রংপুরে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হত্যা : নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর দেশে এখন কিসের রাজত্ব চলছে?

৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৪:৪৯ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রংপুরের তারাগঞ্জে ৭৫ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় আর তার ৬০ বছর বয়সী স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে নিজেদের ঘরেই গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। একজন সম্মানিত শিক্ষক, যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, তাকে আর তার সঙ্গিনীকে এভাবে পাশবিক নৃশংসতার শিকার হতে হলো। এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির একটা ভয়াবহ ছবি। যোগেশ চন্দ্র রায়ের মতো মানুষ এই দেশটা গড়েছিলেন। ১৯৭১ সালে যখন এই মাটিতে রক্ত ঝরেছিল, তখন তিনি লড়াই করেছিলেন একটা স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখে। সেই স্বাধীন দেশে আজ তার এই পরিণতি। তারাগঞ্জের খিয়ারপাড়া গ্রামে তার নিজের বাড়িতে, যেখানে তিনি আর তার স্ত্রী দুজনেই একা ছিলেন, সেখানে হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে ঢুকে এই নারকীয় কাজটা সেরে ফেলতে পেরেছে। পুলিশে চাকরি করা তার দুই ছেলে দূরে থাকায় বৃদ্ধ দম্পতি একেবারে অসহায় ছিলেন। যে দেশে জুলাই মাসে রক্তাক্ত দাঙ্গা বাঁধিয়ে নির্বাচিত একটি সরকারকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই দেশে এমন ঘটনা কি খুব আশ্চর্যজনক? ইউনুস আর তার দলবল যখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছে, তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা কি আর বোঝার বাকি আছে? জুলাইয়ের সেই সহিংসতা, যেখানে দেশজুড়ে রাস্তায় আগুন জ্বলেছিল, মানুষ মরেছিল, সেই ঘটনার পেছনে কাদের হাত ছিল সেটা এখন আর গোপন কিছু নয়। বিদেশি টাকা, ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর মদদ আর কিছু সামরিক বাহিনীর সমর্থন মিলে যে ক্যু ঘটানো হয়েছিল, তার ফলাফল এখন সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধারা কাদের চক্ষুশূল সেটা তো বলার দরকার নেই। যারা একাত্তরে এই দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাঙালি হত্যায় অংশ নিয়েছিল, তাদের উত্তরসূরিরাই আজ খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি কোনো শ্রদ্ধা রাখে বলে মনে হয় না। তাই যোগেশ চন্দ্র রায়ের মতো একজন মুক্তিযোদ্ধা আর তার স্ত্রীকে এভাবে মারা যেতে হলো, আর এই হত্যাকাণ্ডের কোনো সদুত্তর কেউ দিতে পারছে না। সুদি মহাজন ইউনুস, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের নামে দরিদ্রদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করে নিজের সাম্রাজ্য গড়েছিলেন, তিনি এখন দেশের কাণ্ডারি বনে বসে আছেন। কোনো ভোট ছাড়া, কোনো জনগণের অধিকার ছাড়াই তিনি আর তার অ-সরকার দেশ চালাচ্ছেন। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশে কী হচ্ছে সেটা তো চোখের সামনেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, সাধারণ মানুষ অনিরাপদ বোধ করছে, আর মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সম্মানিত মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে। যোগেশ চন্দ্র রায় চাকলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষা দিয়েছেন, দেশপ্রেম শিখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে সাহায্য করেছেন। এই মানুষটি এমন একটা দেশে বাস করতে চেয়েছিলেন যেখানে মানুষ নিরাপদে থাকবে, যেখানে ন্যায়বিচার পাবে, যেখানে গণতন্ত্র থাকবে। কিন্তু তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি দেখে গেলেন কীভাবে একটা নির্বাচিত সরকারকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হলো, কীভাবে দেশে অরাজকতা নেমে এলো। আর শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই সেই অরাজকতার শিকার হলেন। রোববার ভোরে প্রতিবেশীরা যখন দরজায় ডাকাডাকি করেও সাড়া পেলেন না, তখন মই লাগিয়ে ভেতরে ঢুকে তারা এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পান। রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের লাশ, শোবার ঘরে যোগেশ চন্দ্র রায়ের লাশ। কে বা কারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু একটা জিনিস খুব স্পষ্ট যে এই হত্যাকাণ্ড ঘটার পেছনে যে পরিবেশ, যে অরাজকতা দরকার, সেটা তৈরি করেছে এই অবৈধ সরকার আর তাদের মদদদাতারা। ইউনুসের এই অ-সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কী কী ঘটনা ঘটছে সেটা একবার ভেবে দেখুন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন দিশেহারা হয়ে গেছে। যে দেশে একসময় মানুষ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বোধ করত, সেই দেশেই এখন সন্ধ্যার পর মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়। আর এসবের দায় কার? নিশ্চয়ই তাদের যারা সহিংসতার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছে। জুলাই মাসে যে দাঙ্গা হয়েছিল, সেটা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ছিল না। সেটা ছিল একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার পেছনে বিদেশি শক্তির টাকা ছিল, ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের লোকবল ছিল, আর কিছু সামরিক বাহিনীর সদস্যের সমর্থন ছিল। এই তিনটা জিনিস মিলে তারা একটা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে পেরেছে। আর এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে যোগেশ চন্দ্র রায়ের মতো মানুষদের প্রাণ যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা উপন চন্দ্র রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেছেন, যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন এলাকার একজন সম্মানিত শিক্ষক আর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তার এই সম্মান, তার এই অবদান তাকে বাঁচাতে পারল না। কারণ যে শক্তিগুলো এখন দেশে রাজত্ব করছে, তারা মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে না। তারা চায় একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে, তারা চায় এই দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পাকিস্তানি ভাবধারার দিকে। ইউনুস আর তার দলবলের কাছে এই মুক্তিযোদ্ধা হত্যার কোনো জবাবদিহিতা আছে কি? তারা কি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করবে? অপরাধীদের ধরবে? নাকি এটাও চাপা পড়ে যাবে অন্য হাজারটা অপরাধের মতো? যখন ক্ষমতাই অবৈধ, যখন সরকারই জনগণের ভোটে নয় বরং সহিংসতার মাধ্যমে এসেছে, তখন তাদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার আশা করা কি বাতুলতা নয়? বাংলাদেশের মানুষ দেখছে কী হচ্ছে তাদের দেশে। তারা দেখছে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধারা অনিরাপদ হয়ে পড়ছেন, কীভাবে সংখ্যালঘুরা ভয়ে থাকছেন, কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ইউনুসের এই অ-সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারণ তাদের কোনো বৈধতা নেই, জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, আর সেজন্য যা করা দরকার তাই করবে।