আ.লীগ সরকারের পতনের ১ মাস সারা দেশে আজ শহিদি মার্চ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১ মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিলে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তবে এ আন্দোলন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার সংঘর্ষ ও নির্বিচার গুলিতে আটশর বেশি মানুষকে বিসর্জন দিতে হয়েছে প্রাণ। এর মধ্যে রয়েছে শিশুরাও। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ, যাদের হাজারেরও বেশি এখনো হাসপাতালের শয্যায় কাতরাছেন। এদের অনেকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে, কেউ কেউ হারিয়েছেন চোখ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১ মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে আজ সারা দেশে ‘শহিদি মার্চ’ করবে সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কেন্দ্রীয়ভাবে মার্চটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে বেলা ৩টায় শুরু হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ হবে। বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি শহিদদের স্মরণ করে ছবি, উক্তিসহ বিভিন্ন স্মারক নিয়ে ছাত্র-জনতাকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও যথেচ্ছাচারে গত ১৫ বছরে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যে সঙ্গিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে মুক্তির আশায় রয়েছেন দেশবাসী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিটি কাঠামোতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে দেশ হয়ে ওঠে সত্যিকারের কল্যাণমুখী। এরইমধ্যে এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদে এসেছে পরিবর্তন। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এরপর দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করলে আওয়ামী সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনকে আরও বেগবান করার জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে, যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ-সমন্বয়ক ছিলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে কোটা সংস্কার থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এটি। সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নিজ নিজ জায়গা থেকে শহিদি মার্চে অংশ নেবেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শহিদি মার্চ পালিত হবে। সারজিস আলম বলেন, আন্দোলনের শহিদদের ছবি থাকতে পারে। যে কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন, সেসব কথা প্ল্যাকার্ডে থাকতে পারে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কী চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে কী চাই, এসবও থাকতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী পুনর্গঠিত হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হবে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি প্রতিরোধ। জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও কাজ করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে আইন নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র আন্দোলনে যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের চিহ্নিত করতে আমরা একটি টিম গঠন করছি। কাল থেকে সমন্বয়করা সারা দেশে বিভাগীয় ও জেলাভিত্তিক সফর শুরু করবেন উলেখ করে আবু বাকের মজুমদার আরও বলেন, ‘জন-ঐক্য তৈরি করার লক্ষ্যে এই সফর। জনগণ যেভাবে চায়, সেভাবে গঠন হবে আগামীর বাংলাদেশ।’ তিনি বলেন, ‘সমন্বয়ক পরিচয়ে যেসব অন্যায় করা হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা করেছেন তারা আমাদের লোক না।’ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, লুৎফর রহমান, তরিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ।