সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় মহানবির প্রেরণা – U.S. Bangla News




সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় মহানবির প্রেরণা

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৪ আগস্ট, ২০২৩ | ৬:৩৬
জীবন বিধান হিসাবে ইসলামের পরিধি ব্যাপক ও সর্বব্যাপী। জীবনের সব ক্ষেত্রে এর সৌরভ ছড়ানো। এ ধারা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি বাদ যায়নি। জীবনের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো সাহিত্য-সংস্কৃতিও এক অপরিহার্য বিষয়। সাহিত্য মানব জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের শুভবুদ্ধির উজ্জীবনী শক্তি। সাহিত্যিকের কাজ মানুষের সুপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলা। সংস্কৃতি তো জীবনের ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক, আরও গভীর ও অতলস্পর্শী। শোভমানতা ও ঔদার্যে বিভূষিত। জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি। মানুষ কীভাবে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে জীবনের সাফল্য অর্জন করবে, তার চূড়ান্ত লক্ষ্য ‘ইনসানে কামিল’ হওয়ার পথে অগ্রসর হবে-সংস্কৃতি সেই পথনির্দেশক। এক কথায়, সংস্কৃতি হচ্ছে মানব জীবনের চূড়ান্ত সাফল্যের পাথেয়। দ্বীন ও দুনিয়ার মহত্তম সমন্বয়।

এর ব্যাপকতাও জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। যে যত বেশি সংস্কৃতিবান, তিনি ততই পরিশুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন ও সফল মানুষ। মানবজাতির মধ্যে পরম বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ হচ্ছেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি ছিলেন এক নয়া সংস্কৃতির নির্মাতা। শুদ্ধতা ও পরিচ্ছন্নতার এক দুর্লভ মহিমায় বিভূষিত। অথচ তার সমাজ ও সময়, তার যুগ ও প্রতিবেশ ছিল পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। হজরত ঈসা (আ.)কে আসমানে তুলে নেওয়ার পর থেকে তার নবুয়ত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত দীর্ঘদিনব্যাপী মানবসমাজ নিষ্পিষ্ট ছিল পঙ্কিলতা, নির্মমতা, অস্বচ্ছতা, অসততা, অসাধুতা, পৌত্তলিকতা ও পেশিশক্তিমত্তার এক অসহনীয় অনাচার ও দুর্বৃত্তপরায়ণতায়। এ যুগসন্ধিক্ষণে তার আগমন ঘটে। গোটা মানবমণ্ডলীর কল্যাণকামী হয়ে তিনি যখন দ্বীন প্রচারে লিপ্ত, শত

বাধা-বিঘ্নের মধ্যেও তিনি ছিলেন অবিচল ও সুদৃঢ়। অথচ তার কোনো শিক্ষক ছিল না। তিনি জাগতিক কোনো পাঠ গ্রহণ করেননি। নবুওয়তের আগে প্রকৃতিই ছিল তার শিক্ষক। তার প্রজ্ঞা, তার বিচক্ষণতা, তার ঔদার্য, তার বিবেচনাবোধ তার সময় ও পরিবেশ থেকে তাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছেন। সেই সমাজের সম্মানিত ও মর্যাদাবান পুরুষ হিসাবে, পরিশুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে দুর্লভ সম্মানে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। ভাষার শুদ্ধতা, সাংস্কৃতিক পরিচ্ছন্নতা ও মানসিক ঔজ্জ্বল্যে তিনি ছিলেন এক মহিমান্বিত মানুষ। তিনি বলতেন, ‘আমি শুদ্ধতম আরব, কেননা কোরাইশদের ভেতর আমার জন্ম। কিন্তু আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি সাদ বিন বকর গোত্রে। তার যুগও ছিল কবিতার ছন্দ-উপমা, শব্দ-উৎপ্রেক্ষা ও বাণী-রূপকল্পে প্লাবিত। আরবদের জীবন ও

