কঠিন বসন্ত!

১৪ মার্চ, ২০২৪ | ১০:০১ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

বিয়ে-শাদি মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি স্বভাবজাত প্রয়োজন। সময় হলেই মানুষ বিয়ের প্রয়োজন অনুভব করে। সত্যনিষ্ঠ একমাত্র ধর্ম- ইসলাম বিয়ের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামে বৈরাগ্যতা নেই। বরং নবী-রাসূলের সুন্নাহ হলো, বিয়ে-শাদি করে পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করা। বর্তমান আমাদের দেশে বিয়ে শুধু কঠিন-ই নয়, মারাত্মক কঠিন ও জটিল। অপরদিকে ইসলামের দর্শন ও মূলনীতি হলো, বিয়েকে সহজ করা। যেখানে মানুষের প্রয়োজন নিহিত সেখানে ইসলাম সহজতার কথা বলে। কেননা বিয়ে মানুষের স্বভাবজাত প্রয়োজন। অন্যদিকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এটিকে যে মাত্রায় নিয়ে গেছে তা খুবই ভয়ানক। বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও নারীর দীর্ঘ সেতু বন্ধন তৈরি হয়। এর মাধ্যমে তারা চারিত্রিকভাবে পরিশুদ্ধ থাকবে এবং ইমান ও তাকওয়ার ব্যাপারে আরো সতর্ক হবে। দুঃখের বিষয় হলো, যখন দু’টি পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হয় তখন তাদের মতামত, চিন্তা-চেতনা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাওয়া-পাওয়া কিছুই যেন মিলতে চায় না। এ যেন দু’ মেরুর সহবাস্থান। এর কারণ হলো, বস্তুবাদী চিন্তা ভাবনা আমাদের কাঁবু করে রেখেছে। ইদানীংকালের মানুষ উভয় পক্ষের ‘মনের সচ্ছলতার’ পূর্বে বাহ্যিক সচ্ছলতা খোঁজে। এ যেন এক প্রতিযোগিতা; যা দেখানোর উপযুক্ত সময় তখনই! যে পক্ষের আর্থিক ব্যাপার-স্যাপার যত বেশি তার চাহিদা তত বেশি। বর্তমান সময় বলে, অর্থ-কড়ি, গাড়ি-বাড়ি, ক্যারিয়ার ইত্যাদি নিয়ে ভেবে চুল পাঁকানোর আগে বিয়ের কথা চিন্তা করার দরকার নেই। অন্যদিকে একটু অসচ্ছল, নিম্ন পরিবারের হলে তারা হয় প্রত্যাখ্যাত। একজন অসচ্ছল পিতা তার ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দিতে যে ধরনের সংকট ও গ্লানি অনুভব করেন সেদিকে তাকালেই বোঝা যায়। জীবনের সেই বসন্তটা তাদের কাছে যেন ধরা দিতেই চায় না। বিশেষ করে অর্থনৈতিক দিক থেকে ইসলাম কখনো বিয়েকে জটিল করেনি। কিছু অভিভাবক আছেন, যারা মেয়ের মোহরানা নিয়ে ব্যবসা করে। শোনার পর হয়তো আপনি নড়ে চড়ে বসবেন। মেয়ের বিয়েতে লাখ লাখ টাকার কাবিন ধরা হয়, যাতে এই লাখ টাকার মহর পরিশোধের চাপে ছেলে তটস্থ হয়ে থাকে। এরপর যদি তালাক হয়েও যায়, মেয়ের কোনো ভয় নাই। তখন তারা দেশের প্রচলিত বিভিন্ন আইন দ্বারা ছেলের থেকে টাকা আদায় করবে। যে বিপুল পরিমাণ অর্থ মেয়েটি পাবে তাতে তার ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। আসলে কি তাই? বস্তুত এই অর্থ তার কী কাজে আসবে কে জানে? কিন্তু যে তার সংসার হারালো, স্বামী হারালো তার হারানোর কিবা আছে?! কিছু অভিভাবকদের চিন্তা এমন, প্রথমেই যদি ছেলের ভেতর অধিক মোহরানার ভয় ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে সে সারা জীবন ওই টাকা পরিশোধের চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকবে। অথচ হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রিয় সাহাবিরা কখনও অধিক পরিমাণ মহর নির্ধারণ করেননি। তারা ইসলামের মাপকাঠিকে সামনে রেখে বিয়ের শুরু-শেষ সম্পন্ন করেছেন। অবশেষে কিছু কথা বলতে চাই। বিয়ে তো সবাইকেই করতে হবে। পাত্র-পাত্রী দেখার পূর্বে সুন্নাহ কী দিকনির্দেশনা দিয়েছে সেটা আগে ভাববেন। যেখানে আপনার প্রস্তাব দিতে ভয় লাগে যে, তাদের কাছে আপনি টিকতে পারবেন না তাহলে সেখানে যাওয়ার দরকার নেই। আপনি আপনার অবস্থা, সচ্ছলতা দেখে আপনার মতো কাউকে খুঁজবেন। আর অবশ্যই জীবনের এই কঠিনতম মুহূর্তে ইস্তিখারা করবেন। আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করবেন। বিয়ে মানুষের জীবনে একটি বসন্ত। এই বসন্ত যেন হয় সুন্দর ও সহজ। যে বসন্তের অপেক্ষায় মানুষ চেয়ে থাকে তাতে কেন ভয় ও উৎকণ্ঠা থাকবে?