বদলে যাচ্ছে জীবন-জীবিকা – U.S. Bangla News




বদলে যাচ্ছে জীবন-জীবিকা

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ | ৬:২০
রংপুর বিভাগের আট জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা, ইছামতি, টেপা, করতোয়া, মহানন্দা, তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট ও ধরলাসহ অন্তত ৪৫টি নদনদীর পানি শুকিয়ে গেছে। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর। এর প্রভাব পড়েছে নদীর ওপর নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকায়। হাজার হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পানি না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন নদীর পাঁচ শতাধিক ঘাট। ফলে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মাঝিরাও বেকার হয়ে পড়েছে। নৌপথ বন্ধ থাকায় যাতায়াতে তীব্র ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বাসিন্দারা। এসব এলাকায় পণ্য পরিবহণের খরচও বেড়ে গেছে। কর্মহীন মাঝি ও জেলেরা জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ ছুটছেন শহরে, কেউবা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে কোনোভাবে সংসার

চালাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উজানের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার, নদীতে পলি জমা ও ড্রেজিং না করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছরই ডিসেম্বর থেকে উত্তরের নদনদীতে নাব্যতা কমতে থাকে। এমনকি তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টেও চর জেগে ওঠে। যতদিন বৃষ্টির দেখা নেই, ততদিন এ অবস্থা বিরাজ করে। এপ্রিল-মেতে বৃষ্টি হলে নদনদীগুলোয় ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে। রংপুরের তিস্তা ঘিরে রয়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন। এসব এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দা নজের উদ্দিন জানান, এ ইউনিয়নে নদীর প্রায় ৯০ ভাগ চরে পরিণত হয়েছে। যারা আগে নদীতে নৌকা চালিয়ে এবং মাছ ধরে সংসার চালাতেন, তারা এখন নিরুপায়। নদীতে মাছ নেই। নৌকাও চালানো যাচ্ছে

না। অনেকে পুরোনো পেশা বদল করে রিকশা-ভ্যান চালাচ্ছেন। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে শহরে চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, নদীর বুকে চর জেগে ওঠার আগে যেসব নৌপথ ছিল, সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এক গ্রামের মানুষকে অন্য গ্রামে যেতে হচ্ছে মাইলের পর মাইল হেঁটে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ২৫ নদনদীতে ঘাট আছে ২০০টি। নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে-ধরলা, তিস্তা, সতী, রতনাই, স্বর্ণামতী, বটেশ্বরী, সিংগীমারী, বুড়ি তিস্তা মালদাহা ও গিদারী। প্রতিবছর এসব ঘাট ইজারা দেওয়া হয়। এখান থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব স্থানীয় উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হয়। প্রতিটি ঘাটে মাঝি আছেন ৬ থেকে ১৫ জন। এখন নদীতে পানি নেই।

তাই ঘাটগুলোর গুরুত্ব কমে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি ঘাট চালু আছে। বাকিগুলো বন্ধ থাকায় মাঝিরা কর্মহীন। এ কারণে প্রায় ২ হাজার পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে। এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কম খরচে নৌকায় পণ্য পরিবহণ করতে পারতেন। নৌপথ বন্ধ থাকায় বেশি খরচ করে ঘোড়ার গাড়ি অথবা অন্য উপায়ে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। এতে চরাঞ্চলে পণ্যের দামও বেড়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে জেলে পরিবার আছে ২৫ হাজার। গড়ে প্রত্যেক পরিবারে সদস্য আছে পাঁচ থেকে সাতজন। নদনদীতে পানি না থাকায় মাছ নেই। জেলেরা কর্মহীন। অনেকে পেশা ছেড়ে দিনমজুরের কাজ করছেন। রাজারহাট গতিয়াশ্যাম ঘাটের মাঝি মকবুল হোসেন বলেন, নদীতে পানি

