ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আরও খবর
পাটকলগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা করছে সরকার : নানক
শুদ্ধাচার নিশ্চিতকরণ ছাড়া এসডিজি অর্জন সম্ভব নয় : চট্টগ্রামে টিআইবি
সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে চাই : বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী
ফায়ার সার্ভিস ও আবহাওয়া অধিদপ্তরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ স্থায়ী কমিটির
স্মার্ট দেশ উপহার দিতে নিরন্তর কাজ করছে সরকার : পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
বরিশালে অচিরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসর বসবে : পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী
জীবন দিয়ে দেশ বিরোধী অপশক্তিকে মোকাবেলা করবো : নাছিম
বাবার অপেক্ষায় গারদের সামনে শিশু ফাতেমা
আদালতের গারদের (হাজতখানা) সামনে সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে গৃহবধূ তাসলিমা। কোলে ৩ বছরের মেয়ে ফাতিমা। ২১ অক্টোবর তার স্বামী সাজিদ খান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর থেকে তিনি বা তার শিশু সন্তান একদিনের জন্যও সাজিদের দেখা পাননি।
তাসলিমার অভিযোগ, তার স্বামী রাজনীতির ধারেকাছেও নেই। অন্যায়ভাবে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ বাসার সামনে থেকে ধরে নেয় তাকে। মেয়েকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘ও তো সারাদিন বাবাকে দেখতে চায়। গারদখানার গেটে দাঁড়িয়ে থাকে। ও হয়তো ভাবে ওখানে ওর বাবা আছে। তাই মেয়ের জন্য ‘প্রতিদিন সকালে এখানে আসি। সন্ধ্যায় চলে যাই। সোমবারও সকাল ১০টায় তিনি এসেছেন। বেলা ৩টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় গারদের সামনেই ঠায়
দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সকাল ১১টা। একের পর এক প্রিজনভ্যান ঢুকছে আদালত চত্বরে। একটা ভ্যান ঢুকলেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। পুলিশের কান ফাটানো বাঁশি ছাপিয়ে অনেকে স্বজনের নাম ধরে ডেকে ওঠেন-ওই জসিম, রুবেল, আনিস, খায়রুল। আরও কত নাম। এমনকি অপেক্ষমাণ স্বজনদের অনেকে ঘিরে ধরেন প্রিজনভ্যান। এ সময় ভেতরে থাকা বন্দিদের কেউ কেউ ছোট খুপরি দিয়ে হাত নাড়েন। কেউ পরিবারের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বার্তা দেন। কেউ বা ধরেন রাজনৈতিক স্লোগান। তবে ভ্যান চলে যাওয়ার পরই শুরু হয় নানা আলোচনা। কেউ বলেন, আনিসের মুখটা দেখছোস। খুব পিটাইছে বোধহয়। কেউ বলেন, কিছুই খাইতে দেয় নাই। বন্দির স্বজনদের অনেকের এমন নানা মন্তব্য ঘুরপাক খেয়ে ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ মিলিয়ে যায়।
বেলা তখন ১২টা। সিএমএম কোর্টের নতুন ভবনের সিঁড়িতে ছেলের অপেক্ষায় বসে আছেন বৃদ্ধা তাসলিমা বেগম। তার ছেলে মিঠুকে ডেমরা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারও দাবি ছেলে দিনমজুরি করে। রাজনীতির ধরেকাছেও নেই। তারপরও পুলিশ তাকে ধরে এনেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাসলিমা বলেন, ‘আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগালি। সে আওয়ামী লীগও না-বিএনপিও না। হ্যায় তো দিনরাইত কাম কইর্যা শ্যাস করতে পারে না। তইলে পার্টি (রাজনীতি) করব কখন।’ ছেলেকে একনজর দেখার জন্য গারদের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে বারবার ছুটে যাচ্ছেন তাসলিমা। হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ নিরুপায়। ফলে তাকে ফিরে আসতে হয় বারবার। গারদের সামনেই কথা হয় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনিও এসেছেন তার ছেলেকে একনজর
দেখতে। নাম সজিব আহমেদ। মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র সজিব রাজনীতিতে জড়িত নয় বলে দাবি তার। জলিল বলেন, রোববার রাত ১০টায় ভাষানটেক থানা পুলিশ তার ছেলেকে ধরে আনে। পরে বিএনপির গাড়ি পোড়ানো পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়া হয়। বন্ধুর গ্রেফতারের খবরে উদ্বিগ্ন সজিবের দুই বন্ধু জুনায়েত ও রিয়াজ ছুটে আসেন আদালত চত্বরে। তারা বলেন, সজিব নিজে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তার বাবা বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যায় বলে তারা শুনেছেন। আংকেলকে না পেয়ে সজিবকে ধরে এনেছে পুলিশ। বেলা সোয়া ২টা। পুরোনো ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় কথা বলছেন কয়েকজন। একজন বলছেন, সাংবাদিকরা তো এখন সত্য কথা লেখে না। কারণ লিখলেই তো ডিজিটাল
আইনে মামলা দেবে সরকার। তাদের এমন কথাবার্তা শুনে সেদিকে এগিয়ে যান প্রতিবেদক। জানতে চাওয়া হয়-কী এমন খবর, যা সাংবাদিকরা লিখবেন না-এতে থতমত খেয়ে যান একজন। তাদের সঙ্গে আলাপের পর জানা গেল চলমান গণগ্রেফতার অভিযানে তাদের এক স্বজনকে ধরেছে পুলিশ। তার নাম নিয়ামত উল্লাহ। রোববার আজিমপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানা পুলিশ। আদালত চত্বরে অপেক্ষমাণ নিয়ামত উল্লাহর স্ত্রী মরিয়ম সুলতানা বলেন, তার স্বামী পেশায় হোমিও চিকিৎসক। পাশাপাশি মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেন। জীবনে কখনো রাজনীতির আশপাশ দিয়েও যাননি। অথচ পুলিশ তাকে জামায়াত কর্মী বলে গ্রেফতার করেছে। পরে পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়া হয়। আদালত চত্বরে অপেক্ষমাণ নিয়ামত উল্লাহর দুই
ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর একজন বলেন, ‘আমি এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। যে লোকজন রাজনীতির আশপাশে নেই তাকে ধরে জামায়াত বলে চালান দেওয়া তো গুরুতর অপরাধ। অপরজন বলেন, ‘আমরা সারারাত থানা পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার করেছি। কিন্তু ওসির একটাই কথা। ওপরের পর্যায়ে কথা বলতে হবে। তা না হলে আসামি ছাড়া যাবে না। তারা জানান, নিয়ামত উল্লাহ অসুস্থ। কিন্তু রাতে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া যায়নি। সকালে থানায় গিয়ে শুধু পাউরুটি কলা কিনে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এক বোতল পানিও তারা পৌঁছাতে পারছেন না। আদালত চত্বরে ভিড়ের মধ্যে হাঁটলে নানা কথাবার্তা কানে আসে। সোমবার দুপুরে হাজতখানার পাশ দিয়ে যেতেই
এক ভুক্তভোগীর ফোনালাপ শোনা যায়। তিনি কাকে যেন বলছেন, ‘গারদে খাওন দিছি এইমাত্র। ৩শ ট্যাকা নিছে পুলিশে। আর কিছুক্ষণ থাকুম এখানে। বাইর হইলে দেখা কইরা তারপর যামু।’ এর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আরেকজন কথা বলছেন ফোনে। কাকে যেন তিনি বলছেন, ‘না না গারদে সবাইরে ঢুকতে দিব না। একজনরে দিব কইছে। তয় ট্যাক্যা লাগব দেড় হাজার। পাঁচ মিনিট কথা কইতে দিব। এর বেশি না।’ এ সময় গারদের (হাজতখানা) গেটে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনকে এদিক-ওদিক ঘুরতে দেখা যায়। কেউ বা আকস্মিক ঢুকে পড়ছেন পাশের অস্থায়ী খাবার হোটেলে। বেলা ৩টা। নতুন ভবনের দোতলায় হাজতখানার সামনে শতাধিক নারী-পুরুষের জটলা। আইনজীবীদের ছোটাছুটি। হইচই চিৎকার। শিশুদের কান্না। এক
অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পরিবেশ। ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা পুলিশের। কিছুক্ষণ পরপরই বাজছে হুইসেল। সেখান থেকে কিছুটা দূরে মেঝেতে খবরের কাগজ বিছিয়ে বসেছেন কয়েকজন নারী। তাদের ৪-৫ জনের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু। গৃহবধূ লতার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে ৫ বছরের শিশু তাওহিদ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার স্বামী মোমিনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী-প্রশ্ন করতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন লতা। বলেন, কারাগার তো দূরে থাকা জীবনে কোনোদিন তিনি থানা চত্বরেও জাননি। কিন্তু স্বামীকে পুলিশে ধরার পর অসংখ্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। উকিল, থানা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা সবার কাছে গেছেন। কিন্তু স্বামীকে মুক্ত করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। বসে থাকা আরেক নারীর স্বামী
