শুরু হলো ইবাদতের ভরা মৌসুম

১২ মার্চ, ২০২৪ | ৪:৫৩ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

এসেছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারক। আজ প্রথম রমজান। শুরু হলো ইবাদতের ভরা মৌসুম। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করে মাবুদের সান্নিধ্য ও সন্তোষ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ এটি। আজ থেকে খুলে দেওয়া হলো জান্নাতের সব দুয়ার। বন্ধ হয়ে গেছে জাহান্নামের সবকটা দ্বার। নবিজি তাঁর সাহাবিদের রমজানের সুসংবাদ শোনাতেন। রমজানের ফজিলতের কথা বলতেন। ইবাদত ও সাধনায় মনোযোগী হওয়ার উপদেশ দিতেন। অধিক পরিমাণে নেকি অর্জনে উৎসাহ জোগাতেন। নবিজি (সা.) বলতেন, ‘তোমাদের দুয়ারে রমজান এসেছে। এটি একটি পবিত্র মাস। মহান আল্লাহ তোমাদের ওপর এ মাসে সিয়াম সাধনা ফরজ করেছেন। এ মাসে খুলে দেওয়া হয়েছে জান্নাতের সব দুয়ার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাহান্নামের সব দ্বার। শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে শিকলে। এ মাসে একটি রজনি রয়েছে, যা অন্য হাজার মাসের থেকেও উত্তম। যে এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে যেন (জীবনের) সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো।’ রমজান আসে পথহারা মুমিনকে পথের সন্ধান দিতে। আল্লাহকে ভুলে যাওয়া বান্দাকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করে দিতে। মৃতপ্রায় রুহের ঘর ইমানের ফুলে-ফলে সাজাতে। সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। কুরআন-হাদিসের পরিভাষায় সুবহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার ও যৌনসম্ভোগ, অশ্লীল কথা ও কর্ম থেকে বিরত থাকার নামই সিয়াম। (ফাতহুল বারি, ৪র্থ খণ্ড)। রমজানের সিয়াম পালন করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির একটি। আল্লাহর রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের দ্বিতীয় বছর আল্লাহর পক্ষ থেকে সিয়াম পালনের বিধান অবতীর্ণ হয়। সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করা হয়, ‘তোমাদের ওপর রোজা আবশ্যিক বা ফরজ করা হলো যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ এ আয়াত নাজিল হওয়ার পরের বছর রমজান আসার আগে রাসুল (সা.) সমবেত সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে এক দীর্ঘ ভাষণ দেন। এতে তিনি রমজানের গুরুত্ব, উদ্দেশ্য ও করণীয় সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.) বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষে রাসুল (সা.) আমাদের উদ্দেশে কথা বলেন-হে লোকেরা, তোমাদের ওপর এসেছে এক মহান মাস, বরকতময় মাস। এ মাসে একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। আল্লাহতায়ালা এ মাসের সিয়াম ফরজ ও (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাতে জেগে থাকা ঐচ্ছিক করেছেন। এতে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ পালন করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ পালনের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে পাপমোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে সমান প্রতিদান দেওয়া হবে। কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না। প্রশ্ন করা হলো-হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর কিংবা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহ এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাওছার থেকে পানি পান করাবেন। এ মাসের প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত ও শেষভাগে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এটি ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। এটি সমবেদনার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি তার অধীনস্থের কাজের ভার লাঘব করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (বায়হাকি)। এ মাসে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদতে মনোনিবেশ করা মুমিনের দায়িত্ব। এতে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতের মহাপুরস্কারের অধিকারী হতে পারব ইনশাআল্লাহ। কারণ, হাদিসে এসেছে-আল্লাহ বলেন, সাওম আমারই জন্য, এর পুরস্কার আমি নিজ হাতেই দেব। লেখক : মহাপরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, উত্তরখান, চানপাড়া, ঢাকা