জীবিকা, স্বপ্ন ও বাস্তবতা, আশা ও আনন্দ, শত্রুতা ও মিত্রতার বাহন ছিল কবিতা। কবিতা ছিল তাদের ইতিহাস, তাদের বিজ্ঞান, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের সভ্যতা। এক কথায় তৎকালীন আরবে কবি ও কবিতা বহুল প্রচলিত ও চর্চিত একটি বিষয় ছিল। আরবের মানুষের মন ও মনন, আরবের পথ ও প্রান্তর কবি ও কবিতার দ্বারা মেঘমালার মতো আবৃত ছিল। সেই কাব্যপ্লাবী সমাজের একজন প্রাগ্রসর ও শুদ্ধভাষী মানুষ হয়েও রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়তের আগে কোনো কবিতার আসরে যোগ দেননি। যে দু-একবার যোগ দিতে আগ্রহী হয়েছেন, অলৌকিকভাবে পথিমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছেন বা অন্যভাবে ফিরে এসেছেন। তারপরও যখন তার ওপর নবুওয়তের আসমানি গুরুদায়িত্ব অর্পিত হলো, তখন তাকে শত্রুপক্ষের পক্ষ থেকে

বলা হলো ‘কবি’ এবং তার ওপর নাজিলকৃত কিতাব আল কুরআনকে বলা হলো ‘কবিতা।’ আল কুরআনই এর প্রতিবাদে সোচ্চার হলো। বলা হলো, ‘আমি রাসূলকে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং তা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো কেবল এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন।’ এরপরও ইসলামের সৌন্দর্য ও মহিমা প্রচারে আরও অনেক কিছুর মতোই কাফের-মুশরিকরা কবি ও কবিতাকে ব্যবহার শুরু করল। আবু সুফিয়ান ইবনুল হারিছ, আবদুল্লাহ ইবনুয-যিবারা, দিরার ইবনুল খাত্তাব, আমর ইবনুল আস, আবু আয্যা আল জুমাহি, আল হারিছ ইবন হিশাম, হুবায়রা ইবন ওয়াহাব আল-মাখযুমি, মুসাফি ইবন আবদ মানাফ, আবু উসামা মুয়াবিয়া ইবন যুহায়র, কাব ইবন আশরাফ প্রমুখ কবি যখন ইসলামের বিরোধিতায় কবিতা নিয়ে সর্বশক্তিতে

নিয়োজিত, তখন কবি ও কবিতা সম্পর্কে ইসলামের নীতিনির্ধারণী দিকনির্দেশনা জারি হলো। আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে বলা হলো, ‘আর কবিরা, তাদের অনুসরণ করে তো বিভ্রান্তরা। আপনি কি লক্ষ করেন না তাদের প্রতি যে, তারা প্রত্যেক প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়? আর তারা তো বলে তা, যা তারা করে না। তবে তারা ছাড়া যারা ইমান এনেছে, নেক আমল করেছে এবং স্মরণ করেছে আল্লাহকে বারবার আর প্রতিকার করেছে অত্যাচারিত হওয়ার পর শিগ্গির জানবে যারা জুলুম করেছে, কোন জায়গায় তারা ফিরে যাবে। কুরআনে কারিমের এ আয়াতে কবি ও কবিতা তথা সাহিত্য সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। কুরআনের বাচনভঙ্গি, ভাষাশৈলী ও উপস্থাপনা পদ্ধতির কারণে নবদীক্ষিত মুসলিম কবিদের কাছে

হঠাৎ ম্লান হয়ে যাওয়া কবিতা আবার নবজীবন লাভ করে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উৎসাহ ও উদ্দীপনা। তার লালন ও পরিশোধন, তার মমত্ব ও ভালোবাসা, তার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। নবুওয়তি দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সাহাবি-কবিদের কবিতা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতেন। তাদের কবিতা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তাদের কবিতার শুদ্ধতার প্রতি নজর রাখতেন। তাদের উৎসাহিত করার জন্য পুরস্কৃত করতেন। সমসাময়িক কবিদের কবিতা সম্পর্কে প্রাজ্ঞ মন্তব্য করতেন। মহানবি (সা.)-এর এসব কথার সারমর্ম ছিল শিল্পকলা তথা সাহিত্যের সৌন্দর্য এবং জীবনের সৌন্দর্যের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এভাবে ইসলামের গৃহাঙ্গনে কবি ও কবিতা স্বতন্ত্র মহিমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য প্রচার, কাফের-মুশরিকদের সমুচিত জবাব দেওয়া,

