সরকার ৫ বিলিয়ন ডলার খুঁজছে

৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও রিজার্ভ বাড়াতে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে অতিরিক্ত ৫ বিলিয়ন ডলার (৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ঋণ চেয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে আইএমএফের কাছে। আর বিশ্বব্যাংক এবং জাইকার কাছে এক বিলিয়ন করে ২ বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়। এছাড়া দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় মাসখানেকের মাথায় দাতা সংস্থাগুলোর কাছে ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়ে অনুরোধ করেছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ ঋণ মিললে বাজেট সহায়তা আর্থিক খাত সংস্কারসহ যে কোনো খাতে ব্যয় করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ঘাড়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ রেখে যায়। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮৮ বিলিয়ন ডলার ও বাকি ৬৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ। এর বাইরে এখন ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ খুঁজছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আলাপকালে সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাড়তি ৩০০ কোটি বা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারবাজেট সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অনুমোদনের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে আইএমএফ। এ সহায়তা পেতে যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তার বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার সময় এই ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক হতে পারে। সেখানে অর্থ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অংশ নিতে পারেন। এর আগে আইএমএফের স্টাফ মিশন ঢাকায় সফর করবে। সেখানেও এ বর্ধিত ঋণ প্রসঙ্গে আলোচনা হবে। আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমানে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর মধ্যে তিন কিস্তিতে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই ঋণের আকার আরও ৩০০ কোটি ডলার বাড়িয়ে মোট ঋণ ৭৭০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে চায়। সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা হিসাবে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান নীতিভিত্তিক ঋণ, আঞ্চলিক তহবিল বা ধীরগতির প্রকল্প এই তিন ব্যবস্থার আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যেতে পারে। এর আগে জুনে বাজেট সহায়তা হিসাবে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বাজার দরে (১১৭ টাকা প্রতি ডলার হিসাবে) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৫ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আরও ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাংক ঋণ ইস্যু করে ১০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এদিকে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছে এক বিলিয়ন ডলার চাওয়া হয়েছে। বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে অফিশিয়ালি প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে জাইকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় চীন, জাপান, রাশিয়া, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। উন্নয়ন সহযোগী এসব প্রতিষ্ঠান সরকারকে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ আছে। এটি বাড়াতে জোর দেওয়া হচ্ছে বৈদেশিক ঋণের ওপর। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২১ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী ৪ জুলাই রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৭৮ কোটি ডলার। আকুতে আমদানি দায় শোধের পর তা কমে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরও ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার কম।