দেশজুড়ে লোডশেডিং আরও বাড়বে – U.S. Bangla News




দেশজুড়ে লোডশেডিং আরও বাড়বে

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ | ৯:১০
একদিকে তীব্র গরম অপরদিকে দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ে মানুষের যন্ত্রণা চরম আকার ধারণ করেছে। বেশি ভুগছে গ্রামের মানুষ। গরম এভাবে চলতে থাকলে লোডশেডিং আরো বাড়বে। পাশাপাশি বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বলছে, সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১৭ থেকে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা আরো বাড়তে পারে। তাতে লোডশেডিংও আরো বাড়বে। এদিকে বর্তমান চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ উৎপাদন গড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ফলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। এই বিপুল ঘাটতি সরকার জেলা ও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করে সমাধানের চেষ্টা করছে। এতে ঢাকার বাইরে কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায়

কোথাও কোথাও ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গরম আর লোডশেডিংয়ে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। জ্বালানি সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় এই লোডশেডিং বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার বাসিন্দা হামদান মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ঈদের পর থেকে দিনে-রাতে চার পাঁচ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করলেও সবচেয়ে মারাত্মক অবস্থা রাত ১২টার পর থেকে। তখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং হয়। প্রতিবারে প্রায় এক ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসে। বিদ্যুৎ না থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হয় ছোট শিশু ও বয়স্কদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের কাকলী বেগম অভিযোগ করে বলেন, তাদের এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেশি। বিদ্যুৎ

এসে মাত্র আধা ঘণ্টা থাকে। বিদ্যুৎ আসে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা পর। ময়মনসিংহ এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, কোথাও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম, তার সঙ্গে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিন দিন বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিস্থিতি খুব খারাপ হচ্ছে। তাদের এলাকায় ১০২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে ৮৫০ মেগাওয়াট। গরম বাড়লে সামনের দিনগুলোতে আরও খারাপ হওয়ার শঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জ্বালানির অভাবে বা আমদানি করতে না পারায় গত দুই বছর গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। শহরের দুই থেকে তিন ঘণ্টার লোডশেডিং হলেও গ্রামে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিংয়ের অভিযোগ ছিল গ্রাহকদের।

এবারো তেমন পরিস্থিতি হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর গরমে চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলন রয়েছে। জ্বালানি তথা তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ না বাড়ালে তখন লোডশেডিংজনিত সংকট আরও বাড়বে। পাওয়ার সেলের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার ৬৭ মেগাওয়াট। পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, চাহিদার চেয়ে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো যাচ্ছে না। এতে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দৈনিক অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে সক্ষমতার অর্ধেকও উৎপাদন হচ্ছে

না। পিডিবি জানিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারার প্রধান কারণ, তাদের হাতে অর্থ নেই। সংস্থাটির কাছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি, বেসরকারি ও দেশি-বিদেশি যৌথ কোম্পানির পাওনা ৩৭ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। আর পেট্রোবাংলার অধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর পাওনা ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ডলার-সংকটের কারণে এই পাওনা পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি। কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার-সংকট মোকাবিলা করতে না পারলে চলতি গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ নিয়ে অস্বস্তিতে থাকবে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। টাকা পাওয়া গেলে এই গ্রীষ্মে বিদ্যুতের সংকট হবে

না।’ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রেন্টাল ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারের (আইপিপি) মালিকেরা পিডিবির কাছে পাবে ১৫ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। দেশের অভ্যন্তরে থাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পাবে ৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পাবে ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। আর দেশের সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে পাবে ৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভারত থেকে পিডিবি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে বিদ্যুৎ আমদানি করে, সেখানেও ১ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ভারতের শিল্পগ্রুপ আদানির ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, আদানির টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায়

তারা একটি ইউনিট বন্ধ রেখেছিল। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের দৌড়াদৌড়ির কারণে শেষ পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড় করা গেছে। আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ আবার ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট দেওয়া শুরু করেছে। পিডিবির কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে দেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পিডিবির কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। এই কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের সমান মালিকানা রয়েছে। কেন্দ্রটির জ্বালানি ও বিদ্যুতের বিল বকেয়া আছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। গত ৯ মাস কেন্দ্রটিকে সেই বিল পরিশোধ করতে পারেনি পিডিবি। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের

(বিসিপিসিএল) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রটির অর্ধেক মালিক সিএমসি নিজের টাকায় কয়লা কিনে কেন্দ্রটিকে দিয়ে থাকে, সেই কয়লার অর্থ ৬ মাস পরে দেওয়া যায়। নির্ধারিত ওই ছয় মাসও শেষ হয়েছে আরও তিন মাস আগে। কিন্তু টাকা পায়নি সিএমসি। ফলে কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। উত্তরবঙ্গের বড় ভরসা পিডিবির বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫২৫ মেগাওয়াটের তিনটি ইউনিট। ১২৫ মেগাওয়াট একটি ইউনিটের সংস্কারকাজ চলছে, বাকি দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে কয়লার অভাবে। এই গ্রীষ্মে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসা বন্ধ হলে গোটা উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে, এমনকি কৃষি উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি

বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম, সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে ঠিকই, কিন্তু বিদ্যুৎ দিতে পারবে না। কারণ, প্রতিযোগিতা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, এর ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। এসব অর্থ পরিশোধের ক্ষমতা পিডিবির নেই। এখন কেন্দ্র বসে থাকবে, সেই বসে থাকা কেন্দ্রের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে। কিন্তু মানুষ গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাবে না।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বৃষ্টির পর খেলা শুরু নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে নদীতে জেলেরা বাকস্বাধীনতা অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন নাভালনির স্ত্রী ‘টাকা দিলে চাকরি থাকে, না দিলেই চাকরিচ্যুতি’ বাংলাদেশকে ১২৫ রানের টার্গেট দিল জিম্বাবুয়ে জেল থেকে বেরিয়েই যে হুংকার দিলেন মামুনুল হক যুক্তরাষ্ট্রের দাবি প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার, ইউক্রেনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়নি ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি, ৩ জনকে বরখাস্ত শ্লীলতাহানির অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল বাংলাদেশে বিএনপি আর কোন ক্ষমতায় যেতে পারবে না:নিউইয়র্কে বিপ্লব বডুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দেবে ইসরাইল রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নারীকর্মীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, বিজেপি শিবিরে ধাক্কা সংগঠন গোছাতে পারেনি আ.লীগের শরিকরা মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন কাদের ভারতকে টপকে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ কত? যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গ্রেফতার ২ হাজার বিক্ষোভকারী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে যে শর্ত দিল সৌদি সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে: ইসি রাশেদা মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে নেপাল মালদ্বীপ শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের নিচে বাংলাদেশ সাংবাদিককে হুমকি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়: মিলার