ফাইভজি প্রকল্পে দুর্নীতির ছক

৫ মার্চ, ২০২৪ | ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

ডিজিটাল থেকে দেশ এখন স্মার্টের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আপডেট করার কাজও চলছে। তবে সেখানেও পড়েছে দুর্নীতির কালো ছায়া। সোমবার প্রকাশ-ফাইভজি প্রকল্পের আওতায় ২৬-এর পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইট ধারণক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনাকাটার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। জানা যায়, প্রকল্পের আগে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৬ টেরাবাইট সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনা যেতে পারে-এমন অভিমত দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল। সর্বোচ্চ ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে যে কাজ করা সম্ভব, তা করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-এই বাড়তি যন্ত্রাংশ কোনোদিন ব্যবহারই হবে না। তাই যন্ত্রাংশের নামে খোলস সরবরাহ করে অন্তত ১৬১ কোটি টাকা লোপাটের ছক চূড়ান্ত করেছে চীনা কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় একটি শক্তিশালী চক্র। তবে চলমান ডলার সংকটের কারণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে না পারায় চক্রটি টাকাগুলো এখনো ভাগবাঁটোয়ারা করে পকেটে তুলতে পারেনি। জানা যায়, বিটিসিএল-এর অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘ফাইভজির উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের বিপরীতে ৪৬৩ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। চীনের তিনটি প্রতিষ্ঠান এই দরপত্রে অংশ নেয়। দরপত্র মূল্যায়ন ও চীনের একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদানে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ পায় দুদক। কমিশন অভিযোগ আমলে নিয়ে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিমও গঠন করে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, নথিপত্রে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কেউ-ই দরপত্রের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ থাকার পরও সবাইকেই যোগ্য হিসাবে মূল্যায়ন করা হয়। তবে বিটিসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমন মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন না দেওয়ায় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বদলি ও পরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হলে সে আদেশ স্থগিত হয়। তবে এতকিছুর পরও কাজটি বাগিয়ে নেয় চীনের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা মনে করি, বৈশ্বিক ডলার সংকটের চলমান পরিস্থিতিতে যখন প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশ দিয়েছেন, তখন শুধু লুটপাটের লক্ষ্যে প্রয়োজনের চেয়ে ১০০ টেরাবাইটের অধিক ধারণক্ষমতার অবকাঠামো নির্মাণচেষ্টা বন্ধ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে প্রকল্পটি অবিলম্বে পুনরায় যাচাই-বাছাইপূর্বক অপ্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ক্রয় বন্ধেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, কোনো তথ্যপ্রযুক্তিগত প্রকল্পের কাজ কোন প্রতিষ্ঠান পাবে, তা নিয়ে আলোচনার চেয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী কাজটির মান বজায় রেখে ও যথাযথ ব্যয়ে তা সম্পন্ন হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ক্রয়ের ক্ষেত্রেও অধিকতর মনোযোগী হতে হবে। বিটিসিএল-এর মতো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটার কাজে দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালে ঊর্ধ্বতন মহলের অযাচিত হস্তক্ষেপ ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কিছুই নয়। প্রকল্প পুনরায় মূল্যায়নের পাশাপাশি অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এটাই প্রত্যাশা।