পরিবারের বয়স্কদের যত্ন নেবেন যেভাবে
জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবীণ। এই বিশাল সংখ্যক প্রবীণ সদস্যরাই আমাদের দেশ ও পরিবারের বটবৃক্ষ। তবে এই বটবৃক্ষের ছায়াতলে দীর্ঘসময় থাকতে হলে দরকার পর্যাপ্ত সেবা, যত্ন ও মনোযোগ। তারা একটি পরিবারের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়ে পরিবার ও সমাজের অনেক কিছুতেই অবদান রাখতে পারেন। তাই প্রবীণ সদস্যকে বোঝা না ভেবে তার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। যাতে তারা সুস্থ, সুখী এবং নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারেন। চলুন আজকে জেনে নেই কীভাবে পরিবারের বয়স্কদের যত্ন নিতে হয়। শারীরিক যত্ন ১) নিয়মিত চিকিৎসা ও পরীক্ষা পরিবারের বয়স্ক সদস্যের নিয়মিতভাবে শারীরিক পরীক্ষা করানো উচিত, প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হতে পারে। রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ, ট্রাইগ্লিসারাইড প্রভৃতি যেন সঠিক মাত্রায় থাকে, সেদিকে নজর দিন। ২) স্বাস্থ্যকর খাদ্য বয়স্ক মানুষদের স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য পরিবেশন করতে হবে। প্রচুর ফল, শাকসবজি, বাদাম, দুধ এসব খাওয়া প্রয়োজন। বেশি তেল মশলা নিয়মিত এড়িয়ে চলা অবশ্য প্রয়োজন। ৩) নিয়মিত ব্যায়াম নিয়মিত ব্যায়াম বয়স্ক মানুষদের শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল থাকতে সাহায্য করে। কার জন্য কোন ব্যায়াম উপযুক্ত জেনে নিন। ৪) ওষুধ বয়স্কদের যদি একাধিক ওষুধ খেতে হয়, তবে তাদের ওষুধ সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সেগুলো সঠিকভাবে খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক যত্ন ১) সামাজিক সংযোগ বয়স্কদের সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে একাকিত্ব বোধ হবে। তাদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে যাতে, তারা মানসিকভাবে একাকী না বোধ করেন। ২) মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন বয়স্ক ব্যক্তির যদি বিষন্নতা বা উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা থাকে, তবে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। প্রয়োজনে, বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ৩) পছন্দের কাজে নিযুক্ত থাকা বয়স্ক মানুষদের তাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার জন্য কোনোও প্রিয়, ভালো লাগার কাজে জড়িয়ে থাকা উচিত। যেমন বই পড়া, ধাঁধা সমাধান করা, বা নতুন কিছু শেখা। ৪) মানসিক চাপ কমানো বয়স্কদের মানসিক চাপ মোকাবিলা করার জন্য স্বাস্থ্যকর উপায় খুঁজে বের করা উচিত। যেমন- যোগব্যায়াম বা ধ্যান। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ১) আর্থিক নিরাপত্তা বয়স্কদের অবসরের জন্য পরিকল্পনা করা এবং তাদের আর্থিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ২) আইনি বিষয় বয়স্কদের আইনি বিষয়গুলো, যেমন- তাদের উইল এবং স্বাস্থ্য বিমা ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ৩) সহায়ক ব্যবস্থা বয়স্কদের জন্য অনেকগুলো সহায়ক ব্যবস্থার আজকাল চলন রয়েছে। যেমন-হোম হেলথ কেয়ার এবং অ্যাডাল্ট ডে কেয়ার। দরকারে এগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। ৪) সহায়ক প্রযুক্তি বয়স্কদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়ক প্রযুক্তি রয়েছে। যেমন- হুইলচেয়ার, ওয়াকার। এগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। ৫) ঘরের পরিবর্তন অসাবধানে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে তাদের বাড়িতে কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে। যেমন- মেঝেতে নন-স্লিপ ম্যাট রাখা বা সিঁড়িতে হাত রেল লাগানো। এসব বিষয়ে একটু নজর রাখাও প্রয়োজন।