আর বিতর্কে আগ্রহ নেই ট্রাম্পের, রিপাবলিকান শিবিরে হতাশা
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুদলের প্রার্থীদের নির্বাচনি বিতর্ক অনুষ্ঠান। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপক্ষে প্রথম মুখোমুখি নির্বাচনি বিতর্কে জয় লাভ করেছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। কমলার নৈপুণ্যে স্পষ্টতই সন্তুষ্ট তার নির্বাচনি প্রচারশিবির। এখন তারা ট্রাম্পের সঙ্গে কমলার দ্বিতীয় বিতর্ক আয়োজনের আহ্বানও জানিয়েছেন। তবে এ আহ্বানে সাড়া দিতে আগ্রহী নন ট্রাম্প। এমনটাই বলছে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের আয়োজক এবিসি নিউজ। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘তিনি বিতর্কে জিতেছেন বলে তার আর বিতর্ক করার দরকার নেই। কমলা হেরেছেন তাই আবারও বিতর্ক চাচ্ছে তার (কমলার) দল।’ এক কথায় দ্বিতীয় বিতর্ক এড়াতে কমলার বিজয়কেও মানতে নারাজ ট্রাম্প। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আগামী মাসে পরবর্তী বিতর্ক আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন কমলার প্রচারশিবিরের মুখপাত্র জেন ও’ম্যালি ডিলন। তিনি বলেছেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দ্বিতীয় বিতর্কের জন্য প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি রাজি? এ প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর না দিলেও আর কোনো বিতর্কের প্রয়োজন নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এটা আমার সেরা বিতর্কগুলোর একটি ছিল বলেই আমি মনে করছি। বোধহয় এখন পর্যন্ত এটাই শ্রেষ্ঠ। আমার দিক থেকে আর আগ্রহের দরকার নেই। কারণ আমার সন্ধ্যাটা তো অসাধারণ গেছে।’ এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে বলা হয় ট্রাম্প সমর্থক। সেই ফক্স নিউজই কামালাকে জয়ী বলেছে। ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতেও কমলাই জয়ী বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিএনএনও। তবে প্রথম বিতর্কে জো বাইডেনকে ঘায়েল করলেও এবার কমলাকে মোকাবিলায় অনেকটা ব্যর্থ ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হলে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাবেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়ার কথা জানান ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। হতে চান সব জনগণের প্রেসিডেন্ট। এদিকে ট্রাম্পের পারফরম্যান্সে রিপাবলিকান পার্টি সদস্য, দাতা ও উপদেষ্টাদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, কমলার সঙ্গে বিতর্কে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন ট্রাম্প। বিতর্কে ট্রাম্পের পারফরম্যান্সকে ‘দুর্বল’ অভিহিত করে রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, ‘বিতর্কে একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। তিনি লক্ষ্যে স্থির থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে মঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ হারিয়েছেন।’ ৫৯ বছর বয়সি কমলা তার সুচিন্তিত বক্তব্যে প্রায় পুরোটা সময় ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্পকে কোণঠাসা করে রেখেছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্টের আইন লঙ্ঘনমূলক বিভিন্ন কাজ ও ওভাল অফিসে বসার যোগ্যতা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন করে ট্রাম্পকে রক্ষণাত্মক অবস্থানে নিয়ে যান কমলা। ট্রাম্পের সাবেক মিত্র ও বর্তমান সমালোচক ক্রিস ক্রিস্টি বলেছেন, ‘হ্যারিসের প্রস্তুতি ছিল চমৎকার। কিন্তু ট্রাম্পের এখানে ঘাটতি দেখা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিপাবলিকান পার্টির ৬ জন ডোনেটর ও ট্রাম্পের ৩ উপদেষ্টা বলেছেন, বিতর্কে কমলা হ্যারিস জিতেছেন। আর ট্রাম্প তার বক্তব্যে স্থির থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। দ্বিতীয় দফা বিতর্কে ট্রাম্পের অংশ নেওয়া উচিত হবে কিনা সে ব্যাপারে ২ জন দাতা অনিশ্চয়তায় আছেন। একজন বলেছেন, এটি আসলে নির্ভর করবে ট্রাম্পের প্রস্তুতিতে সহায়তাকারীদের আত্মবিশ্বাসের ওপর। অন্য দুই দাতা আবার মনে করছেন, রিপাবলিকান শিবিরে উদ্যম ফিরে পেতে আরেক দফা বিতর্ক প্রয়োজন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টা) প্রথম নির্বাচনি বিতর্কে মুখোমুখি হন কমলা ও ট্রাম্প। ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে ৯০ মিনিটের এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। বিতর্কের সঞ্চালনা করেছেন ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস। এবিসি নিউজ আয়োজিত এই বিতর্কের টেলিভিশন দর্শক ছিল প্রায় ৬ কোটি ৭১ লাখ। অবশ্য অনলাইন দর্শকের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে আর কোনো বিতর্কের ঘোষণা এখন পর্যন্ত নেই। তবে আগামী ১ অক্টোবর কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালেজ এবং ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্সের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিবিএস নিউজ ওই বিতর্ক আয়োজন করছে।