১১২ দিন পরে ক্লাসে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসজুড়ে প্রাণচাঞ্চল্য নব উৎসব
দীর্ঘ ১১২ দিন পরে ক্লাস রুমে ফিরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। লম্বা বিরতির পরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। ক্যাম্পাসজুড়ে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ছাত্রছাত্রীরা একটি শিক্ষার্থীবন্ধব বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি সৃষ্ট সেশনজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ২ জুন গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ঈদুল আজহার বন্ধ শেষে ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুললেও সরকার ঘোষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। ৫ জুলাই থেকে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। উভয় পক্ষই দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিভিন্ন ঘটনার পরিক্রমায় প্রায় সাড়ে তিন মাস পর রোববার ক্লাসে ফেরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। প্রথম বর্ষ ছাড়া অন্য বর্ষগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) শুরু হয় এদিন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। ক্লাস শুরুর আগে শনিবার ১০টি ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়। অন্যদিকে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং বিভিন্ন হল সংসদ নির্বাচনের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান। এদিন সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতো। দীর্ঘদিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের পর মেতে উঠেছেন আড্ডা আর গল্পে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা, মল চত্বর, টিএসসি এবং কার্জন এলাকায় তাদের পদচারণায় যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল সুলতানা রিমা বলেন, আজ দীর্ঘদিন পর টানা চারটা ক্লাস। এতদিনে আমি যে ছাত্রী সেটাই ভুলতে বসেছিলাম। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের সেশনজটসহ আরও নানা চিন্তার উদ্রেক হয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুতই সব স্বাভাবিক হবে। পাশাপাশি সেশনজট কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুলতানুল আরেফিন বলেন, প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাসের মতো আমার অনুভূতি হচ্ছে। কতদিন পর সবাই একসঙ্গে হয়েছি। সবার আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতার কথা শুনছি। বেশ ভালোই লাগছে। কতদিন পড়াশোনা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আবারও সেই ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপ ফিরে পেয়ে ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবসময় স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিবেশ বজায় থাকুক। এতটুকুই আমাদের চাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিন আলম বলেন, আমাদের অষ্টম সেমিস্টারের রুটিন দিয়েছিল, পরীক্ষাও হয়েছিল একটি কোর্সের। আজ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে আবার। আমাদের পরীক্ষা নিয়ে এখনও নতুন রুটিন দেওয়া হয়নি। ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, খুব শিগগিরই রুটিন প্রকাশ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এদিকে ক্লাস শুরুর প্রাক্কালে রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন চত্বরে ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা কর্মসূচি পালন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ এবং বিভিন্ন অনুষদের ডিন এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শান্তির প্রতীক হিসাবে পায়রা উড়ানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও কার্যকরভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এক ধরনের মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছে। এই ট্রমা নিরসন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বিভিন্ন অনুষদের ক্লাসরুম পরিদর্শন করেন এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। সৌহার্দ্যপূর্ণ, হৃদ্যতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।