রাশিয়ায় দূরপাল্লার হামলায় পশ্চিমাদের ‘না’

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ওয়াশিংটনে জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন আভাসই পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। কিয়ারকে সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন-ইউক্রেনকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে বাইডেনকে রাজি করেছেন কি না, তখন কিয়ার এর সরাসরি কোনো জবাব দেননি তিনি। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান, বৈঠকে ইউক্রেনসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দীর্ঘ এবং ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুও ছিল। তবে হোয়াইট হাউজ বলেছে, তারা ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করেছিলেন ইউক্রেনকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অনুমতি না দিতে। পুতিন বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সরাসরি অংশগ্রহণ করছে- এমনটা বোঝাবে।’ সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব স্যার বেন ওয়ালেস বিবিসি রেডিও-৪-এর টুডে প্রোগ্রামকে জানান, পুতিনের হুমকি সত্ত্বেও ন্যাটোর উচিত হবে ইউক্রেনকে রাশিয়ায় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে দেওয়া। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এই বিবাদে শুধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনই লাভবান হচ্ছেন। এদিকে হোয়াইট হাউজে কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে দেখা করার আগে সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘আমি পুতিনকে নিয়ে বেশি ভাবি না।’ রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে অনুমতি দেয়নি। এতে সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে তাদের ধারণা। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার পশ্চিমা মিত্রদের এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, এটি যুদ্ধের অবসান ঘটানোর একমাত্র উপায়। এর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে এখনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। শুক্রবার তিনি কিয়েভে ভিক্টর পিনচুক ফাউন্ডেশনের এক সম্মেলনে এ কথা বলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এ খবর জানিয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, যদি মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে একসঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে পারে, তাহলে ইউক্রেনের আকাশে কেন তা করা হচ্ছে না? এমনকি যখন সেই ড্রোনগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে উড়ে আসে, তখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, আমাদের মিত্ররা অন্য সব বিষয়ে কাজ করার কথা বললেও আলোচনার সময় এই ইস্যু উত্থাপন করলে এ বিষয়ে তারা কিছু বলে না। তারা প্রসঙ্গ বদলে ফেলে। এতটাই ভীত যে, তারা বলতেও সাহস করে না যে, তারা এ নিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত শুধু বেলারুশকেই রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করতে দেখা গেছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরাইলকে সহায়তা করা হলেও ইউক্রেনকে একই ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। ইউক্রেন প্রতিদিনই রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তেরর নিকটবর্তী গ্যাস সংরক্ষণ স্থাপনা লক্ষ্য করেও কিছু রুশ হামলা হচ্ছে। এমনকি কিছু ড্রোন রোমানিয়া, পোল্যান্ড ও সম্প্রতি লাটভিয়ার আকাশসীমায়ও প্রবেশ করেছে। তবে ইউক্রেনের মিত্ররা মনে করে, ইউক্রেনের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার পদক্ষেপ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে। এতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টার অভিযোগে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আরটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ ঘোষণা দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই সংবাদমাধ্যমটি রাশিয়া সমর্থিত মিডিয়া আউটলেটের একটি নেটওয়ার্কের অংশ, যা গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। একই সঙ্গে আরটিকে ‘রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রকৃত হাত’ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, রাশিয়ান সরকার আরটির মধ্যে ঢুকে পড়েছে। সাইবার অপারেশনাল ক্ষমতা এবং রাশিয়ান গোয়েন্দাদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি ইউনিট হয়ে পড়েছে এটি। এর আগে গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে বেশ কয়েকজন রুশ শীর্ষ সাংবাদিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন আরটির এডিটর ইন চিফ মার্গারিতা সিমানিয়া। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আরটি। সংবাদমাধ্যটি ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একটি ‘নতুন পেশা’ থাকা উচিত।