‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ’ নিয়ে যা বললেন ইমরান খান
দখলদার ও যুদ্ধবাজ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। বর্তমানে কারাবন্দি থাকা এ নেতা অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি একটি ইসরাইলি সংবাদপত্রের নিবন্ধের ওপর ভিত্তি করে প্রতিপক্ষরা তার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার চালাচ্ছে। সোমবার আদিয়ালা কারাগার থেকে গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন, ‘রোববার থেকে একটি অপপ্রচার শুরু হয়েছে, যেখানে একটি ইসরাইলি সংবাদপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে যে, আমি নাকি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে বড় সমর্থক। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই নিবন্ধে আমার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ঠিকই, তবে কিছু লোক হয়তো ইংরেজিটা ভালোভাবে বুঝতে পারে না’। সম্প্রতি দ্য জেরুজালেম পোস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে মুসলিম বিশ্ব এবং পশ্চিমা বিশ্বের ওপর পাকিস্তানি নেতা ইমরান খানের প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়। সেখানে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির ওপর ইমরান খান বা তার মতো নেতার সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। এ থেকেই মূলত ইমরান খানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে অভিযোগ তোলেন পাকিস্তানের কয়েকজন নেতা। তবে ইমরান খান দ্রুতই তার অবস্থান স্পষ্ট করেন যে, তিনি বরাবরই ফিলিস্তিনের সমর্থক। ইমরান খান বলেন, ‘আমার অবস্থান পরিবর্তন হয়নি। ফিলিস্তিনি জনগণ গণহত্যার শিকার হচ্ছে। ইসরাইলের সঙ্গে কোনো আলোচনা কেবল যুদ্ধবিরতি এবং প্রকৃত দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করেই হতে পারে’। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, যা তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা বৈ কিছু নয়। পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই ইমরান খান তার অবস্থান তুলে ধরলেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের ঐক্য ও সহযোগিতার আহ্বানের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘শাহবাজ শরীফ, ভালো করে শুনুন- শান্তি আসে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে। নির্বাচন খোলাখুলিভাবে প্রহসনে পরিণত হয়েছে, পিটিআই কর্মীদের ৯ মে’র ঘটনার পর জেলে নিক্ষেপ করা হয়েছে, অথচ কোনো সঠিক তদন্ত হয়নি। ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি আসবে না’। সংবিধানে প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিরুদ্ধেও সতর্কবার্তা দেন ইমরান খান এবং অভিযোগ করে বলেন, এতে দেশের স্থিতিশীলতা আরও বিঘ্নিত হবে। তিনি প্রধান বিচারপতি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, তারা ‘আম্পায়ার হয়ে এখন ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে’, যা নির্দেশ করে যে, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। আর তৃতীয় আম্পায়ার, যিনি মূলত তাদের দলের অধিনায়ক, পর্দার আড়াল থেকেই সব কিছু পরিচালনা করছেন। তিনি ৯ মে’র ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আটকে রাখার অভিযোগ তুলে বলেন, এটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার ষড়যন্ত্রের অংশ। পাকিস্তানের গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করে ইমরান খান বলেন, ‘এই দল দেশকে ইয়াহিয়া খানের শাসনামলের মতো সংকটের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়ছে, ঋণের বোঝা বাড়ছে, এবং বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছে না। মানুষ দলবদ্ধভাবে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে’। ইমরান খান এ সময় তার দলের সমর্থকদের আরও র্যালি ও কর্মসূচি আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তারা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করতে চায় এবং অঘোষিত সামরিক আইন চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আমরা পিছপা হবো না। যদি এ সংশোধনীগুলো চালু হয়, তাহলে আমরা রাজপথে আন্দোলন শুরু করবো’। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন