হাজারো অবৈধ বাংলাদেশির সামনে আশার আলো
অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ছয় বছর পর আবারও সাধারণ ক্ষমার সুযোগ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। রোববার ১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস এই নিয়ম কার্যকর থাকবে। এ সময়ের মধ্যে দেশটিতে বসবাসরত ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ, অনিয়মিত, কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অভিবাসীরা আবেদন সাপেক্ষে বৈধ হতে পারবেন। জেল-জরিমানা ছাড়া দেশে ফিরতে পারবেন আগ্রহীরা। এ ছাড়া ভিজিট ভিসায় আমিরাতে গিয়ে অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসীরাও সাধারণ ক্ষমার আওতায় বৈধ হতে পারবেন। করোনা-পরবর্তী সময়ে ভিসা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ভিজিট ও অন্যান্য ভিসায় আরব আমিরাতে প্রবেশ করেন লক্ষাধিক বাংলাদেশি। অনেকে ভিসা পরিবর্তন করে কাজের সুযোগ পেলেও তাদের বেশির ভাগেরই ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। এতে দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। এখন অবৈধ অভিবাসীদের জন্য দেশটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করায় ভিজিট ভিসাধারীদেরও বৈধ হওয়ার সুযোগ সামনে এসেছে। আগামী দুই মাস চলা এই সময়ের মধ্যে সাময়িকভাবে নতুন ভিসা প্রদান বন্ধ থাকবে। দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন ও আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর হাজরা সাব্বির হোসেন জানান, যারা বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধভাবে আমিরাতে অনুপ্রবেশ করেছেন, তারাও পাসপোর্ট বা বাংলাদেশি হিসেবে কোনো প্রমাণ ও সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা, পূর্ববর্তী ভিসার তথ্য প্রদানপূর্বক মিশন থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করতে পারবেন। এর পর ইমিগ্রেশন থেকে এক্সিট পারমিট নিয়ে পারবেন দেশে ফিরতে। প্রথমে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে গিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা/আইডি কপি জমা দিয়ে প্রসেসিং ফি প্রদানের মাধ্যমে জরিমানা মওকুফ করা যাবে। পরে সাধারণ ক্ষমার আওতায় বৈধতার আবেদনকারীদের ৬ মাস মেয়াদি চাকরি সন্ধানী ভিসা দেবে আরব আমিরাত। এ সময়ে মধ্যে প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকর্তার মাধ্যমে বৈধতা অর্জন করতে হবে তাদের। এ ছাড়া যেসব কর্মী নিয়োগকর্তা থেকে পলায়ন করেছেন, তারা তা’মিম (নিয়োগকর্তার অভিযোগ) রিপোর্ট বিলুপ্ত করে দেশে ফিরতে বা বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশনে ভিসা রেকর্ড যাচাই করে তা’মিম পাওয়া গেলে দেশে যাওযার জন্য এক্সিট পারমিট অথবা ভিসা নিয়মিত করতে পুলিশ রিপোর্ট প্রয়োজন হবে। সাধারণ ক্ষমা চলাকালে আউট পাস নিয়ে দেশে গেলে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না। ফের তারা দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ পাবেন। এদিকে সাধারণ ক্ষমা চলাকালে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় বৈধ পাসপোর্টের। তাই আবেনদকারীকে আগেই পাসপোর্টের বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রবাসীদের সেবা দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দেশটিতে থাকা দুটি বাংলাদেশ মিশনের পাসপোর্ট উইং। পাসপোর্ট উইংয়ে লোকবল বাড়ায় নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট মিশন। অন্যদিকে বাংলাদেশি অভিবাসীদের আটক ১ হাজার ৩০০ পাসপোর্ট ইতোমধ্যে কনস্যুলেটের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিস। দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন বলেন, সাধারণ ক্ষমার এই সময় প্রবাসীরা যাতে প্রতারিত না হন, সে জন্য সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হচ্ছে। বৈধতা পেতে সরাসরি ইমিগ্রেশনগুলোতে যোগাযোগ করতে হবে। দেশে ফিরতে হলে মিশন থেকে প্রথমে গ্রহণ করতে হবে ট্রাভেল পারমিট। কাউকে দালালের ফাঁদে পা না দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। যেখাবে আউট পাস নিতে হবে সাধারণ ক্ষমা চলাকালে জেল-জরিমানা ছাড়া দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ করে কনস্যুলেট বা দূতাবাস থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ট্রাভেল পারমিট নিতে হবে। ট্রাভেল পারমিট পেলে সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন থেকে সংগ্রহ করা যাবে এক্সিট পারমিট। এক্সিট পারমিট পাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে ওই অভিবাসীকে দেশে ফিরতে হবে। সেবা গ্রহণের জন্য দুবাই ও ওমানের ভিসাধারীদের আল-আওয়ির (আবির) ইমিগ্রেশন, শারজাহ আল রাহমানিয়া, আজমান ইমিগ্রেশন, ফুজাইরাহ ইমিগ্রেশন, রাস আল খাইমাহ ইমিগ্রেশন, উম্ম আল কোয়েন ইমিগ্রেশন, আবুধাবি সুওহান জেল ইমিগ্রেশন, আল আইন মাকাম পুলিশ স্টেশন ও মদিনা যায়েদ (বেদা যায়েদ) ইমিগ্রেশনে যেতে হবে। এর পর ইমিগ্রেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী যেতে হবে দেশটির সরকার অনুমোদিত টাইপিং তাসহিল বা আমের সেন্টারে।