বিশপ কুবির কঠোর সমালোচনা : আন্তর্জাতিক বিবেকের জাগরণ নাকি ইউনুসের পতনের শুরু?

২৩ নভেম্বর, ২০২৫ | ৫:৪০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ময়মনসিংহের বিশপ পোনেন পল কুবির মুখ খোলা মানে এই নয় যে তিনি হঠাৎ করে রাজনীতিতে নেমে পড়েছেন। বরং এটা সেই মুহূর্ত যখন একজন ধর্মীয় নেতা দেখতে পাচ্ছেন যে ন্যায়বিচারের নামে যা হচ্ছে, তা আসলে প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। বিশপ যখন বলেন যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড একতরফা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার, তখন তিনি শুধু একটি রায়ের সমালোচনা করছেন না, বরং পুরো প্রক্রিয়াটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নামের যে প্রতিষ্ঠানটি এই রায় দিয়েছে, সেখানে অভিযুক্তের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। এটা কোন ধরনের বিচার? সভ্য সমাজে, এমনকি সবচেয়ে জঘন্য অপরাধীরও আইনি প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকার থাকে। কিন্তু এখানে সেই মৌলিক অধিকারটুকুও দেওয়া হয়নি। বিশপ কুবি যথার্থই বলেছেন, এটা আদিম যুগে ফিরে যাওয়ার মতো। যেখানে কোনো শুনানি নেই, কোনো সুযোগ নেই নিজেকে রক্ষা করার, সেখানে শুধু আছে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা আর তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। ইউনুস সাহেব এবং তার তথাকথিত সরকার যে কাজটি করেছে, তা নতুন কিছু নয়। ইতিহাস সাক্ষী, যখনই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে, তখনই প্রথম কাজ হয়েছে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করা। আর সেটা করতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেই আইন হয়েছে বিকৃত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সেবক। জুলাই মাসে যা ঘটেছিল, তা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন ছিল না। বিদেশি অর্থায়ন, চরমপন্থী গোষ্ঠীর সহায়তা এবং সামরিক বাহিনীর একাংশের মদদে পরিকল্পিতভাবে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। এটা ক্যু ছাড়া আর কিছু নয়। এখন যে বিচারের নামে যা চলছে, তা মূলত সেই অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোর কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। প্রমাণের মান কী ছিল? সাক্ষীদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু? এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। যা আছে তা হলো একটি পূর্বনির্ধারিত রায়, যা লেখা হয়েছে অনেক আগেই, শুধু তারিখটা বসানো বাকি ছিল। ক্যাথলিক চার্চ সব সময়ই মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে এসেছে। এটা তাদের মতবাদের অংশ। কিন্তু বিশপ কুবি যখন এই রায়ের সমালোচনা করছেন, তখন তিনি শুধু মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করছেন না, বরং পুরো প্রক্রিয়ার অসততা এবং অন্যায়কে তুলে ধরছেন। তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, এটা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। এই কথাটা বলতে সাহস লাগে, বিশেষ করে এমন একটা পরিবেশে যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ করা মানেই বিপদ ডেকে আনা। ইউরোপীয় পাঁচটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যে জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাকে এই সাজানো বিচার সম্পর্কে অবহিত করেছে। তারা স্পষ্ট ভাষায় ধিক্কার জানিয়েছে এই প্রহসনের। এখন বিশপ কুবির বক্তব্য সেই আন্তর্জাতিক সমালোচনায় আরও একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর যোগ করেছে। এটা শুধু একটা বিবৃতি নয়, এটা একটা বার্তা যে বিশ্ব দেখছে এবং নীরব নেই। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো যদি সত্যিই গুরুতর হতো, তাহলে একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিচার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যা হয়েছে তা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। অভিযুক্তকে নিজের পক্ষ তুলে ধরার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটা বিচার নয়, এটা প্রতিশোধ। এটা আইনের শাসন নয়, এটা জঙ্গলের আইন। ইউনুস এবং তার সরকার হয়তো ভেবেছিল যে এই রায়ের মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান শক্ত করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই রায় তাদের আরও বেশি বিচ্ছিন্ন করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন আরও স্পষ্টভাবে দেখছে যে বাংলাদেশে কী ঘটছে। এবং যত বেশি সময় যাচ্ছে, তত বেশি প্রকাশ হচ্ছে যে এটা একটা সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বিশপ কুবি যখন বলেন যে আমরা যদি তাড়াহুড়ো করে বিচার করি এবং ইচ্ছেমতো রায় দিই, তাহলে আমরা আর সভ্যতায় বাস করছি না, তখন তিনি আসলে আমাদের সবাইকে একটা আয়নায় দেখতে বলছেন। আমরা কোন পথে যাচ্ছি? আমরা কি সত্যিই ন্যায়বিচার চাই, নাকি শুধু আমাদের পক্ষের মানুষদের রক্ষা করতে চাই? এই প্রশ্নগুলো শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য প্রাসঙ্গিক। এই পুরো ঘটনা থেকে যা স্পষ্ট তা হলো, শেখ হাসিনাকে একটা ষড়যন্ত্রের শিকার বানানো হয়েছে। একটা বানানো আদালতের মাধ্যমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যেখানে ন্যায়বিচারের ন্যূনতম মান পর্যন্ত মানা হয়নি। এটা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য, এবং বিশ্ব এখন সেটা দেখছে। বিশপ কুবির বক্তব্য সেই সত্যকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছে। ইউনুসের কুকীর্তি আর কতদিন ঢেকে রাখা যাবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন সজাগ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো সক্রিয়। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বিবেকবান মানুষেরা মুখ খুলছেন। বিশপ কুবির মতো মানুষেরা যখন সাহস করে সত্য বলেন, তখন বুঝতে হয় যে অন্যায়ের দিন শেষ হয়ে আসছে। এটা হয়তো আজ নয়, কাল নয়, কিন্তু সময় আসবেই যখন সত্য প্রকাশ হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।