সাড়ে ৭ কোটি টাকার অঙ্ক মিলছে না – U.S. Bangla News




ডিবি পরিচয়ে সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই

সাড়ে ৭ কোটি টাকার অঙ্ক মিলছে না

রহস্য উদ্ঘাটনে তিন সদস্যের কমিটি গঠন * নিরাপত্তা ছাড়া টাকা বহনের সময় রহস্যঘেরা গাড়ি নষ্টের গল্প * জড়িত আরও কয়েকজন আটক, নতুন করে আরও টাকা উদ্ধারের দাবি

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ১২ মার্চ, ২০২৩ | ৭:৩৪
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে সরবরাহের জন্য বহন করা সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের পর ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল ডিবি পুলিশ। কিন্তু ঘটনার পর সময় যত গড়ায়, টাকার অঙ্ক যেন ততই কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত টাকা উদ্ধার দেখানো হয় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার। মামলার এজাহারেও টাকার এই অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা তাহলে কোথায় গেল-সেই প্রশ্নের জবাব মিলছে না। পুলিশের উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও এখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ফলে এ নিয়ে খোদ পুলিশ প্রশাসনেই চলছে নানা কানাঘুষা। এদিকে নিরাপত্তা ছাড়া টাকা বহনের সময় রহস্যঘেরা গাড়ি নষ্টের গল্পেরও ডালপালা পাখা মেলছে। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত আরও

কয়েকজনকে আটক করে তাদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে টাকার হিসাব মেলাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুজ্জামানকে। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা পেপার ওয়ার্ক শুরু করেছি। ছিনতাইয়ের ঘটনার পর টাকা উদ্ধারের অঙ্কে গরমিল এবং এসব নিয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোসহ সবদিক নিয়ে আমরা কাজ করব। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারব।’ গত বৃহস্পতিবার সকালে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথে সরবরাহের জন্য ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড। মিরপুর ডিওএইচএস

এলাকায় অবস্থিত ঠিকাদারের গুদাম থেকে টাকা নিয়ে ওইদিন সকালে একযোগে বের হয় তিনটি গাড়ি। তিন গাড়ির মধ্যে একটিতে পাহারায় ছিলেন সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী। হঠাৎ তিন গাড়ির একটি বিকল হয়ে যায় দিয়াবাড়ীর নিরিবিলি এলাকায়। তখন যে গাড়িতে সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন, ওই গাড়িটিও বিকল গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই টাকা বহনকারী আরেকটি গাড়ি চলতে থাকে। উত্তরা এলাকায় পৌঁছালে অপর একটি কালো গাড়িতে করে আগতরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে টাকা বহনকারীদের মারধর শুরু করে। ছিনতাইকারী দলটি ছিল নিরস্ত্র। অথচ কোন বাধা ছাড়াই টাকার ট্রাংক লুটে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় তারা। কয়েক মিনিটে ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ওই ঘটনা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। এরপর

দৃশ্যপটে আলোচনায় নাটকীয় পুলিশি অভিযান। সকালে ছিনতাইয়ের ঘটনার পর সন্ধ্যায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানায় ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে ডাকাতিতে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতারের কথাও জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের ৯ কোটি টাকারও বেশি উদ্ধারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ট্রাংকগুলো থানায় হস্তান্তরের পর টাকা পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার। টাকার অঙ্কের গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তসংশ্লিষ্ট কেউই মুখ খুলতে নারাজ। এদিকে গরমিল শুধু টাকার ক্ষেত্রেই ঘটেছে, তা-ই নয়। বহন করা টাকার পরিমাণ নিয়েও আছে রহস্য। টাকা পরিবহণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড জানায়, ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ ১১ কোটি ২৫

লাখ। আর ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা বিভিন্ন বুথে সরবরাহের জন্য ব্যাংক থেকে তুলে নেয়। শনিবার সারা দিন বিভিন্ন সূত্রে খোঁজখবর নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। টাকার অঙ্কে গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ শনিবার বলেন, ‘আমি ধারণা থেকে টাকার অঙ্ক ৯ কোটি উল্লেখ করেছিলান। তবে থানা পুলিশ প্রকাশ্যে সবার উপস্থিতিতে গুনে যেটা পেয়েছে, সেটাই ঠিক।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি ট্রাংকের সাইডে কাটা ছিল তা ঠিক। সেটা ডাকাতদের কাজ হতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিবির একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করছে। আটক ও উদ্ধার আছে। ভালো খবর দেওয়া যাবে।’ জানতে

