ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ছেয়ে আছে পুরো রাজধানী – U.S. Bangla News




ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ছেয়ে আছে পুরো রাজধানী

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ৬ এপ্রিল, ২০২৩ | ৫:১৯
কোনো কারণে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার মতো যাবতীয় অনুকূল পরিবেশ থাকা মার্কেটের অভাব নেই রাজধানীতে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ছাড়াও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অসংখ্য মার্কেট রয়েছে এর মধ্যে। এগুলোর ভেতরে ভয়াবহ ঘিঞ্জি অবস্থা ও নকশাবহির্ভূত অসংখ্য অবৈধ দোকানপাটে ঠাসা। কখনও আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মার্কেট থেকে মানুষের সহজে বের হওয়ারও তেমন সহজ পথ নেই। দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের সুযোগও এসব মার্কেটে সীমিত। এসব মার্কেটে শৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে দায়িত্বশীল সংস্থা বা ব্যক্তিদেরও এ নিয়ে তেমন ভাবাবেগ নেই। ফলে চুড়িহাট্টা, সিদ্দিকবাজার, বঙ্গবাজারের মতো একের পর এক বড় দুর্ঘটনা রাজধানীতে ঘটেই চলছে। রাজউকের মালিকানাধীন মার্কেটের অবস্থাই নাজুক : রাজউক উত্তরা শপিং

কমপ্লেক্সের মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি। নকশা অনুযায়ী মার্কেটে ৩৪৬টি দোকান থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেছে, বেজমেন্টের পার্কিংস্থলেই অবৈধ দোকান আছে ৭১টি। পুরো পার্কিং স্পেসে দোকান আর দোকান। পাওয়ার স্টেশন এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে যে, বাতাস ঢুকতেও পারে না, বের হতেও পারে না। দুই সিঁড়ির পাশে থাকা এক-আধটু ফাঁকা জায়গাতেও বসানো হয়েছে দোকান। বেশিরভাগ দোকানেই চলছে তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসা। মার্কেটের তত্ত্বাবধায়ক সুমন বিশ্বাস বলেন, মার্কেটে কতগুলো নকশাবহির্ভূত দোকান তা বলে শেষ করা যাবে না। কোনোভাবে আগুন লাগলে মানুষ যে বের হবে, সে সুযোগও নেই। রাজউক কর্মচারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফি উল্লাহ বাবু বলেন,

সমিতির বিগত কমিটির লোকজন খালি জায়গাগুলোতে দোকান বানিয়ে স্ট্যাম্পে লিখে পরে বরাদ্দ দিয়ে মার্কেটের এমন অবস্থা করেছেন। আমরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। আদালত রায় দিলেই একবারে সব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে ফেলব। সিটি করপোরেশনের মার্কেটেরও এমন হাল : বাবুবাজারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন নওয়াব ইউসুফ মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় থাকা মার্কেটগুলোর একটি। মার্কেটটির ৭৩০টি দোকানের মধ্যে প্রায় শখানেক দোকানই নকশাবহির্ভূত। সিঁড়ি-উন্মুক্ত স্থান যা ছিল সব স্থানেই কেবল দোকান আর দোকান। ভবনের নিচতলায় হার্ডওয়্যার, পলিথিন, লোহালক্কড়ের দোকান, দ্বিতীয় তলায় ব্যাগ, কার্টনের কারখানা, গার্মেন্ট আর মাঝখানে কাঁচাবাজার। পাইকারি ও খুচরা এ মার্কেটে দিনে লাখো মানুষের যাতায়াত। নওয়াব ইউসুফ মার্কেট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ

আলী বলেন, মার্কেট যে ঝুঁকিপূর্ণ আমরা তা জানি না। আমাদের কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। সিটি করপোরেশন তো প্রতি বছরই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে, ভাড়াও নিচ্ছে। অবশ্য ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের সমকালকে বলেন, মার্কেটটি নতুন করে তৈরির জন্য দরপত্র আহ্বানের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। এখন সেখানে নতুন মার্কেট তৈরি হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি মার্কেটের পরিবেশও একই রকম। অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে মার্কেটগুলোর ভেতরের পরিবেশ এমন করা হয়েছে যা আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য যথেষ্ট। ডিএসসিসি বলছে, তারা ফুলবাড়িয়ার সুন্দরবন মার্কেট, নগর প্লাজা, সিটি প্লাজাসহ কয়েকটি মার্কেট থেকে দুই হাজারের মতো অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে। এরপরও অনেক অবৈধ দোকানপাট রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু

অ্যাভিনিউ হকার্স মার্কেট অবৈধভাবে দোতলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে অবৈধ দোকান রয়েছে ২৫০টি। ডিএসসিসির তালিকায় দেখা গেছে, নর্থ সাউথ রোড সাইড মার্কেটে চারটি অবৈধ দোকান তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের ইউনিট পর্যায়ের অফিস। আর সিঁড়ির পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি গোডাউন। কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সে ৪৫১টি, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স-২ এ ৪৪৭টি, আহসান মঞ্জিল নবাববাড়ি সুপার মার্কেটে ৩৮টি, লক্ষ্মীবাজার মার্কেটে ৩৫টি, সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারে ৪৭টি, নিউ সুপার মার্কেটে (দক্ষিণ) ২০টি, নিউ সুপার মার্কেট ডি ব্লকে (উত্তর) ৪১টি, নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেটে ১১২টিসহ প্রায় সব মার্কেটেই রয়েছে অবৈধ দোকান। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে বাতাস যাতায়াতের কোনো জায়গা এখন আর খালি নেই। এ

