হাসি ফোটাতে পেরে খুশি শান্ত
যে কোনো দলের বিপক্ষে জয় পেলেই ড্রেসিংরুমে গাওয়া হয় ‘আমরা করবো জয়’। পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতেও গতকাল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোরাস গাইলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। আবেগ মিশিয়ে গলা ছেড়ে গাওয়া ‘টিম সং’-এর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। হাজার-লক্ষবার ‘প্লে’ হয়েছে বিসিবির পেজ থেকে। মুশফিক, লিটন, মিরাজ, মাহমুদের সঙ্গে কাল হয়তো সমর্থকরাও কণ্ঠ মিলিয়েছেন। তাই তো যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ভিডিও বার্তায় দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে পারলেন, দেশের কান্তিকালে পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ সবাইকে একটু হলেও স্বস্তি দেবে। পাকিস্তানের মাটি ক্রিকেটারদের সাফল্য ছুঁয়ে গেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও। ঢাকা থেকে ফোনে তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন ক্রিকেটারদের। দেশকে অশান্ত দেখে পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিলেন শান্তরা। সিরিজের ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক বলেছিলেন, এবার রেকর্ড বদলাতে খেলবেন। প্রথম টেস্ট জয়ের পর উৎসর্গ করেছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত এবং আহত সবাইকে। তারাই গতকাল জাতিকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসালেন। যে আবেগ ছুঁয়ে গেছে ক্রিকেটারদেরও। অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘আবেগটা আসলে মুখে বলা মুশকিল, কঠিন হবে। কারণ, এ ধরনের অর্জন আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই যখন ব্যাটিং করছিলেন, আমরা সবাই ড্রেসিংরুম থেকে চাচ্ছিলাম তারা দুজনই যেন খেলাটা শেষ করে আসেন। এত বছর ধরে তারা বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন, কত ম্যাচ জিতিয়েছেন। কিন্তু এই ধরনের ম্যাচ জেতা অনেক বিশেষ এবং আমরা সবাই চাচ্ছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সবাই অনেক খুশি।’ প্রথম টেস্ট ১০ উইকেটে, দ্বিতীয় টেস্ট ৬ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ। অথচ ২০২০ সালে এই রাওয়ালপিন্ডিতেই ইনিংস ও ৪৪ রানের ব্যবধানে হেরেছিলেন মুমিনুল হকরা। চার বছরের ব্যবধানে ইতিহাস বদলে গেছে। স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে পাকিস্তানিদের। সেই সঙ্গে বদল গেছে রেকর্ড। ব্যাকফুটে থেকেও সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শান্ত বলেন, ‘৬ উইকেট হারানোর পর আমি আগেই বলেছিলাম, আমরা এখনও বিশ্বাস করি। ব্যাটিংয়ে যাওয়ার আগে সে (মিরাজ) একটা বিষয় বলেছিল, সে ও লিটন দলের জন্য কাজটা করতে পারবে। তারা দুজন আগেও এমন কিছু করেছে, তবে এটা অবিশ্বাস্য। তাদের যে বিশ্বাস আছে এবং ড্রেসিংরুম একেবারে ভিন্ন। আমি মিথ্যা বলব না। কারণ, আমরা অনেকটা পিছিয়ে ছিলাম এবং নার্ভাস ছিলাম ওই সময়।’ একাধিক বিতর্ক মাথায় নিয়ে এই সিরিজ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানকে গার্মেন্টকর্মী হত্যা মামলার হুকুমের আসামি করা, প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বাদ দেওয়ার স্লোগান উঠেছিল দেশে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে মাঠের পারফরম্যান্সেও। তবে নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক। যে সাকিবকে নিয়ে দেশের মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে, দ্বিতীয় টেস্টের ‘উইনিং শট’ তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছে। কাভার ড্রাইভে বল সীমানার বাইরে পাঠালে বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে জড়িয়ে ধরেন মুশফিক। ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে তখন চলছিল ‘স্ট্যান্ডিং এভিয়েশন’। আসলে ৫৫ হাজার বর্গমাইলজুড়েই তখন অভিবাদন চলছিল। শান্তর মতে, ‘আমরা যেভাবে ম্যাচটা খেললাম, আমার মনে হয়, একটু হলেও তাদের (দেশের মানুষ) মুখে হাসি ফুটবে। আমরা সবাই জানি, আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেটের জন্য কতটা পাগল। আমরা ম্যাচ হারলেও সবাই যেভাবে আমাদের সমর্থন করে। তাই আমাদের সেটাই চেষ্টা ছিল, কীভাবে দেশের মানুষকে আমরা কিছু দিতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি।’ ২০২৩ সাল থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোওয়াইটওয়াশের সিরিজটি বাদ দিলে উন্নতির গ্রাফটা ওপরের দিকে। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানকে হোওয়াইটওয়াশের ঘটনা আত্মবিশ্বাসের ভিতটাকে আরও গভীরে নেবে।