ঘুস বন্ধ হওয়ায় অনেকের কাজের গতি কমে গেছে
ঘুস বন্ধ হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারী কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ভূমি অফিস, পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য ও বিআরটিএসহ বিভিন্ন সেবামূলক দপ্তরে ঘুস বন্ধ হওয়ায় অনেকে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। আমি তাদেরকে জনবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা জনগণকে সেবা দিতে না পারলে চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজ করুক। জনগণের প্রত্যাশিত সেবা দিতে না পারলে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের আমরা প্রত্যাহার করে নেব। খুনি হাসিনাকে যেভাবে জনতা রিপ্লেসমেন্ট করেছে আপনাদেরও সেভাবে রিপ্লেসমেন্ট করা হবে। সোমবার বিকালে খাগড়াছড়ি টাউন হলে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন সিরাজগঞ্জ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও (ববি) মতবিনিময় সভা হয়েছে। সেখানে সমন্বয়করা বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য বিচ্যুত হতে দেবে না ছাত্র-জনতা। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে তিন শহিদের বাড়িতে যান সমন্বয়করা। তারা শহিদদের কবর জিয়ারত করেন এবং তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। এদিকে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের সফর কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের অপরারেশন্স শাখা থেকে এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ওভারসিস অ্যান্ড ইউএন অপারেশন্স) নাসিয়ান বায়ীজেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে র্যাব মহাপরিচালক; অতিরিক্ত আইজি হাইওয়ে, ট্যুরিস্ট পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ ও বিশেষ শাখা (এসবি); সবগুলো মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার; বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি; সব জেলার পুলিশ সুপার এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপারেশন্স কন্ট্রোল রুম পুলিশ সদর দপ্তরকে এ নির্দেশ পালনের কথা বলা হয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- খাগড়াছড়ি : মতবিনিময় সভায় হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় দিতে হবে। এ সরকারের বয়স মাত্র এক মাস। আপনারা সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিন। সরকার মানুষের মাঝে আস্থা ফেরাবে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটা স্বাস্থ্য কাঠামো দাঁড় করাব যেখানে রাষ্ট্রপতি ও সাধারণ মানুষ এক জায়গা থেকে চিকিৎসা নেবে। এই কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বলেন, আপনারা দেখেছেন সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বন্যার সময় আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংকট মোকাবিলা করেছি। আমরা রাস্তায় নেমে এসেছি। ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো প্রশাসনের কাঠামোতে রয়ে গেছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করব আপনারা ক্ষমতামুখী না হয়ে জনতামুখী হবেন। আপনারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ৫ আগস্ট জনগণের পাশে ছিল, মানুষ তা আজীবন মনে রাখবে। হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আন্দোলন পরবর্তী সময়েও কেউ আমাদেরকে বিভাজন করতে পারবে না। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদ নতুনরূপে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। আমরা ছাত্র-জনতা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি সহ্য করব না। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি, খাগড়াছড়ির বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রফিকুল ইসলামসহ জেলার সমন্বয়ক এবং সাধারণ নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল : দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে ছাত্র-নাগরিকের মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ (ঢাবি), সানজানা আফিফা অদিতি (ঢাবি), এমএ সাঈদ (ঢাবি), রাইয়ান ফেরদৌস (ঢাবি), সিনথিয়া জাহিন আয়েশা (বদরুন্নেসা কলেজ), হাসিবুল হোসেন শান্ত (এনএসইউ), মোবাশ্বেরা করিম মিমি (এআইইউবি), শহিদুল ইসলাম শাহেদ (ববি), তৌহিদ আহমেদ আশিক (শেকৃবি) ও জিহাদ হোসাইন (ঢাকা কলেজ)। এ সময় বক্তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে দেশের ছাত্র-জনতা। এই অভ্যুত্থানের লক্ষ্য অতীতের গণঅভ্যুত্থানের মতো বেহাত হতে দেব না। তাই দেশ সংস্কারে ছাত্রজনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মতবিনিময় শেষে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কুমিল্লা ও দাউদকান্দি : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন দাউদকান্দি উপজেলার ঢাকারগাওয়ের জাহিদ হাসান মাহিম, বারপাড়া ইউনিয়নের সুকিপুরের মো. রিফাত ও পৌরসভার বিশ্বরোড এলাকার মো. বাবু। সোমবার দুপুরে ওই তিন পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাজমুল আলম ও রূপ মিয়া হোসেনসহ অন্যরা। এ সময় তারা শহিদদের কবর জিয়ারত করেন এবং তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক হোসেন রাজ, মেহেদি হাসান সানী, দাউদকান্দির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম শান্ত, মো. মিনহাজ, সাব্বির খান, শাকিল আহম্মেদ রিদওয়ান, মাহবুব তালুকদার প্রমুখ। এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন, যারা রাষ্ট্রের জন্য, দেশের জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা যেন তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পায় আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেসব পরিবার তাদের সন্তান হারিয়েছে তারা কখনো একা নয়। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব। রাবি : চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, জুলাই বিপ্লবের সুফলকে টেকসই ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা সুসংহত করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংস্কার করা বেশি জরুরি বলে মনে করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সোমবার বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রণয়নে সরাসরি ও অনলাইনে মতামত নেওয়ার ঘোষণা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তারা। বার্তাটি পাঠিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী। সিরাজগঞ্জ : সোমবার বিকালে সিরাজগঞ্জ সরকারি ইসলামিয়া কলেজ মাঠে মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন সমন্বয়ক মো. মাহিন সরকার। তিনি বলেন, সারা দেশে এখনো চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি, সিন্ডিকেট ভাঙেনি। কোনো পক্ষ, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, মামলা ব্যবসা এ ধরনের কাজ করবেন না। তিনি বলেন, আমরা কোনো পক্ষের দালালি করতে আসি নাই। আমাদের বন্দুকের ভয় অনেক আগেই দেখাইছে, আমরা সেই ভয় পাই না। সিরাজগঞ্জের ছাত্র প্রতিনিধি ফয়সালের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন কুবরাতুল আইন কানিজ, সাইফুল ইসলাম, মো. ইফতেখার আলিম আসাদ, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (মেহেদী), ফায়সাল আহমেদ, আল রাকিব, ফাতিন মাহদি, সাদিকুল ইসলাম স্বাধীন, ঐশিক মন্ডল জয়, ইমাম হোসাইন ইমন। এর আগে বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জ পৌর ভাসানী মিলনায়তনে আন্দোলনে শহিদদের পরিবার, আহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।