প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন সমকালকে বলেন, আমরা যখনই খবর পাচ্ছি, তখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিছু দুষ্ট লোক আছে, তারা এটা বানাচ্ছে। আবার অনেকগুলো নিয়ে মামলাও হচ্ছে। তখন আমাদের আইনিভাবে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মালিকানাধীন একাধিক মার্কেটেরও এমন অবস্থা। কারওয়ান বাজার ও গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের অবস্থাও একই রকম। এর আগে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে একবার অগ্নিকাণ্ডের পরও অবস্থার তেমন পরিবর্তন হয়নি। ডিএনসিসি ৯টি মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও সেগুলো অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সমকালকে বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণের চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু মার্কেটে মামলা থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য মার্কেটও ঝুঁকিতে

: মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানাধীন ওয়ারীর রাজধানী সুপার মার্কেটের ভেতরের পরিবেশ বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সেখানেও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার মতো পর্যাপ্ত অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। গুলশান-২ এর মতো ভিআইপি এলাকায় অবস্থিত পিংক সিটি মার্কেটের ভেতরের উন্মুক্ত স্থানগুলোতে দোকানপাট ও রেস্টুরেন্ট বসানো হয়েছে নকশাবহির্ভূতভাবে। বাংলাবাজারের বইয়ের মার্কেটগুলোতে আগুন লাগলে পুড়ে ছাই হতে সময় লাগবে না। ইসলামপুরের অনেক মার্কেটের অবস্থাও একই রকম। মিরপুর রোডের চাঁদনী চক, গাউছিয়া, বলাকা, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে একবার আগুন লাগলে নেভানোই কঠিন হয়ে যাবে। ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান সমকালের কাছে অবশ্য দাবি করেন, তাঁদের মার্কেটে যাতায়াতের সোজা পথ রয়েছে। আর

ফায়ার ফাইটিংসামগ্রী আছে। দোকান মালিকদেরও সচেতন করা হয়েছে। চাঁদনী চক মার্কেট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, বঙ্গবাজারের দুর্ঘটনার পর প্রত্যেক দোকানিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হবে, যেন দোকান বন্ধ করার আগে বিদ্যুতের লাইট-ফ্যানগুলো ঠিকমতো বন্ধ করে বের হয়। আর মার্কেটের ভেতরে যেন কেউ আগুন না জ্বালায়। ওই এলাকার আরও অনেক মার্কেট নিয়ে গঠিত চাঁদনী চক বিজনেস ফোরামের কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, তাঁরা নিয়মিত পলাশী ফায়ার স্টেশন থেকে লোক এনে মার্কেটের পরিবেশ তদারকি করেন। ফায়ার ফাইটিংসামগ্রীগুলো পরীক্ষা করান। ফোরামের পক্ষ থেকে যতটা করা সম্ভব, সেটা তাঁরা করছেন। এসব প্রসঙ্গে রাজউকের বোর্ড সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস

বলেন, সিদ্দিকবাজারের ঘটনার পর আমরা সার্ভে শুরু করেছি। সাত শতাধিক ভবন সার্ভে করা হয়েছে। প্রথমে বেজমেন্টগুলোর ব্যবহার দেখছি। এগুলোর অবৈধ ব্যবহার বন্ধের জন্য নোটিশও দিয়েছি। মানবতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। যারা অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করবে না, ঈদের পর সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে ২৬ লাখ ভবনের ৪০ শতাংশ ভবন দোতলা থেকে বেশি। এই ভবনগুলোর ডাটাবেজ করছি। এর সঙ্গে থাকবে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ঢাকা ওয়াসা। ঈদের পরই কাজ শুরু হবে। তখন এগুলোর তদারকি করা সহজ হবে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ে ৫ চ্যালেঞ্জ চার দিনে খান ইউনিস ছেড়েছেন পৌনে ২ লাখ ফিলিস্তিনি দেশে আর কতদিন কারফিউ থাকবে? কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে শুধুই নীরব অশ্রু গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বহু সাধারণ শিক্ষার্থী জনজীবন স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারা অধিদপ্তরে জরুরি সিকিউরিটি সেল সীমিত আকারে চলছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রী কম ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ১০ দিনে কারাগারে ৩৩০ চট্টগ্রামে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘তারেক রহমানের হামলার নির্দেশনার অডিও সরকারের কাছে’ সরকার দিশেহারা হয়ে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে: জামায়াত সব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির মাঠে থাকার অঙ্গীকার আ.লীগ নেতাদের ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা পেতে যা করবেন কী হয়েছিল জাহ্নবীর? সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে: ডিবিপ্রধান প্রকৃত কোনো ছাত্রই এই হামলায় জড়িত ছিল না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী