কেজিতে ৩০০ টাকা কমে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ!




কেজিতে ৩০০ টাকা কমে ভারতে যাচ্ছে ইলিশ!

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৫:০৫
দেশের বাজারে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দর প্রায় ১৪শ টাকা। কিন্তু রপ্তানিকারকরা ১১শ টাকা কেজি দরে ভারতে ইলিশ পাঠাচ্ছে। প্রতি কেজিতে ৩শ টাকা লোকসান দিয়ে ভারতে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রপ্তানির দায়িত্ব পায় দেশের ৭৯ প্রতিষ্ঠান। বুধবার বিকাল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৩২ টন ইলিশ ভারতে গেছে শুধু বরিশাল থেকে। তবে প্রতি কেজিতে ৩শ টাকা লোকসান দিয়ে কীভাবে ভারতে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে তা খুঁজতে নেমে মেলে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১১শ টাকা কেজি দরে যাওয়া ইলিশই কলকাতায় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২১শ টাকায়। বাড়তি বিক্রির এই টাকা দেশে আসছে হুন্ডির

মাধ্যমে। মাঝ থেকে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। কয়েক ব্যবসায়ী জানান, ‘১০ ডলার কেজি দরে ওই ইলিশ পাঠাচ্ছেন রপ্তানিকারকরা।’ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করেন রপ্তানিকারকরা। রহস্যের শুরুও সেখানেই। ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সাহা জানান, ‘শুক্রবারও এখানে এলসি সাইজের (৭শ থেকে ৯৯৯ গ্রাম ওজন) ইলিশের দর ছিল প্রতি মণ ৫৮ হাজার টাকা। ৪৩ কেজিতে মণ ধরলে এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজির দাম দাঁড়ায় সাড়ে ১৩শ টাকা। কেজি সাইজের দাম আরও বেশি। ১৫শ টাকার নিচে দেওয়া যায় না হাত।’ এই দরের বিপরীতে ১১শ টাকায় কী করে ভারত যাচ্ছে ইলিশ জানতে চাইলে মুখে

কুলুপ এঁটেন রপ্তানিকারকরা। এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কেউ। ভারতে শুক্রবার ১ ডলারের বিপরীতে মিলেছে ৮২ রুপি। সেই হিসাবে বাংলাদেশ থেকে ১০ ডলার দরে যাওয়া ইলিশের দাম সেখানে পড়েছে ৮২০ রুপি। টাকার সঙ্গে রুপির বিনিময় হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ৯০২ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহণসহ অন্যান্য যোগ করলে খরচ দাঁড়াতে পারে সর্বোচ্চ ১ হাজার রুপি। রপ্তানি মূল্য অনুযায়ী, এই ১ হাজার রুপির ইলিশ শুক্রবার কলকাতার পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১৬শ থেকে ১৭শ রুপিতে। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২১শ টাকা। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কলকাতার গণমাধ্যমকর্মী সুব্রত আচার্য্য বলেন, ‘খুব ভোরেই (শুক্রবার) কলকাতার হাওড়ায় পাইকারি মাছ বাজারে তোলা হয় পদ্মার ইলিশ।

বাংলাদেশ থেকে যারা এই ইলিশ পাঠাচ্ছেন তাদের নিযুক্ত লোকজনই পাইকারি বাজারে তোলেন তা। আমাদের চোখের সামনে ১৬শ থেকে ১৭শ রুপি কেজি দরে ইলিশ বিক্রি করছেন তারা। খুচরা বাজারে গিয়ে যে দাম দাঁড়াবে ১৮শ থেকে ১৯শ রুপি। এখানকার পাতিপুকুর বাজারে আজ যায়নি পদ্মার ইলিশ। হয়তো কাল পরশু সেখানেও যাবে। তবে দামের যে পরিস্থিতি; ইলিশে হাত দেওয়াই মুশকিল।’ বরিশাল মোকামে ইলিশ বিক্রি করতে আসা সাগরের জেলে আরমান মাঝি বলেন, ‘ট্রলারভর্তি ইলিশ ১১শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি আড়তে। এ ক্ষেত্রে আকার অনুযায়ী ইলিশের ভিন্ন ভিন্ন কোনো দর ধরা হয়নি। প্রশ্ন হলো— আমাদের কাছ থেকে ১১শ টাকা কেজি দরে কিনে সেই দরেই কী

