তাহের: জামায়াতের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে ড. ইউনূসের
বিএনপি ও এনসিপির পর জামায়াতে ইসলামীও অন্তর্র্বতী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিএনপির দিকে আঙ্গুল রেখে জামায়াত অভিযোগ করে প্রশাসনের ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রভাবাধীন এবং কয়েকজন উপদেষ্টা প্রকাশ্যে সেই দলের প্রতি ঝুঁকে আছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দলীয় আনুগত্য থাকা কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিতে সরকারপ্রধানের কাছে দাবি জানিয়েছে জামায়াত। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জামায়াতের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের। বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত এই অবস্থান উপস্থাপন করে। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ড. ইউনূস জামায়াতকে আশ্বস্ত করেছেন যে সরকার নিরপেক্ষ থাকবে, এবং নির্বাচনের আগে প্রশাসনে যেকোনো রদবদল তিনি নিজ হাতে তদারকি করবেন। যমুনা থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে আপত্তি রয়েছে, তবে আমরা প্রথম দিনেই অপসারণ দাবি করিনি। আমরা সময় দিচ্ছি। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তখন যা করণীয় তা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি—সব উপদেষ্টা নয়, কিছু কিছু আপনাকে বিভ্রান্ত করেন। জামায়াতের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে, কিন্তু আপনার আশপাশের কিছু মানুষ একটি দলের পক্ষে কাজ করেন বলে আমাদের ধারণা। সেসব বিষয়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।’ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে ও বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে তাহের বলেন, ‘সচিবালয়ের ৭০-৮০ ভাগ কর্মকর্তা একটি বিশেষ দলের। বিচার বিভাগেরও ৬৫ ভাগ একই দলের প্রভাবাধীন। এতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।’ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের কর্মকর্তারাও একই দলের চাপের মুখে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় জামায়াত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সরকার যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো আচরণ করে এবং নির্বাচনে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে। তাহের বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, যেখানে প্রয়োজন সেখানে রদবদল করুন।’ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস জানিয়েছেন, প্রশাসনিক পদায়ন তিনি নিজে তদারকি করবেন এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন লটারির মাধ্যমে হবে।’ জামায়াত এই প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে তাহের বলেন, ‘এই বিষয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। জামায়াত আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে। যদি আদালতের রায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে যায়, তাহলে অন্তর্র্বতী সরকার সেই ভূমিকা পালন করবে।’ তিনি আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোট নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বিএনপি চায় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হোক, কিন্তু জামায়াত চায় নভেম্বরের মধ্যে গণভোট শেষ হোক। তাহের বলেন, ‘দুটি বিষয় এক নয়—নির্বাচনে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন, আর গণভোটে জনগণ সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। তাই নভেম্বরে গণভোট দিতে হবে।’ জামায়াতের দাবি, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে হবে, অধ্যাদেশ নয়। বৈঠকে এ প্রসঙ্গ তোলা হলে প্রধান উপদেষ্টা একমত হন যে, আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে, কারণ এটি গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের সাংবিধানিক কর্তৃত্বের আওতায় পড়ে। তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন—জুলাই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে এবং সে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নেবে।’ জামায়াত ও এনসিপি উভয় দলই মত দিয়েছে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারই আদেশ জারি করবে, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি নয়। তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন যে সরকার বিষয়টি আইন অনুযায়ী পরীক্ষা করে দেখবে। বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম এবং রফিকুল ইসলাম খান। সরকারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, আসিফ নজরুল ও আদিলুর রহমান শুভ্র।
