দিনে ঢিলেঢালা নিয়ন্ত্রণ, রাতে সড়কে থাকে না ট্রাফিক পুলিশ

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:২২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ঢাকা মহানগরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে গত ২৫ জুলাই। এর পর ৫ আগস্ট সরকার পতন হওয়ায় আত্মগোপনে চলে যায় সব ইউনিটের পুলিশ। এক সপ্তাহ পর গত ১২ আগস্ট রাস্তায় ফেরেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। সেদিন বিভিন্ন সড়কে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ছাত্র-জনতা। সড়কে ফেরার ১ মাস পূর্ণ হলেও রাতে ট্রাফিক পুলিশ থাকছে না রাজধানীর অনেক মোড়ে। দিনেও তাদের তৎপরতা আগের মতো নেই। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাতে সড়কে দায়িত্ব পালন করায় বড় বাধা ট্রাফিক বক্স না থাকা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না হওয়া। ঢাকা শহরে যানজট নিরসনে ৩৫০ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ স্থান বিবেচনায় ট্রাফিক সদস্য মোতায়েন করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে একজন অতিরিক্ত কমিশনার, দু’জন যুগ্ম কমিশনার ও আটটি ট্রাফিক বিভাগে আটজন উপকমিশনারসহ ৩ হাজার ৯৮২ জন সদস্য রয়েছেন। তিন পালায় প্রতিদিন ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে কাজ করেন সাড়ে ৩ হাজার সদস্য। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ থাকেন অফিসের কাজে। যারা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেন, তাদের ভয় এখনও কাটেনি। আগের মতো দৃঢ়ভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তারা। এর জন্য তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, সড়কে ফেরার দিন শুধু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষের মধ্যে পুলিশবিরোধী মনোভাব আছে। কেউ অন্যায় করলেও কিছু বলা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাস্তার মোড় থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছে ট্রাফিক পুলিশ। বিভিন্ন দিক থেকে গাড়ি এসে জট লেগে যাচ্ছে। কিছু সময় পর এসে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য ভোগান্তিতে পড়ছেন লোকজন। গত এক সপ্তাহ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই থেকে আইন ভঙ্গকারী গাড়িচালকের বিরুদ্ধে মামলা করা বন্ধ ছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর সড়ক আইনে মামলা করা শুরু করেছে ট্রাফিক পুলিশ। যেসব গাড়ির কাগজ নবায়ন করা হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের অনিয়মের জন্য মামলা দেওয়া হচ্ছে না। শুধু আইন ভঙ্গকারী বাস ও ট্রাকের ক্ষেত্রে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এখনও সড়কে চালু হয়নি ভিডিও মামলা। এদিকে রাতে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সদস্যদের চাপও দেওয়া হচ্ছে না। ১১ সেপ্টেম্বর প্রেস ক্লাব ও মৎস্য ভবন মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা হয় তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শহরের অধিকাংশ স্থানে রাতে ট্রাফিক পুলিশ থাকছে না। রমনা ও মতিঝিল বিভাগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাতে চালু হয়নি। সাধারণত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সকাল ৭টায় ডিউটি পোস্টে হাজির হন। এর পর পরিস্থিতি দেখে উপকমিশনার অফিসে রিপোর্ট করতে হয়। তবে এখন আর কোনো সদস্য ডিউটি পোস্টে এসে রিপোর্ট করছেন না বলে জানা গেছে। ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ৬ মিনিটে দেখা যায়, শান্তিনগরে বেইলি রোডের মুখে সিগন্যালে গাড়ির জটলা লেগে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা এখনও ডিউটিতে আসেননি। যান চালকরা যে যার মতো করে চলাচলের চেষ্টা করছেন। এর ৫ মিনিট পর যানজট দেখা যায় সামনে। সেখানে একজন পুলিশ সদস্য গাড়ি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন। এদিন বেলা ১টা ৪৫ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত কাকরাইল, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক ও পল্টন মোড়ে যানজট ছিল। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রেস ক্লাব কদম ফোয়ারার মোড়ে তীব্র যানজট লেগে যায়। সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকলেও চারদিক থেকে গাড়ি এসে জটলা সৃষ্টি করে। ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা ১৫ মিনিটে দেখা যায়, তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় ছেড়ে ৬-৭ জন পুলিশ সদস্য ট্রাফিক বক্সের সামনে জড়ো হয়ে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ৯টা ৩৭ মিনিট থেকে ১০ টা ৭ মিনিট পর্যন্ত নাবিস্কো মোড়, মহাখালী রেলগেট, বিজয় সরণি ও কারওয়ান বাজার মোড়ে সক্রিয় দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে। কিন্তু নিয়ম না মেনেই অনেক গাড়ি চলছিল। রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলামটর, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, কাকরাইল ও শান্তিনগর মোড় ঘুরে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ নেই সড়কে। ২৫ জুলাইয়ের আগে এসব মোড়ে রাত ৩টা পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার মোড়ে এক সহকারী সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাত সাড়ে ১০টার পর রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে থাকছেন না। আগে রাত ২টা পর্যন্ত সড়কে থাকতেন তারা। এই মোড়ে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় এখন রাত ১২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ১২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় ফকিরাপুল মোড়ে চতুর্দিক থেকে আসা গাড়ির চাপে তীব্র যানজট দেখা যায়। এ সময় তিন ট্রাফিক সদস্যকে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ক্ষুব্ধ হন পথচারীরা। এ সময় এক পথচারীকে বলতে শোনা যায়, ‘দায়িত্ব পালন না করলে বাসায় চলে গেলেই হয়।’ এদিন বেলা ২টা ৩৫ থেকে ৩টা ৩ মিনিট পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, ধোলাইপাড় ও সায়েদাবাদ মোড়ে দেখা যায় গাড়ি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের খুব একটা তৎপরতা নেই। বিভিন্ন দিক থেকে গাড়ি এসে জটলা সৃষ্টি করছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সড়কে দায়িত্ব পালনে মনোবল বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনকারীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তবে স্থানীয়রা তাদের পাশে এসে দাঁড়ালে কাজে আরও গতি আসবে। এ ছাড়া মহানগরবাসীকে অনুরোধ করব, নিজ থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য।’