তু এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে জনগণের কাজ যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। আবার কোনো স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ যাতে না পায়। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে তাদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামী সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে, তাদের পক্ষে কাজ করবে। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একটি সম্ভাবনাময় জাতি। জয় পেতে হলে আমাদের আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশ ও বিগত ছাত্রজনতার আন্দোলনে হতাহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর এবার নির্বিঘ্ন পরিবেশে কর্মসূচি করেছে জেলা বিএনপি। এতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। এর আগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম-খুন, হামলায় আহত ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন জনসভায়। বিকাল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগে থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদী, ভৈরব, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, তাড়াইল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী এলাকার নেতাকর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রতিকৃতি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। এ সময়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা পুরাতন স্টেডিয়াম। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জনসমুদ্রে রূপ নিয়ে এ জনসভাটি হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের ইতিহাসে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে ’ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদানের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের পক্ষে সব নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম-জেলা পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ চারজন এই বিবেচনায় এটা বিতরণ করা হবে। কোন প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এর প্রবর্তন হলেও পরবর্তীতে সবাই এর প্রাপক হবেন। তিনি বলেন, আজ যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে; কথা বলার এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সরকার প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছে- সেই বীর শহিদদের এ জাতি কোনদিন ভুলবে না। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও এখনও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সকল দলমতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩১ দফার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যে কর্মসূচিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব দলকে নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এ সরকার হবে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানের সরকার। রাজনৈতিক সরকারই দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ হাওড়াঞ্চল। সারা বাংলাদেশের বোরো মৌসুমে যে ধান হয় এর ১৬ শতাংশ শুধু কিশোরগঞ্জেই উৎপাদিত হয়। তার মানে দেখুন কত সম্ভাবনাময় একটি জেলা। সমগ্র দেশের ১৬ শতাংশ ধান যদি আপনারা উৎপাদিত করেন, যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে কৃষকরা যে এই ধান উৎপাদন করছে- যদি তাদের সহযোগিতা করা যায় তাহলে আমরা ২৫ শতাংশ পর্যন্তও করতে সক্ষম হব- কৃষকদের যদি সঠিকভাবে সহযোগিতা করতে পারি আমরা। তিনি বলেন, এ কাজগুলো কে করতে পারবে? তারাই করতে পারবে যারা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবে। এমন একটি সরকার করতে পারবে। কারণ সেই জনগণের সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকবে জনগণের কাছে, জবাবদিহিতা থাকবে জনগণের কাছে। বাংলাদেশের জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার দরকার, যারা জনগণের কাছে বাধ্য থাকবে। সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে ভোটের মাধ্যমে। বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রেজাউল করিম টিপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া প্রমুখ।