করে ভারতে পাঠাচ্ছেন তারা?’ মোকামের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘হিসাবটা খুব সহজ। ১১শ টাকায় ইলিশ কিনে ওই দরেই এলসি খুলে পাঠানো হচ্ছে ভারতে। কলকাতার পাইকারি বাজারে ওই ইলিশ বিক্রি করে এখানকার রপ্তানিকারকদের নিযুক্ত লোকজন। সেখানে শুক্রবার পদ্মার ইলিশ বিক্রি হয়েছে বাংলাদেশি ২১শ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ ১১শ টাকার ইলিশে বাড়তি এলো ১ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিলে কেজিপ্রতি কম করে হলেও ৭-৮শ টাকা থাকবে। রপ্তানি মূল্য সঠিক দেখিয়ে পাঠালে এত লাভ তো থাকত না। যদিও সে ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ বাড়ত দেশের। বাড়তি লাভের এই টাকা এখন আসবে হুন্ডির মাধ্যমে। অনেকে তো আবার আনেও না। কলকাতায় ফ্ল্যাট-বাড়ি-গাড়ির পেছনে বিনিয়োগ করে

টাকা।’ এক হিসাবে দেখা গেছে, সঠিক মূল্য ধরে এলসি খোলা হলে রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতো সাড়ে ৭ কোটি ডলার। রপ্তানি মূল্য কম দেখানোর কারণে সেখানে এখন ডলার আসবে ৩ কোটি ৯৫ লাখ। অর্থাৎ হুন্ডির হাতে তুলে দেওয়া হলো সাড়ে ৩ কোটি ডলার সমমানের ৩৮৫ কোটি টাকা। যে টাকা যোগ হবে না দেশের অর্থনীতির হিসাবে। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করে কলকাতার পদ্মার ইলিশের বাজার। এখন তো সরকারিভাবে আসছে ইলিশ। বাকি সময়টা এরা পাঠায় চোরাই পথে। এ রকম চোরাই ইলিশের বড় একটি চালান ধরা পড়েছে গত সপ্তাহে। আগরতলা সীমান্তে

তা আটক করে বিএসএফ। বাংলাদেশি রপ্তানিকারক অনেকেরই এখানে ফ্ল্যাট-বাড়ি রয়েছে। হাওড়া বাজারের কাছে খুলনার এক রপ্তানিকারকের আছে বেশ দামি ফ্ল্যাট। বাড়িও আছে কয়েকজনের।’ বিষয়টির আংশিক সত্যতা স্বীকার করেন বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনিও ইলিশ রপ্তানি করেন ভারতে। এরই মধ্যে তার ৩১ টন ইলিশ গেছে কলকাতায়। টুটুল বলেন, ‘সব রপ্তানিকারকেরই নিজস্ব লোক আছে কলকাতায়। পাইকারি বাজারে বিক্রির বিষয়টি আমরাই দেখি।’ দেশের চয়ে কম দামে ইলিশ রপ্তানি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ৩টি ভিন্ন দরে বিক্রি হয় ইলিশ। এলসি সাইজ যেমন ৫৮ থেকে ৬০ হাজার তেমনি ছোট সাইজের দাম ৩৫-৪০ হাজারের বেশি নয়। আমরা গড়ে কিনে গড়ে

পাঠাই। যে কারণে এলসি রেট ১১শ টাকা। কলকাতায়ও কিন্তু বিক্রি হয় গড়ে। এর পর মেলাই লাভ-লোকসানের হিসাব। এখানে দুর্নীতির প্রশ্নই আসে না।’ বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পুরো বিষয়টির মধ্যে যে ঘাপলা আছে তা নিশ্চিত। সরকারের উচিত হবে বিষয়টির তদন্ত করা। ডলার সংকটের মুহূর্তে যারা এই দুর্নীতি করছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ক্রেনের আঘাতে লাইনচ্যুত ট্রেন, ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ বিচারকদের সতর্ক করে আপত্তিকর বক্তব্য ভিপি নুরের বিএনপির মিছিলে পুলিশের বাধা, সংঘর্ষে আহত ৩৫ আমাদের মূল্য তখনও ছিলো না এখনও নাই: সৈয়দ ইবরাহিম টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ গ্রেফতার ৫৪ মালয়েশিয়ায় ৫ দিনে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পাসপোর্ট দেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল-এর কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদার সাথে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের মতবিনিময় সভা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কতটা কাজে লাগে? ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ধামরাইয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ নিহত ২, আহত ১ ডায়রিয়া আক্রান্তের পর গাজায় দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে ইসরাইলি সৈন্যরা ৪০ দিনে ২৬৬টি যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ৪১তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে সুপারিশ পেলেন ৩১৬৪ জন জাতীয় পার্টির সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে : কাদের নির্বাচনে বিদেশী কোন চাপ নেই : ইসি আলমগীর মানুষের হাতে থাকা ডলার ব্যাংকে টানার উদ্যোগ রাজধানীসহ সারাদেশে ৯ গাড়িতে আগুন জামিনে মুক্তি পেলেন বক্তা আমির হামজা প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন বৃহস্পতিবার