![](https://usbangla24.news/wp-content/themes/pitwmeganews/pitw-assets/pitw-image/user_default.png)
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আরও খবর
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830807-1722045278.jpg)
কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830804-1722035034.jpg)
দেশে আর কতদিন কারফিউ থাকবে?
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830660-1722027699.jpg)
গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বহু সাধারণ শিক্ষার্থী
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830666-1722027518.jpg)
জনজীবন স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830659-1722027328.jpg)
কারা অধিদপ্তরে জরুরি সিকিউরিটি সেল
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830661-1722026747.jpg)
সীমিত আকারে চলছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রী কম
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2024/07/image-830641-1722015054.jpg)
ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক
জন্মদিনের আগেই ফিরিয়ে নেন ভারতীয় সৈন্য
![](https://usbangla24.news/wp-content/uploads/2023/03/image-655408-1678996891.jpg)
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২। কলকাতার গভর্নর হাউজে (বর্তমানে রাজভবন) সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন মুক্তিযুদ্ধের পরম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।
হঠাৎ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের প্রসঙ্গ আনলেন এবং জাতির পিতাকে চমকে দিয়ে বললেন, ওইদিন (১৭ মার্চ) তিনি বাংলাদেশ যাবেন। যাওয়ার আগে ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।
এটা বঙ্গবন্ধুকে তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটি উপহার। সে অনুযায়ী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম (৫৩তম) জন্মদিন ওই বছরের ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন। যদিও বঙ্গবন্ধুর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয়
সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা ছিল ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার বিশেষ স্মরণিকা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ইন্দিরা গান্ধীর এই উপহারের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্মরণিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে জনসভায় বক্তৃতা করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওইদিনই গভর্নর হাউজে (রাজভবন) প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে তার কাছ থেকে মিত্র ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে নতুন তারিখ জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার তৎকালীন প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল তার
‘ঐতিহাসিক ব্রিগেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু : প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতীয় সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর নতুন সময়সীমার বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কলকাতা সফর ছিল তিন দিনের অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি। ড. মোফাকখারুল ইকবালের বর্ণনায়, ‘বঙ্গবন্ধুর এই কলকাতা সফরকালেই রাজভবনে মুজিব-ইন্দিরার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের উন্নয়ন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন এবং ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়। স্থির হয়, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশে যাবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চের আগেই ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। শ্রীমতী গান্ধী কথা রেখেছেন। তিনি ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য
বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে স্বাধীন বাংলাদেশ সফর করেন।’ বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা (পিডি) হিসাবে কর্মরত মো. মোফাকখারুল ইকবাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ভারতের বিশিষ্ট কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থেও ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এস ব্যানার্জির ভাষায়, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) চাইছেন দিল্লি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন তার একটি ব্যক্তিগত বার্তা মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর (ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) কাছে পৌঁছে দিই। রাষ্ট্রপতি ভবনে মিসেস গান্ধীর
সঙ্গে তার মিটিংয়ে তিনি একটি অনুরোধ করবেন, তার আগেই আমাকে বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে।’ ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে আসেন। এরপর লন্ডনের স্থানীয় সময় ৯ জানুয়ারি ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে দিল্লির পথে যাত্রা করেন তিনি। এই যাত্রাপথে তার সঙ্গী ছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। ১০ জানুয়ারি দিল্লি থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর যাত্রাপথের সঙ্গীও ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিমানটিতে ভারতে ফিরে যাওয়ার আগে কূটনীতিক এস ব্যানার্জি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঢাকার বাসভবনে বিদায়ি মিটিং করেন। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি তার ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থে ওই
যাত্রাপথে (লন্ডন-দিল্লি এবং দিল্লি-ঢাকা) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো ১৩ ঘণ্টার আলাপচারিতার বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। সেখানে ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপট এবং দুই দফা সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। তার স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, প্রথমে ৩০ জুন, ১৯৭২ তারিখ চূড়ান্ত করা হলেও বঙ্গবন্ধুর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা তিন মাস এগিয়ে ৩১ মার্চ করা হয়। তার ভাষায়, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাকে বোঝালেন যে, তার অনুরোধের (ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার) পেছনে আছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের একটি আকাক্সক্ষা। ভারত যদি ৩১ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তার সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, যে তারিখটি ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত ৩০ জুনের তিন মাস আগে, তাহলে বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র
হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথ ব্রিটেনের জন্য সুগম হবে। উপরিউক্ত অনুরোধের সঙ্গে মুজিব তার ইচ্ছার কথাই জানালেন। তিনি আসন্ন (১০ জানুয়ারি ১৯৭২, দিল্লি) ইন্দিরা গান্ধী-মুজিবুর রহমান বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছিলেন।’ লন্ডন থেকে দিল্লি যাত্রার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে যে বৈঠক করেন এর সম্ভাব্য ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন বলে স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেছেন শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরেই তার সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিফোনে এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্রিটেনের স্বীকৃতির বিষয়ে আশ্বস্ত হন বলেও ভারতীয় এই কূটনীতিক তার ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কলকাতায় সাক্ষাতের পর ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন। ওইদিন ছিল বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৩তম জন্মদিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৯ মার্চ দিল্লি ফিরে যান। এই সফরে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কিছু সময় অতিবাহিত করেন।
সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা ছিল ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার বিশেষ স্মরণিকা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ইন্দিরা গান্ধীর এই উপহারের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্মরণিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে জনসভায় বক্তৃতা করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওইদিনই গভর্নর হাউজে (রাজভবন) প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে তার কাছ থেকে মিত্র ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে নতুন তারিখ জানতে পারেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতার তৎকালীন প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল তার
‘ঐতিহাসিক ব্রিগেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু : প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ভারতীয় সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধীর নতুন সময়সীমার বর্ণনা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কলকাতা সফর ছিল তিন দিনের অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি। ড. মোফাকখারুল ইকবালের বর্ণনায়, ‘বঙ্গবন্ধুর এই কলকাতা সফরকালেই রাজভবনে মুজিব-ইন্দিরার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের উন্নয়ন, শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন এবং ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়। স্থির হয়, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন বাংলাদেশে যাবেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চের আগেই ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। শ্রীমতী গান্ধী কথা রেখেছেন। তিনি ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য
বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নেন এবং ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে স্বাধীন বাংলাদেশ সফর করেন।’ বর্তমানে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা (পিডি) হিসাবে কর্মরত মো. মোফাকখারুল ইকবাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। ভারতের বিশিষ্ট কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থেও ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এস ব্যানার্জির ভাষায়, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) চাইছেন দিল্লি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি যেন তার একটি ব্যক্তিগত বার্তা মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর (ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) কাছে পৌঁছে দিই। রাষ্ট্রপতি ভবনে মিসেস গান্ধীর
সঙ্গে তার মিটিংয়ে তিনি একটি অনুরোধ করবেন, তার আগেই আমাকে বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে।’ ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লন্ডনে আসেন। এরপর লন্ডনের স্থানীয় সময় ৯ জানুয়ারি ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের একটি বিমানে দিল্লির পথে যাত্রা করেন তিনি। এই যাত্রাপথে তার সঙ্গী ছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। ১০ জানুয়ারি দিল্লি থেকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর যাত্রাপথের সঙ্গীও ছিলেন তিনি। ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ারফোর্সের বিমানটিতে ভারতে ফিরে যাওয়ার আগে কূটনীতিক এস ব্যানার্জি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ঢাকার বাসভবনে বিদায়ি মিটিং করেন। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি তার ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থে ওই
যাত্রাপথে (লন্ডন-দিল্লি এবং দিল্লি-ঢাকা) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো ১৩ ঘণ্টার আলাপচারিতার বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। সেখানে ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রেক্ষাপট এবং দুই দফা সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। তার স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, প্রথমে ৩০ জুন, ১৯৭২ তারিখ চূড়ান্ত করা হলেও বঙ্গবন্ধুর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা তিন মাস এগিয়ে ৩১ মার্চ করা হয়। তার ভাষায়, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) আমাকে বোঝালেন যে, তার অনুরোধের (ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার) পেছনে আছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের একটি আকাক্সক্ষা। ভারত যদি ৩১ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তার সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়, যে তারিখটি ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত ৩০ জুনের তিন মাস আগে, তাহলে বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র
হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পথ ব্রিটেনের জন্য সুগম হবে। উপরিউক্ত অনুরোধের সঙ্গে মুজিব তার ইচ্ছার কথাই জানালেন। তিনি আসন্ন (১০ জানুয়ারি ১৯৭২, দিল্লি) ইন্দিরা গান্ধী-মুজিবুর রহমান বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দেখতে চেয়েছিলেন।’ লন্ডন থেকে দিল্লি যাত্রার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে যে বৈঠক করেন এর সম্ভাব্য ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন বলে স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেছেন শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি। ১০ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরেই তার সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টেলিফোনে এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্রিটেনের স্বীকৃতির বিষয়ে আশ্বস্ত হন বলেও ভারতীয় এই কূটনীতিক তার ‘ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ গ্রন্থে
উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কলকাতায় সাক্ষাতের পর ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন। ওইদিন ছিল বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৩তম জন্মদিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ১৯ মার্চ দিল্লি ফিরে যান। এই সফরে তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কিছু সময় অতিবাহিত করেন।