
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আরও খবর

এজেন্ট ব্যাংকিং রেমিট্যান্সের ৯০ ভাগই যাচ্ছে গ্রামে

সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন

টাকা হাতে রাখার প্রবণতা ৯ মাসে ৬ গুণ বেড়েছে

ডলার সংকট না কাটলে স্বাভাবিক হচ্ছে না জ্বালানি খাত

তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল ১১ হাজার কোটি টাকা

দুই মাসে এক লাখ কোটি টাকা খরচের চ্যালেঞ্জ

৩ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা
পালটে যাচ্ছে প্রবৃদ্ধির হিসাব-নিকাশ

বৈশ্বিক সংকটের ঝাঁকুনিতে পালটে যাচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসাব-নিকাশ। দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়ে খরচের সীমানায় প্রাচীর তুলে দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের লাগাম টেনে নিয়ন্ত্রণ করা হয় অযৌক্তিক ব্যয়। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে নেওয়া হয় নানামুখী পদক্ষেপ। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার জৌলুস কমিয়েছে। আশঙ্কা আগামী দিনগুলোতেও খুব বেশি কমবে না মূল্যস্ফীতির হার।
উল্লিখিত ঘাত-প্রতিঘাত চলতি অর্থবছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সংকুচিত করবে। এমন হিসাব-নিকাশ থেকে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশের ঘরে আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে চলতি বাজেটের আকারও কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে। যা আজ মঙ্গলবার অথনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে চূড়ান্ত হবে।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় অর্থ বিভাগ কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে ব্যয় সাশ্রয় হবে। আর ব্যয় সাশ্রয় হলে প্রবৃদ্ধি এমনিতে কমবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে, প্রবৃদ্ধিকে নয়। যদিও সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। আগে মানুষকে মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করতে হবে। এক বছর প্রবৃদ্ধি বাড়লে বা কমলে সেটা সাধারণ মানুষের ভাবনা নয়। তাদের ভাবনা জিনিসপত্রের দাম নাগালে আসছে কিনা। আর মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দেশের অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতি, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ এবং চলতি বাজেট বাস্তবায়নের সার্বিক বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠক হয়। এটি অর্থনৈতিক খাতের সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষণ বৈঠক। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ এ সভা হবে। এমন পরিস্থিতিতে সভাটি হতে যাচ্ছে যখন বৈশ্বিক সংকটে দেশের অর্থনীতি অনেকটা টালমাটাল। জ্বালানি তেল ও বিশ্ববাজারে খাদ্যে মূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশে। এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে মানুষের সহনীয় পর্যায়ের বাইরে চলে গেছে। অস্বাভাবিক বেড়েছে সরকারের আমদানি ব্যয়। যা সামাল দিতে গিয়ে ডলার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এছাড়া রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগও মন্থর গতি। ফলে অর্থনীতি বলতে গেলে এক ধরনের দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে পার করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সূচকগুলো মূল্যায়ন করে আগামী দিনগুলোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সেখানে আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেটের আকারও তুলে ধরা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে। কারণ বাস্তবায়নের আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে নতুন বাজেটটি হবে নির্বাচনি এবং এই সরকারের শেষ বাজেট। এজন্য আগামী বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হচ্ছে কমপক্ষে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কারণেই এ বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছুটা সরে আসার কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। যদিও অর্থবছরের শুরুতে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন কমিয়ে ৬ শতাংশ করেছে। এপ্রিলে আইএমএফ জানিয়েছিল, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদনে জ্বালানি ও খাদ্যের উচ্চমূল্য, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হার ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণ দেখিয়ে পূর্বাভাস সংশোধন করে ৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পূর্বাভাসকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত মাসে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ করেছে।
বৈশ্বিক সংকট মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল এবং বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। এ বছর ৫ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু গত নভেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশের ঘরে বিরাজ করছে এমন তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগ। মূল্যস্ফীতির হারও পর্যালোচনা করা হবে ওই বৈঠকে। অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে মূল্যস্ফীতি আগামী দিনগুলোতে আরও কমবে। নতুন বছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে সেটি আরও বাড়ানো হবে।
সূত্র জানায়, বৈশ্বিক কারণে চাপে থাকা অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। ফলে রাজস্ব আহরণ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তায় নেই সরকার। অর্থ বিভাগ জানায়, এ বছর রাজস্ব খাতে বড় ধরনের কাটছাঁট করা হবে না।