‘ডামি ভোটের’ তকমা নিয়ে বিদায় নিচ্ছে আউয়াল কমিশন
‘একদলীয় ডামি ভোটের’ তকমা নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। আজ কমিশন সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন। এর আগে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শেষ বারের মতো বৈঠক করবেন তারা। পদত্যাগের ওই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই বছরের মাথায় এই কমিশনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি পদত্যাগ করা বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশনের পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনকে মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই বিদায় নিতে হচ্ছে। কমিশনের পদত্যাগ করার বিষয়টি নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন ইসি সচিব শফিউল আজিম। পদত্যাগের পর নির্বাচন কমিশনাররা যাতে নির্বিঘেœ বাসায় ফিরতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইসি সচিব। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার জন্য বলেছেন। বুধবার বিকালে নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে শফিউল আজিম এসব নির্দেশনা দেন। এদিনই নির্বাচন ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আজ পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নির্বাচন ভবনে ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে সবকিছু জানানো হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। গত এক মাস নির্বাচন কমিশন অনেকটা চুপ ছিল। ওই সময়কালে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা অনিয়মিত অফিস করেন। তিনটি দলকে নিবন্ধনও দিয়েছে এ সময়ে। জানা গেছে, এ সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কোনো পক্ষের সাড়া না পেয়ে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ‘বিপ্লব ও ফরমান : সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে কলাম লেখেন। ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছেন। তার ওই কলাম ঘিরে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। একইসঙ্গে বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি আয়োজন করেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা দলগুলো অংশ নেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনতে কমিশনকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি সরকারের ওপর কোনো চাপও প্রয়োগ করেনি। এসব কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’ আখ্যা দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। দায়িত্ব নেওয়ার আড়াই বছরের মাথায় ডামি নির্বাচন আয়োজনের তকমা নিয়ে বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের। নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী রকিবউদ্দীন কমিশনের বিচারের দাবিতে ইসি সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে ‘নাগরিক সমাজ’। বুধবার বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে ‘১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত নাগরিক সমাজের’ ব্যানারে একদল লোক। তবে মূল গেট বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ইসির ভেতরে ঢুকতে পারেনি তারা।