সানাউল্লাহকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই তিনিও হন্যে হয়ে ঘুরছেন আদালত চত্বরে। স্বামীকে কেন ধরেছে প্রশ্ন করা হলে পিংকি নামের এক ভুক্তভোগী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘পুলিশের ধরতে কি কারণ লাগে। যারে মন চায় তারে ধরব। জামায়াত-বিএনপি বানাইব।’ তার স্বামী আসিক হোসেন বাবুকেও বিনা কারণে আশুলিয়া থেকে ধরে এনেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে তিনটা। হঠাৎ সেখানে হাজির হন আদালত চত্বরে দায়িত্বরত পুলিশের এসআই জুলফিকার। সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখে ভুক্তভোগীদের হটিয়ে দেন তিনি। বলেন, এখানে মনে হচ্ছে বাজার বসেছে। নেমে যান এখান থেকে। বাইরে গিয়ে বলেন যা বলার। ফলে ভিড় ভেঙে যায়। সবাই হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করেন সিঁড়ি দিয়ে।
দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সকাল ১১টা। একের পর এক প্রিজনভ্যান ঢুকছে আদালত চত্বরে। একটা ভ্যান ঢুকলেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়। পুলিশের কান ফাটানো বাঁশি ছাপিয়ে অনেকে স্বজনের নাম ধরে ডেকে ওঠেন-ওই জসিম, রুবেল, আনিস, খায়রুল। আরও কত নাম। এমনকি অপেক্ষমাণ স্বজনদের অনেকে ঘিরে ধরেন প্রিজনভ্যান। এ সময় ভেতরে থাকা বন্দিদের কেউ কেউ ছোট খুপরি দিয়ে হাত নাড়েন। কেউ পরিবারের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বার্তা দেন। কেউ বা ধরেন রাজনৈতিক স্লোগান। তবে ভ্যান চলে যাওয়ার পরই শুরু হয় নানা আলোচনা। কেউ বলেন, আনিসের মুখটা দেখছোস। খুব পিটাইছে বোধহয়। কেউ বলেন, কিছুই খাইতে দেয় নাই। বন্দির স্বজনদের অনেকের এমন নানা মন্তব্য ঘুরপাক খেয়ে ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ মিলিয়ে যায়।
বেলা তখন ১২টা। সিএমএম কোর্টের নতুন ভবনের সিঁড়িতে ছেলের অপেক্ষায় বসে আছেন বৃদ্ধা তাসলিমা বেগম। তার ছেলে মিঠুকে ডেমরা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারও দাবি ছেলে দিনমজুরি করে। রাজনীতির ধরেকাছেও নেই। তারপরও পুলিশ তাকে ধরে এনেছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাসলিমা বলেন, ‘আমার ছেলে রাজমিস্ত্রির জোগালি। সে আওয়ামী লীগও না-বিএনপিও না। হ্যায় তো দিনরাইত কাম কইর্যা শ্যাস করতে পারে না। তইলে পার্টি (রাজনীতি) করব কখন।’ ছেলেকে একনজর দেখার জন্য গারদের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে বারবার ছুটে যাচ্ছেন তাসলিমা। হাতজোড় করে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ নিরুপায়। ফলে তাকে ফিরে আসতে হয় বারবার। গারদের সামনেই কথা হয় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনিও এসেছেন তার ছেলেকে একনজর
দেখতে। নাম সজিব আহমেদ। মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র সজিব রাজনীতিতে জড়িত নয় বলে দাবি তার। জলিল বলেন, রোববার রাত ১০টায় ভাষানটেক থানা পুলিশ তার ছেলেকে ধরে আনে। পরে বিএনপির গাড়ি পোড়ানো পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়া হয়। বন্ধুর গ্রেফতারের খবরে উদ্বিগ্ন সজিবের দুই বন্ধু জুনায়েত ও রিয়াজ ছুটে আসেন আদালত চত্বরে। তারা বলেন, সজিব নিজে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নয়। তবে তার বাবা বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যায় বলে তারা শুনেছেন। আংকেলকে না পেয়ে সজিবকে ধরে এনেছে পুলিশ। বেলা সোয়া ২টা। পুরোনো ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় কথা বলছেন কয়েকজন। একজন বলছেন, সাংবাদিকরা তো এখন সত্য কথা লেখে না। কারণ লিখলেই তো ডিজিটাল
