জাহাঙ্গীরের অযোগ্যতার স্বীকারোক্তি নাকি দায়িত্বহীনতার প্রমাণ? – হত্যাকাণ্ড বন্ধে ম্যাজিক লাগে না, লাগে সৎসাহস আর যোগ্যতা

১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রংপুরে একজন মুক্তিযোদ্ধা আর তার স্ত্রীকে খুন করা হলো। তাদের ছেলেমেয়েরা পুলিশ আর র‍্যাবে চাকরি করে। মানে, যারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আছে, তাদের পরিবারও এখন নিরাপদ নয়। এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কী বললেন? বললেন, হত্যা বন্ধ করার কোনো ম্যাজিক তার কাছে নেই। সুইচ অন-অফ করার ব্যবস্থা থাকলে বন্ধ করে দিতেন। এই কথাগুলো শুনে যে কেউ ভাববে, এটা কি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য নাকি কোনো অসহায় সাধারণ নাগরিকের আক্ষেপ? যে মানুষটা দেশের পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে আছে, পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি সবকিছু যার অধীনে, সেই মানুষ বলছে তার কাছে কোনো উপায় নেই। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি ওই চেয়ারে বসে আছেন কেন? সরকারি গাড়ি, নিরাপত্তা, বেতন-ভাতা নিচ্ছেন কিসের জন্য? জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরেকটা কথা বলেছেন, নির্বাচনের আগে হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে কিনা সেটাও তিনি নিশ্চিত না। মানে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই স্বীকার করছেন যে পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এটা কোনো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথা হতে পারে না। এটা একজন ব্যর্থ প্রশাসকের আত্মসমর্পণ। আর এই আত্মসমর্পণ শুনে কার মাথায় আসবে না যে, তাহলে এই লোককে এই পদে বসানো হলো কেন? জুলাই মাসে দেশে যা ঘটেছে, সেটা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না। বিদেশি অর্থায়ন, জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা আর সামরিক বাহিনীর কিছু অংশের সমর্থনে একটা সুপরিকল্পিত অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটা তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার বসানো হয়েছে। এই সরকারের কোনো গণতান্ত্রিক বৈধতা নেই। মানুষের ভোটে আসেনি, কিন্তু ক্ষমতায় বসে আছে। এখন দেখেন, সেই অবৈধ সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে এমন একজনকে, যিনি নিজেই বলছেন তার হাতে কিছু করার নেই। এটা কাকে বোকা বানানোর চেষ্টা? দেশের মানুষ কি এতটাই বোকা যে এসব বুঝবে না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানে শুধু একটা সরকারি অফিস না। এটা দেশের নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে যে বসবে, তার হাতে থাকতে হবে পরিষ্কার পরিকল্পনা, শক্ত নেতৃত্ব, আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যা বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি নিজেই জানেন না কী করতে হবে। তিনি বলছেন ম্যাজিক নেই, সুইচ নেই। কিন্তু কেউ তো ম্যাজিক চায়নি। মানুষ চায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা, কার্যকর আইনপ্রয়োগ, আর অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা। এই তিনটা জিনিস কি ম্যাজিক? দেশে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে কেন? কারণ অপরাধীরা জানে তাদের কিছু হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অকার্যকর হয়ে পড়েছে। পুলিশ, র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। কারণ তাদের ওপরে যে নেতৃত্ব আছে, সেই নেতৃত্বই দিকনির্দেশনাহীন। যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই বলছেন তার কাছে সমাধান নেই, তার অধীনস্থ বাহিনীগুলো কীভাবে কাজ করবে? ইউনুস সাহেব যে একজন ব্যাংকার, মাইক্রোক্রেডিটের ব্যবসায়ী, সেটা সবাই জানে। তিনি নোবেল পেয়েছেন গরিবদের কাছে চড়া সুদে টাকা ধার দিয়ে। কিন্তু দেশ চালানো কি গ্রামীণ ব্যাংক চালানোর মতো? একটা দেশ পরিচালনা করতে হলে রাজনৈতিক দক্ষতা লাগে, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা লাগে, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা লাগে। ইউনুস সাহেবের কাছে এর কোনোটাই নেই। তিনি ক্ষমতায় এসেছেন একটা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় না। এই অবৈধ সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বসিয়েছে একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকে, যিনি সরাসরি স্বীকার করছেন যে পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা ইউনুস সাহেবের যোগ্যতার প্রমাণ। তিনি সঠিক মানুষ চেনেন না, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি শুধু একটা চেয়ারে বসে আছেন কিছু বিদেশি শক্তির মদদে। দেশের মানুষের জীবন, নিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ, এসব তার কাছে কোনো বিষয়ই না। রংপুরে যে মুক্তিযোদ্ধা আর তার স্ত্রী খুন হলো, তাদের পরিবার কার কাছে বিচার চাইবে? যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই বলছেন তার হাতে কিছু করার নেই, তার কাছ থেকে কী আশা করা যায়? দেশে প্রতিদিন মানুষ খুন হচ্ছে, আর সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এটাই হচ্ছে ইউনুস সাহেবের তথাকথিত সংস্কার সরকারের আসল চেহারা। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলছেন ম্যাজিক নেই। কিন্তু আসল কথা হলো, যোগ্যতাও নেই। দেশ চালানোর ইচ্ছাও নেই। আছে শুধু একটা অবৈধ ক্ষমতার চেয়ার, যেটা ধরে রাখাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। দেশের মানুষ বাঁচুক আর মরুক, সেটা তাদের মাথাব্যথার বিষয় না।