ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা মামলায় ছয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া উইং থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের অতিথি কক্ষে চোর সন্দেহে অজ্ঞাতনামা কিছু লোক কর্তৃক এক ব্যক্তিকে চড়-থাপ্পড় ও মারধর করার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে হলের দক্ষিণ ভবনের অতিথি কক্ষে তাকে আবারও বেধড়ক মারপিট করা হয় মর্মে জানা যায়। এক পর্যায়ে তার অচেতন হয়ে পড়ার সংবাদ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ঘটনা শাহবাগ থানায় অবহিত করলে পুলিশ মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ঢামেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে নিহতের মরদেহ তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর তদন্ত কর্মকর্তা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন। ছাত্রলীগের ফজলুল হক মুসলিম হল শাখার উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক থেকে পদত্যাগকৃত শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ (লালবৃত্ত চিহ্নিত) গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা হলেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া; পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মোত্তাকিন সাকিন এবং আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম নামের তিন শিক্ষার্থী। তারা সবাই এফএইচ হলের আবাসিক ছাত্র। তাদের মধ্যে জালাল মিয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক। অপর পাঁচজনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান, জড়িতদের চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য পুলিশের পাশাপাশি ডিবির একাধিক টিম কাজ করছে বলেও জানিয়েছে ডিএমপি। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জালাল আহমেদ। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন। একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, জালাল আহমেদসহ হলের ৮-১০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে বেধড়ক মারধর করছেন। বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ওই হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করেন শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, তোফাজ্জলকে আটকের পর গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় মারধর করেন। একপর্যায়ে তাকে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর পুনরায় মারধর করা হয়। রাত ১০টার দিকে হলের হাউস টিউটররা ঘটনাস্থলে গেলে রাত ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা সেখানে রেখেই চলে আসেন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।