আইনে মামলা দেবে সরকার। তাদের এমন কথাবার্তা শুনে সেদিকে এগিয়ে যান প্রতিবেদক। জানতে চাওয়া হয়-কী এমন খবর, যা সাংবাদিকরা লিখবেন না-এতে থতমত খেয়ে যান একজন। তাদের সঙ্গে আলাপের পর জানা গেল চলমান গণগ্রেফতার অভিযানে তাদের এক স্বজনকে ধরেছে পুলিশ। তার নাম নিয়ামত উল্লাহ। রোববার আজিমপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানা পুলিশ। আদালত চত্বরে অপেক্ষমাণ নিয়ামত উল্লাহর স্ত্রী মরিয়ম সুলতানা বলেন, তার স্বামী পেশায় হোমিও চিকিৎসক। পাশাপাশি মিরপুরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করেন। জীবনে কখনো রাজনীতির আশপাশ দিয়েও যাননি। অথচ পুলিশ তাকে জামায়াত কর্মী বলে গ্রেফতার করেছে। পরে পেন্ডিং মামলায় চালান দেওয়া হয়। আদালত চত্বরে অপেক্ষমাণ নিয়ামত উল্লাহর দুই
ঘনিষ্ঠ সহকর্মীর একজন বলেন, ‘আমি এক সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখিনি। যে লোকজন রাজনীতির আশপাশে নেই তাকে ধরে জামায়াত বলে চালান দেওয়া তো গুরুতর অপরাধ। অপরজন বলেন, ‘আমরা সারারাত থানা পুলিশের সঙ্গে দেনদরবার করেছি। কিন্তু ওসির একটাই কথা। ওপরের পর্যায়ে কথা বলতে হবে। তা না হলে আসামি ছাড়া যাবে না। তারা জানান, নিয়ামত উল্লাহ অসুস্থ। কিন্তু রাতে তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া যায়নি। সকালে থানায় গিয়ে শুধু পাউরুটি কলা কিনে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এক বোতল পানিও তারা পৌঁছাতে পারছেন না। আদালত চত্বরে ভিড়ের মধ্যে হাঁটলে নানা কথাবার্তা কানে আসে। সোমবার দুপুরে হাজতখানার পাশ দিয়ে যেতেই
এক ভুক্তভোগীর ফোনালাপ শোনা যায়। তিনি কাকে যেন বলছেন, ‘গারদে খাওন দিছি এইমাত্র। ৩শ ট্যাকা নিছে পুলিশে। আর কিছুক্ষণ থাকুম এখানে। বাইর হইলে দেখা কইরা তারপর যামু।’ এর কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আরেকজন কথা বলছেন ফোনে। কাকে যেন তিনি বলছেন, ‘না না গারদে সবাইরে ঢুকতে দিব না। একজনরে দিব কইছে। তয় ট্যাক্যা লাগব দেড় হাজার। পাঁচ মিনিট কথা কইতে দিব। এর বেশি না।’ এ সময় গারদের (হাজতখানা) গেটে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনকে এদিক-ওদিক ঘুরতে দেখা যায়। কেউ বা আকস্মিক ঢুকে পড়ছেন পাশের অস্থায়ী খাবার হোটেলে। বেলা ৩টা। নতুন ভবনের দোতলায় হাজতখানার সামনে শতাধিক নারী-পুরুষের জটলা। আইনজীবীদের ছোটাছুটি। হইচই চিৎকার। শিশুদের কান্না। এক
অবর্ণনীয় দুর্ভোগের পরিবেশ। ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা পুলিশের। কিছুক্ষণ পরপরই বাজছে হুইসেল। সেখান থেকে কিছুটা দূরে মেঝেতে খবরের কাগজ বিছিয়ে বসেছেন কয়েকজন নারী। তাদের ৪-৫ জনের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু। গৃহবধূ লতার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে ৫ বছরের শিশু তাওহিদ। পুলিশের হাতে গ্রেফতার স্বামী মোমিনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী-প্রশ্ন করতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন লতা। বলেন, কারাগার তো দূরে থাকা জীবনে কোনোদিন তিনি থানা চত্বরেও জাননি। কিন্তু স্বামীকে পুলিশে ধরার পর অসংখ্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। উকিল, থানা পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা সবার কাছে গেছেন। কিন্তু স্বামীকে মুক্ত করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। বসে থাকা আরেক নারীর স্বামী
সানাউল্লাহকে কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই তিনিও হন্যে হয়ে ঘুরছেন আদালত চত্বরে। স্বামীকে কেন ধরেছে প্রশ্ন করা হলে পিংকি নামের এক ভুক্তভোগী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘পুলিশের ধরতে কি কারণ লাগে। যারে মন চায় তারে ধরব। জামায়াত-বিএনপি বানাইব।’ তার স্বামী আসিক হোসেন বাবুকেও বিনা কারণে আশুলিয়া থেকে ধরে এনেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে তিনটা। হঠাৎ সেখানে হাজির হন আদালত চত্বরে দায়িত্বরত পুলিশের এসআই জুলফিকার। সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে দেখে ভুক্তভোগীদের হটিয়ে দেন তিনি। বলেন, এখানে মনে হচ্ছে বাজার বসেছে। নেমে যান এখান থেকে। বাইরে গিয়ে বলেন যা বলার। ফলে ভিড় ভেঙে যায়। সবাই হুড়মুড়িয়ে নামতে শুরু করেন সিঁড়ি দিয়ে।