না থাকায় নৌকা চালানো যাচ্ছে না। ঘাট বন্ধ। এই ঘাটের ১০ জন মাঝির অনেকেই শহরে কাজ করছেন। কাঠালবাড়ীর ধরলার কাউয়াহাগা ঘাটের মাঝি আলিম উদ্দিন বলেন, নদীতে চর জেগে ওঠায় এখন নৌকা চালাতে হচ্ছে অনেক নদীপথ ঘুরে। এতে সময় বেশি লাগছে, তাই ঘাটে লোকজন আসে না। আমাদের আয়ও কমে গেছে। উলিপুর উপজেলার হাতিয়া দাসপাড়া গ্রামের জেলে রবিন চন্দ্র মাঝি বলেন, নদী এখন মরে গেছে। মাছও পাওয়া যায় না। বড় কষ্টে আছি। দিনাজপুরের ইছামতি নদীর অস্তিত্ব প্রায় হারিয়ে গেছে। এ জেলার টাঙ্গন, শুক, কলিগ, নাগর নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে। এসব নদীতে ক্রমাগত চর জেগে উঠছে। চরে স্থানীয়রা চাষাবাদ করছেন। পঞ্চগড়ের করতোয়া ও মহানন্দার নাব্যতা কমে গেছে।

করতোয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় চর জেগে উঠেছে। দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ শতাধিক ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে প্রায় দুই হাজার মাঝি পরিবার ও চার হাজার জেলে পরিবার সংকটে পড়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুক্তাদির খান বলেন, কয়েক বছর ধরে জেলেরা কাজের সংকটে ভুগছেন। পলি জমায় শুষ্ক মৌসুমে নদনদীতে পানি থাকছে না। জেলেরা ছোটবেলা থেকে জাল দিয়ে মাছ ধরতে অভ্যস্ত। হঠাৎ পেশা বদল করেও তারা ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চল রংপুরের প্রধান প্রকৌশলী মাবুবুর রহমান জানান, নদনদীগুলো নিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এসব নদনদীতে ড্রেজিংয়ের

মাধ্যমে চরের পলি অপসারণর করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। এজন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, জরিপ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ চলছে। এ বিষয়ে রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক নদী গবেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ভারত থেকে যে পরিমাণ পানি বাংলাদেশে আসে, এর মধ্যে ৭০ ভাগ আসে রংপুর বিভাগের নদনদীগুলো দিয়ে। বর্তমানে এসব নদনদীর অবস্থা খুবই করুণ। বিলুপ্তির পথে শতাধিক। নদীগুলো হারিয়ে গেলে কৃষি অর্থনীতি ও জীববৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ অঞ্চলের মানুষ চরম সংকটে পড়বে। তাই নদীগুলো বাঁচাতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আগে জনগণকে ধারণ করত আ.লীগ, এখন ঘাড়ে চেপে বসেছে: জিএম কাদের ভারতে গিয়ে নিখোঁজ এমপি আনার, খুঁজে পেতে ডিবিতে মেয়ে ভোটে জিতলে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা কঙ্গনার রাজধানীতে পুলিশ-অটোরিকশা চালকদের সংঘর্ষ কিরগিজস্তানে কোনো বাংলাদেশি ছাত্রের গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডিপজল-মিশার বিরুদ্ধে নিপুণের রিটের শুনানি পেছাল সামান্য পয়সা বাঁচাতে দেশের সর্বনাশ করবেন না: উদ্যোক্তাদের প্রধানমন্ত্রী বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ ভারতে গিয়ে নিখোঁজ এমপি আনার! বিএনপি নেতা ইশরাক কারাগারে চাকরির পেছনে না ছুটে, চাকরি দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন: প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে ব্রেকফেল করে ট্রাক খাদে, একই পরিবারের ১৪ জন নিহত ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী পদ হারানোর জন্য যাকে দায়ী করলেন নওয়াজ শরিফ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কারা খেলবে, ভবিষ্যদ্বাণী কাইফের মাশরাফির বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ চাহিদা অনুযায়ী যোগ করছি নতুন প্রযুক্তি গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় নিহত ১২১ ফিলিস্তিনি ৭ উদ্যোক্তার হাতে জাতীয় এসএমই পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ডান-বাম-ইসলামপন্থি সব দল নিয়ে পথ চলতে চায় বিএনপি