গদখালির ফুলচাষিরা এখন ভীষণ ব্যস্ত – U.S. Bangla News




গদখালির ফুলচাষিরা এখন ভীষণ ব্যস্ত

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ | ৮:৩১
ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালির ফুলচাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আসন্ন বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অঞ্চলের ফুলচাষীরা। অনুকূল আবহাওয়া ও বাজার পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ বছরে তাদের বেচাকেনা ৮০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষীরা ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রয়োজনমাফিক পানি দেয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলবার ফুসরত নেই। পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালি ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও

হাজির হচ্ছেন সেখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত। ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একই সাথে বেশি দাম পাওযায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, গত কয়েক বছর বিভিন্ন কারনে এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে

দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা। গতবছর বসন্ত উৎসব, ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছিল। এর আগের দু’বছর চাষীরা কোনো ফুলই বিক্রি করতে পারেনি। এ বছর আবহাওয়া ভাল হওয়ায় ফুল চাষের জমি যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও হয়েছে ভাল। একইসাথে বাজার পরিস্থিতি ভাল হওয়ায় আশা করা হচ্ছে, গত বছরের বেচাকেনা এবার ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৭ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন। তারা অন্তত ৭ শতাধিক হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে

ফুল চাষ হয়ে থাকে। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। ডিসেম্বরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস থেকে শুরু ফেব্রুয়ারিতে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস এবং মার্চে স্বাধীনতা দিবস ও পরে পহেলা বৈশাখ দিয়ে গোটা মৌসুম জুড়ে ফুল বিক্রি হয়। গদখালী ফুলবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসন্ত ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৭-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ১৫-২০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৬-৯ টাকা, গ্লাডিওলাস ফুল রঙ ভেদে ৬-১৩ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা ৩ থেকে ৪ টাকায়, গাঁদা প্রতি

হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পানিসারা গ্রামের ফুলচাষী হাবিবুর রহমান জানালেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভাল হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভাল বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুলচাষীরা খুশি। ফুলচাষী ও বিক্রেতা মোমিনুর রহমান জানালেন, এখন যে দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে, তা কয়েকদিন পরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসছেন। ফলে বসন্ত দিবস ও ভালবাসা দিবসে ভাল দাম পাবেন ফুলচাষীরা। ফুলক্ষেতে পরিচর্যা করতে করতে চাষী গোলাম রসুল জানালেন, এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে ক্ষেত পরিচর্যা করে ফুল

ধরে রেখে বাজারে তুলতে হবে। ফুলের মান ভাল থাকলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। যশোরের ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভাল হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এদিকে ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দাম ভালো পাওয়ায় গত কয়েক বছরের হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখছেন তারা। এজন্য সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ফুল পরিবহনেও সরকারি সহযোগীতা পেয়েছেন তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের

দেয়া তথ্য মতে এ বছর জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ৮৭ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার ত্রিলোচনপুর গ্রামের মাঠ গিয়ে দেখা যায় মাঠভর্তি বাগানে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল। সেই ফুলের বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগানীরা। কৃষকরা জানায়, আসছে বসস্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ছাড়াও ২১ শে ফেব্ররুয়ারীর কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে তাদের। কেউ করছে আগাছা দমন আবার কেউ করছেন কীটনাশক স্প্রে। ত্রিলোচনপুর গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন বলেন, আসছে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস আর সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকবে। সেই চাহিদা মেটাতে দিনরাত পরিশ্রম করছি আমরা। দিবস গুলোতে

ভালো দাম পাওয়ায় সারা বছরের লাভ-লোকসানের হিসাব মেলানো হয়। তাই ফুলের ফলন ভালো পেতে মাঠে কাজ করছি আমরা। বালিয়াডাঙ্গার রাজ্জাক আলী নামের এক ফুলচাষী বলেন, বাজার ধরার জন্য ফুলে সার ঔষুধ দিচ্ছি। ফুলটা যেন ভালো থাকে এই জন্য কাজ করছি। ফুলের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য ৩ দিন পর পর ওষুধ স্প্রে করছি। সেচ ও সার দিচ্ছি। বাজারে যেন দাম বেশি পাই এই জন্য পরিচর্যা করছি। আব্দুল আজিজ নামের এক বাগানী বলেন, গত ২ বছর আমরা ফুলের দাম পাইনি। আমাদের অনেক লোকসান হইছে। আসছে ফেব্ররুয়ারীর মাসে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসসহ এই মাসের যে ৩টা অকেশন আছে এই সময় যদি আমরা ফুলটা ভালোভাবে বেচতে

পারি তাহলে লোকসান একটু কমাতে পারব। সরকারের প্রতি আকুল আবেদন এই সময় যেন বাজার ব্যবস্থাপনা আর ফুল পাঠানোর জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা যেন একটু ভালো করে। তাহলে আমরা লাভবান হতে পারব। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, ফুলচাষে কৃষকদের ভালো ফলন পেতে আমরা তাদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এছাড়াও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তাদের নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। তিনি আরো বলেন ফুল চাষ বাড়াতে কৃষক ভাইদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ঘরোয়া যে পদ্ধতিতে খুব সহজেই ঘর ঠান্ডা থাকবে কত টাকা দরে কেনা হবে ধান চাল, জানালেন মন্ত্রী ভোটে কে এলো, কে এলো না এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয় না: সিইসি রাশিয়াকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করল জার্মানি নিজের গোপন কীর্তি ফাঁস করলেন কাজল রাফায় প্রবেশ করেছে ইসরাইলি ট্যাংক যে কারণে বেরোবির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান হতে চাচ্ছেন না কেউ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস, দিয়েছে যেসব শর্তে ‘ডামি ও প্রতারণার’ উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যাবে না: রিজভী ফের রাফায় স্থল অভিযান ইসরাইলের, নেতানিয়াহুকে কঠোর হুশিয়ারি বাইডেনের ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মালয়েশিয়া ছাড়তে বললেন মাহাথির নতুন র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষে ব্রাজিল, বাংলাদেশের অবস্থান… ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণকালে মধ্যরাতে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আটক ১১ সব নারী সাধু না, নারীবাদী সাজার ভান করে: রিচা চাড্ডা যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হামাস, যে বার্তা দিলেন এরদোগান এমন বাজেট কেন বারবার বাড়তি ফোর্স চায় স্থানীয় প্রশাসন দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের তোড়জোড় বিদেশিদের সঙ্গে সক্ষমতা দেখাচ্ছেন দেশের প্রকৌশলীরাও যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সম্মতির জবাবে যা জানাল ইসরাইল