নও-মুসলিমদের আত্মত্যাগ ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান করার ক্ষেত্রে সাহাবি-কবিদের কবিতা এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সাহাবি কবি হজরত হাসসান বিন সাবিত (রা.), হজরত আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রা.), হজরত কাব বিন মালিক (রা.), হজরত লবিদ বিন রাহিয়া (রা.) প্রমুখ। এক পর্যায়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও তাদের কবিতার বিষয় হয়ে ওঠেন। তার সৌন্দর্যমণ্ডিত জীবন, স্নেহসিক্ত ও দয়ার্দ্র হৃদয়, মানুষের ও মানবতার প্রতি তার অকৃত্রিম ও অভাবনীয় ভালোবাসা সাহাবি-কবিদেরও বিমুগ্ধ করে। তারা কবিতার ভাষায় তার জীবনের নানা দিক উচ্চকিত করে তোলেন। তার ইন্তেকালের পর এ ধারা আরও বিকশিত হয় এবং আরবের সীমানা ছাড়িয়ে দুনিয়ার সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ‘রাসূল-প্রশস্তি’

বা ‘রাসূলের শানে কবিতা’ নামক এ সমুজ্জ্বল ধারা আজ পৃথিবীর সব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। পৃথিবীতে তিনিই হচ্ছেন একমাত্র মানুষ, যাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর প্রায় সব ভাষার শ্রেষ্ঠ কবিরা মুখরিত হয়েছেন। আরবি, ফার্সি, তুর্কি, ইংরেজি, জার্মানি, ফরাসি, মালয়, উর্দু, হিন্দি ও বাংলা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সব ভাষার সব কবির অনুভূতিতে একই সুর-‘রুহি ফিদাকা ইয়া রাসূলুল্লাহ!’ হে আল্লাহর রাসূল! আমার সত্তা যেন তোমায় উৎসর্গিত হয়। এ আবেগ ও ভালোবাসা শুধু কবিতায় নয়, নাটক, গল্প, উপন্যাস-সাহিত্যের প্রায় সব শাখাকে আলোড়িত করেছে এবং আলোকিত করেছে। তার নামের জাদু স্পর্শে অনেক ভাষার গতি পালটে গেছে। সমৃদ্ধ হয়েছে সেই ভাষার গাঁথুনি। পরিপুষ্টি পেয়েছে এর অন্তঃসত্ত্বা। বিকশিত হয়েছে ভাব। সমৃদ্ধ হয়েছে শব্দভান্ডার। সম্প্রসারিত হয়েছে আবেগ ও উদ্দীপনা, সম্মোহনী শক্তি ও উজ্জীবনী প্রভা। সাহিত্যের সৌন্দর্যের সঙ্গে জীবনের সৌন্দর্যকে একাত্ম করে দিয়েছে। লেখক : গবেষক, কলামিস্ট
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ঢাকা পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আওয়ামী লীগের যৌথ সভা শুক্রবার গ্রাহকের অজান্তে মোবাইলের ব্যালেন্স কাটা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : পলক নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক : ওবায়দুল কাদের মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে : প্রধানমন্ত্রী মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কমাতে পারে : প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্যের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক : ওবায়দুল কাদের তথ্য অধিকার আইনের আওতায় গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা হবে: প্রতিমন্ত্রী ‘৪৬তম বিসিএসে ভুল প্রশ্নের জন্য কেউ বঞ্চিত হবেন না’ বিদেশ থেকে ঢাকায় নেমেই গ্রেফতার ‘কাচ্ছি ভাই’ মালিক রিমান্ডে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য সবকিছু প্রস্তুত: ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব গণশুনানিতে বসেই অভিযোগের সমাধান করলেন পলক হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত: ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে বাধা নেই গাজা সংকট নিয়ে কুয়েতের আমিরকে যা বললেন এরদোগান বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম: সিইসি দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৫ কোন সড়কে কোন যানবাহন কত গতিতে চলবে, নীতিমালা জারি