কাশিমপুর কারাগারে সাংবাদিকদের ওপর চলছে ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’: সিপিজের লোমহর্ষক রিপোর্ট
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো এক কড়া চিঠিতে কারাবন্দি সাংবাদিকদের ওপর চলা অমানবিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পাঠানো এই চিঠিতে নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি সরকারের কঠোর সমালোচনা করে জানিয়েছে, সংস্কার ও মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা এই সরকারের আমলেই সাংবাদিকদের মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। চিঠিতে সিপিজে দাবি করেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে চারজন সাংবাদিককে হত্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে, যার কোনো বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি নেই। বরং সাংবাদিকতা ও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে প্রতিহিংসাবশত এসব মামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। কারাগার নাকি নির্যাতন কেন্দ্র? সিপিজের চিঠিতে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি সাংবাদিকদের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, সাংবাদিকদের মাত্র ৩৬ বর্গফুটের (৩.৩৪ বর্গমিটার) ক্ষুদ্র সেলে আটকে রাখা হচ্ছে। দরজার বদলে সেখানে রয়েছে লোহার শিক, যার ফলে কনকনে শীতেও তারা সরাসরি হিমেল হাওয়া ও মশার উপদ্রবের শিকার হচ্ছেন। ঘুমানোর জন্য তাদের কোনো তোষক বা বিছানা দেওয়া হয়নি, ঘুমাতে হয় ফ্লোরের ঠাণ্ডা কংক্রিটের ওপর। খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কারাগার থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা অপর্যাপ্ত এবং অখাদ্য। চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ দশা তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, কারাগারে কোনো স্থায়ী ডাক্তার নেই। বন্দি সাংবাদিকদের মধ্যে যারা ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো জটিল রোগে ভুগছেন, তারা মাসের পর মাস কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না, পরিবারের পক্ষ থেকে ওষুধ পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও তৈরি করা হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। প্রতিশ্রুতির নামে প্রহসন চিঠিতে ড. ইউনূসের অতীত প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সরকারের দ্বিমুখী আচরণের তীব্র সমালোচনা করা হয়। সিপিজে উল্লেখ করে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ‘দ্য ডেইলি স্টার’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস স্বীকার করেছিলেন যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি করে ভিত্তিহীন হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সে সময় তিনি এসব মামলা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠনের কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সিপিজে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সেই আশ্বাসের কোনো প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায়নি। উল্টো গত বছরের ৮ আগস্ট তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কারাবন্দি এই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একে সরকারের ‘প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ’ এবং বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছে সংস্থাটি। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালনের আগে নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সাংবাদিকদের এমন মানবেতর দশা আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তিকে চরম সংকটে ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