চাইলে মানি প্ল্যান্ট লিংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘আমি এখনো পুলিশের কাজের প্রতি আস্থাশীল। পুলিশ টাকা উদ্ধারে আন্তরিকভাবেই কাজ করছে। আশা করি, সব টাকা তারা উদ্ধার করতে পারবে।’ আপনার কাছে ছিনতাইয়ের ঘটনা পরিকল্পিতভাবে সাজানো মনে হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোনো কিছুই সন্দেহের বাইরে নয়। তবে আমার বিশ্বাস, পুলিশ সব রহস্য ভেদ করে জড়িতদের গ্রেফতার ও ছিনতাই হওয়া সব টাকা উদ্ধার করে বুঝিয়ে দেবে।’ বৃহস্পতিবার ডিবি পুলিশের হাতে আটক সাতজনকে ডাকাত দলের সদস্য বলে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের

মধ্যে ছয়জন সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মী এবং একজন ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির চালক। আবার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিবি জানিয়েছিল, তাদের টিম অভিযান চালিয়ে তিনটি ট্রাংক উদ্ধারে সক্ষম হয়। একদিন পরই সুর পালটে বলা হচ্ছে, ছিনতাইকারী দল চলে যাওয়ার পর ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ির চালকই ট্রাংকগুলো নিয়ে খিলক্ষেত থানায় যান। পরস্পরবিরোধী এসব তথ্য তুলে ধরার কারণে পুরো ছিনতাইয়ের ঘটনাকে রহস্যাবৃত মনে করছে অনেকেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া টাকার অঙ্কে বড় গরমিলের তথ্য নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হলে চাপের মুখে পড়েছেন ডিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে সেই কর্মকর্তা এখন তার বক্তব্য থেকে সরে পুরো ঘটনাটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ করতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক টিম পাঠিয়ে অভিযান পরিচালনা করছেন। জানা

যায়, সিলেটের সুনামগঞ্জ, বিশ্বনাথ, খুলনা ও ঢাকার একাধিক স্পটে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানকালে ডাকাতিতে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনকে আটক এবং আরও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে কতজন আটক এবং উদ্ধার করা টাকার অঙ্ক জানা যায়নি। অভিযানে থাকা টিমের সদস্যরা ঢাকায় ফিরলেই সবার তথ্য সমন্বয় করে তা গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে তুলে ধরা হতে পারে। এদিকে পর্যাপ্ত নিরপত্তা ছাড়া টাকা স্থানান্ত রের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ব্যাংকের টাকা পরিবহণের কাজে নিয়োজিত কোম্পানিগুলো নিজস্ব নিরাপত্তায় টাকা স্থানান্তর করবে। আর নিজস্ব ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলা আছে। আবার চুক্তি অনুযায়ী টাকা স্থানান্তরের কাজে ত্রুটিপূর্ণ কোনো গাড়ি

ব্যবহার করা যাবে না বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাস্তায় টাকা নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়া, কোনো ধরনের সশস্ত্র নিরাপত্তা ছাড়া আরেকটি গাড়ির চলতে থাকা এবং সেটাই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন ব্যাংক কর্মকর্তারাও। যেহেতু ছিনতাইয়ের কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তাই এ নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। তবে এই ছিনতাইয়ের ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে বেসরকারি ব্যাংকের বুথগুলোয় টাকা সরবরাহের অরক্ষিত চিত্র পাওয়া গেছে। ব্যাংকের নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিপত্র অনুযায়ী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজস্ব গুদামে রাখে। সেখানে টাকা যাচাই-বাছাই করে সেগুলো রিপ্যাকিং করে বুথে সরবরাহ করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সময় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। ফলে ব্যাংকের বুথেও ঢুকে যায় জাল নোট। প্রতারিত হন গ্রাহকরা। এ বিষয় তদন্ত সংস্থা ডিবি খোঁজখবর নিলে আরও ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘তিনটি ট্রাংকের মধ্যে একটি ছিল ফাঁকা। আর দুটির একটি ছিল অর্ধেক ফাঁকা। সব মিলিয়ে তিনটি ট্রাংকের টাকা গণনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। আমি এর বেশি কোনো টাকা পাইিনি।’
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ে ৫ চ্যালেঞ্জ চার দিনে খান ইউনিস ছেড়েছেন পৌনে ২ লাখ ফিলিস্তিনি দেশে আর কতদিন কারফিউ থাকবে? কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে শুধুই নীরব অশ্রু গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বহু সাধারণ শিক্ষার্থী জনজীবন স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারা অধিদপ্তরে জরুরি সিকিউরিটি সেল সীমিত আকারে চলছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রী কম ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ১০ দিনে কারাগারে ৩৩০ চট্টগ্রামে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘তারেক রহমানের হামলার নির্দেশনার অডিও সরকারের কাছে’ সরকার দিশেহারা হয়ে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে: জামায়াত সব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির মাঠে থাকার অঙ্গীকার আ.লীগ নেতাদের ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা পেতে যা করবেন কী হয়েছিল জাহ্নবীর? সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে: ডিবিপ্রধান প্রকৃত কোনো ছাত্রই এই হামলায় জড়িত ছিল না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী