খেলাপি ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ

২৩ মে, ২০২৪ | ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

দেশের আর্থিক খাতের অন্যতম দুষ্ট ক্ষত খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি। এ সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে কী ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে তা বহুল আলোচিত। অতীতে নানা উদ্যোগ গ্রহণের পরও এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল মেলেনি। এমনকি নানা ধরনের ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক; বরং দিন দিন তা বেড়েছে। এ অবস্থায় ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তালিকা তৈরি করে ১ জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) পাঠানোর জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রাহক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই গ্রাহকের সমুদয় তথ্য বাল্ক আকারে সিআইবির ওয়েব পেজে আপলোড করতে হবে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ৩০ জুন ভিত্তিক খেলাপি ঋণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাদের ঋণগ্রহীতাদের মধ্য থেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করবে। এক্ষেত্রে ইতঃপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এ নির্দেশনা কী সুফল বয়ে আনে সেটাই এখন দেখার বিষয়। অতীতে লক্ষ করা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে এবং নতুন ঋণখেলাপি হওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পর আবার ছাড় দিয়েছে। ধারণা করা যায়, বড় ঋণখেলাপিদের পক্ষে রাজনৈতিক চাপেই নেওয়া হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত। এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আমরা দেখে আসছি, ঋণখেলাপিদের বারবার ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই আইন শিথিল করে দেওয়া হয়। এতে ঋণখেলাপিদের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ ব্যাংকারদের জন্যও সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণখেলাপির ঝুঁকি কমাতে দরকার জোরালো পদক্ষেপ। কারণ নামমাত্র পদক্ষেপগুলোকে ঋণখেলাপিরা তেমন আমলে নেয় না। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির কারণে ব্যাংক খাত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। বছরের পর বছর দেশে ঋণখেলাপিদের নানা রকম ছাড় দেওয়ার কারণেই পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যাংকে সুশাসনের অভাবে মন্দ ঋণের পাশাপাশি বাড়ছে অর্থ পাচারও। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শৈথিল্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা সাধারণভাবে অত্যন্ত ক্ষমতাবান। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেহেতু ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা প্রভাবশালী, সেহেতু চাইলেই ব্যাংকের পক্ষে তাদের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে না। এ সমস্যার সমাধানে দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের রাজনৈতিক বা দলীয় পরিচয় যা-ই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষকে সেই ক্ষমতাও প্রদান করতে হবে। দেশে ব্যাংক খাতের বড় এক সমস্যা দুর্নীতি। কাজেই এ খাতে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। যারা ঋণখেলাপি, তাদের উচিত ঋণ পরিশোধে নৈতিকতার পরিচয় দেওয়া।