পরিকল্পনায় নেই দূরদৃষ্টি কাজে আসছে না প্রকল্প – U.S. Bangla News




পরিকল্পনায় নেই দূরদৃষ্টি কাজে আসছে না প্রকল্প

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২৮ মে, ২০২৩ | ৬:৩৯
রেলের উন্নয়নের জন্য বহু প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এর বড় অংশ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ব্যয়ও হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। এতে চেহারায় কিছু বদল এসেছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তিমিরেই রয়ে গেছে রেল। এসব প্রকল্পের সুফল যেমন কার্যকরভাবে মেলেনি, তেমনি ব্যয় বিচারে বাড়েনি সেবা। বরং কিছু ক্ষেত্রে আরও কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত এসব প্রকল্প গ্রহণে সুদূরপ্রসারী চিন্তা না করা অর্থাৎ যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অকল্পনীয় ঢিলেমির কারণেই সবকিছু প্রত্যাশার মধ্যেই থেকে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়ছে সময়, বাড়ছে ব্যয়। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সরকার ও যাত্রীদের। অনেক অর্থ ব্যয়ের পরও সরকারকে বাতিল করতে হচ্ছে কোনো কোনো প্রকল্প।

অথচ একটি ‘চক্র’ একের পর এক প্রকল্প গ্রহণ করেই যাচ্ছে। মূলত নানাভাবে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্যই এসব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব, প্রয়োজন বা অগ্রাধিকার বিবেচনা করা হচ্ছে না। দেশের দীর্ঘতম রেলরুট ঢাকা-পঞ্চগড়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ পথে যাত্রীবাহী তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এক মাসে এসব ট্রেনের একটিও যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছায়নি। আধা ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে পৌঁছেছে। এ রুটের পার্বতীপুর হয়ে কুড়িগ্রাম ও চিলাহাটি পর্যন্ত, সান্তাহার হয়ে লালমনিরহাট পর্যন্ত বা বগুড়া ও রংপুর পর্যন্ত, ঈশ্বরদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনা পর্যন্ত আরও ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন চলে। এসব ট্রেনও গত এক মাসে ঠিক সময়ে চলতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মূল কারণ

এ পথে ডাবল লাইন না থাকা। অথচ প্রায় ৯ বছর আগে নেওয়া ‘জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প’ এখন ‘স্থগিত’। বাকি পথটুকুর কথা কারও চিন্তাতেই নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের নভেম্বরে বগুড়া সফরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে বগুড়া পর্যন্ত নতুন ৭০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়, ২০২০-এ এটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত অগ্রগতি শূন্য। অথচ এ লাইনটি নির্মাণ হলে ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-লালমনিরহাট বা ঢাকা-বগুড়া পথে দূরত্ব কমবে প্রায় পৌনে ২০০ কিলোমিটার। রেলওয়ের পরিকল্পনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-লাকসাম কর্ডলাইন ৫৩ বছরেও হয়নি। এ পথে বর্তমানে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা

সময় লাগে। কর্ডলাইনে লাগবে মাত্র ২ ঘণ্টা। এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী না হয়ে ২০১৬-১৭ সালে টঙ্গী থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মিটারগেজ রেললাইন স্থাপন করে রেল। এতে খরচ হয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। ওই কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইন, ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। ফলে কয়েক বছর আগে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে মিটারগেজ লাইন তৈরি করা হলো তা ভেঙে ফেলতে হবে। এজন্য প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা জলে যাবে। এ পথে আবারও প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে রেলওয়ে। কিন্তু ৫৩ বছর আগে এ রুটে কর্ডলাইন (ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন) নির্মাণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল

তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মাত্র ২ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল সম্ভব হতো। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকিট্রক ট্র্যাকশনের মাধ্যমে হাইস্পিড লাইন নির্মাণ প্রকল্প সমীক্ষায় সরকারের ১১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ঢাকা থেকে মাত্র ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে-দেশবাসীকে এমন স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। যা অধরাই রয়ে গেল। ২০১৭ সালে নেওয়া এ প্রকল্প সমীক্ষায় সংশ্লিষ্টরা ২০২০ সালে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাই পরির্বতন করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। এতে সমীক্ষা ব্যয় দ্বিগুণের বেশি লাগবে এবং মূল প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সমীক্ষায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয় হলেও প্রকল্পটি

আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, রেলে বর্তমানে ৩২টি উন্নয়ন প্রকল্প চালু রয়েছে। এরমধ্যে ৪টি সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কোনটি ১ যুগ ধরে চলছিল। ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিসহ বাতিল প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে-এমনটা ট্রেনযাত্রীরা প্রত্যাশা করছেন। ২০১১ সালে নেওয়া ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পটি ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পিএসসি সভায় প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রকল্পে প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে সরকারের। ২০১৯ সালে নেওয়া ‘২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ন’ প্রকল্পটি গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পিএসসি সভায় বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালে নেওয়া ‘গোবরা হতে পিরোজপুর পর্যন্ত

ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ’ নামক প্রকল্পটিও বাতিল করা হয়েছে। একই বছরে নেওয়া ‘রেলওয়ে রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন প্রকল্প’টি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। রেলে শুধু অপরিকল্পতি প্রকল্প গ্রহণ নয়, অতিরিক্ত ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণেও এগিয়ে আছে। ‘আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণ’ ও ‘জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প।’ আখাউড়া-সিলেট মিশ্র গেজ রেললাইন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। আর জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী মিশ্র গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যয়ের বিষয়টি তদন্ত করা হয়। এতে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি চিহ্নিত হয়।

এ কারণে দুই প্রকল্প থেকে ৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে এ দুটি প্রকল্প স্থগিত। এদিকে বাস্তবতা না বুঝে এসব প্রকল্প কেন নেওয়া হলো এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই মন্ত্রণালয় বা রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে। জানতে চাইলে রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তরের ঊর্র্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সরকার রেলে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। বরাদ্দ বাড়াচ্ছে প্রতিবছরই। কিন্তু, কিছু প্রকল্প একেবারেই অপরিকল্পিত, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়াই নিতে হচ্ছে। কারণ, এসব প্রকল্পে রাজনৈতিক চাপ, ভোটের রাজনীতি এবং অবৈধভাবে টাকা কামানোর একটি পরিকল্পনা থাকে। ফলে রেলসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যুক্তি উপেক্ষা করেই রাজনৈতিক চাপ, মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের কারণেই দুর্বল প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক জানান, প্রকল্প গ্রহণ, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রকল্প যেন কারও পকেট ভারী না হয়। নামকাওয়াস্তে প্রকল্প গ্রহণ-সমীক্ষায় ‘লাভবানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা’ বেশ খুশি। রেলে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে-সেগুলোর অনেকটি প্রকৃত উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই রেলে। রেলে আমূল পরিবর্তন আনতে কর্ডলাইন, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের কোনো বিকল্প নেই। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বর্তমান সরকার রেলে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। আমরা লক্ষ্য করছি কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাতিল/স্থগিত করা হয়েছে। এতে নিশ্চয় সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্ষতি হয়েছে। আমরা এখন দেখছি, কোনো অবস্থাতেই যেন অপরিকল্পিত কোনো প্রকল্প গ্রহণ কিংবা সমীক্ষা না করা হয়। সরকার রেলে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। সুদূরপ্রসারী প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়নে রেলে আমূল পরিবর্তন আসবে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
‘বজ্রমেঘ’ তৈরি হলেই বৃষ্টির সম্ভাবনা শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাগ্য নির্ধারণের কাঠগড়ায় ভারতের বিশেষ ৫ দল সিরিয়ার দক্ষিণে সামরিক ঘাঁটিতে ইসরাইলের হামলা পাকিস্তানে ৫ জাপানিকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা দেশব্যাপী ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার চেষ্টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে: কাতার ইরানে ইসরাইলের হামলা, শেষ মুহূর্তে জেনেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতানিয়াহুকে গ্রেফতার করবে আইসিসি? ইসরাইল কি আরও হামলার পরিকল্পনা করছে? বিশ্লেষণ: ইরানে হামলার পর দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ এখন প্রকাশ্যে শ্যালক রুবেলকে ফোন করে যে নির্দেশ দিলেন প্রতিমন্ত্রী পলক দেশের যত অপরাধ তার সবই করে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী ইরানের বিরুদ্ধে ইসরাইলের হামলা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের হামলায় ইরানে বিমান চলাচল বন্ধ, ইরাকে ব্যাপক বিস্ফোরণ চলে গেলেন প্রথম পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ ইসরাইলের পাল্টা হামলার ড্রোনকে আকাশেই ধ্বংস করল ইরান কেনিয়ায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে সামরিক বাহিনীর প্রধানসহ নিহত ১০ ডিপজলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন সাদিয়া মির্জা ইসরাইলের পাল্টা হামলার বিষয়ে যা বলল ইরান