মিরাজের সত্যিকারের অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা
অবশেষে কুঁড়ি থেকে পরিপূর্ণ ফুল হয়ে ফুটলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। একজন আদর্শ অলরাউন্ডারের কাছ থেকে যতটুকু প্রত্যাশা থাকে, পাকিস্তান সফরের দুই টেস্টে ব্যাটে-বলে সেটা পুরোপুরি মিটিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে ম্যাচের বাঁক বদলে দেওয়ার মতো ইনিংস খেলেছেন। বল হাতে রাওয়ালপিন্ডির পেস উইকেটে ঘূর্ণি-জাদু দেখিয়েছেন। তিনি এমন সময়ে এই পারফরম্যান্স করলেন, যখন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিদায় সমাগত। এ সফরে সাকিবের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন মিরাজ। দুই টেস্টের এ সিরিজে মিরাজ দুটি ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়ে দুটি হাফ সেঞ্চুরিতে ১৫৫ রান করেছেন। আর বোলিংয়ে সিরিজের সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়েছেন। মিরাজের বোলিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। তবে রাওয়ালপিন্ডির পেস উইকেটে তিনি দুই টেস্টেই যে বোলিংটা করলেন, তাতে অফস্পিনার হিসেবে সময়ের সেরাদের কাতারে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে তাঁকে। সবচেয়ে অবাক করেছেন ব্যাটসম্যান মিরাজ। ২০১৬ সালে অফস্পিনার হিসেবে অভিষেক হলেও তাঁর ব্যাটিং সামর্থ্যের খবরটা জানাই ছিল। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তিনি তো মূলত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানই ছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধারাবাহিকতা ছিল না তাঁর ব্যাটে। অবশ্য গত ক’বছর ধরে ব্যাটিংয়ে ভালোই করছিলেন তিনি। আট নম্বরে গত পাঁচ বছরে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। তবে এসব সমীকরণ-হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছেন এই সফরে। এর মধ্যে দ্বিতীয় টেস্টে ২৬ রানে ৬ উইকেট পতনের পর লিটনের সঙ্গে তাঁর ১৬৫ রানের অবিশ্বাস্য জুটি ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথম টেস্টেও মুশফিকের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে তাঁর ১৯৬ রানের জুটি ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিয়েছিল। মিরাজের ব্যাটিং-বোলিং ম্যাচের ওপর এতটাই প্রভাব ফেলেছিল, সিরিজসেরার পুরস্কারের জন্য তাঁর ধারেকাছেও কেউ ছিলেন না। তাই সিরিজসেরার পুরস্কার নেওয়ার সময় ভীষণ উৎফুল্ল ছিলেন তিনি, ‘প্রথমে আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে ভালো একটি সুযোগ দিয়েছেন। আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে সিরিজসেরা হয়েছি। আমি ভীষণ আনন্দিত। এই মুহূর্তটি কখনোই ভুলব না।’ ব্যাটিংয়ে দারুণ দুটি ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন অলরাউন্ডার হিসেবে খেলাটা খুবই কঠিন। ৮ নম্বরে ব্যাটিং করাটাও খুব কঠিন। আমি চেষ্টা করেছি স্ট্রাইক অদলবদল করে খেলতে এবং মুশি-লিটনের সঙ্গে ব্যাটিং উপভোগ করতে।’ পুরস্কার বিতরণীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সঞ্চালকের কাছে বাংলায় কিছু বলার অনুমতি চেয়ে নেন মিরাজ। এর পর তিনি সিরিজসেরার প্রাইজমানির অর্থ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এক রিকশাচালকের পরিবারকে দেওয়ার ঘোষণা দেন, ‘সম্প্রতি আমাদের দেশে হওয়া বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অনেকে শহীদ হয়েছেন। এই আন্দোলনে একজন রিকশাচালক আহত হয়েছিলেন, পরে তিনি মারা যান। এই ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারটা আমি তাঁর পরিবারকে দিতে চাই।’