আন্দোলনেই পদত্যাগে বাধ্য হবে সরকার




আন্দোলনেই পদত্যাগে বাধ্য হবে সরকার

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৮:৫৬
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘হামলা-মামলা করে আন্দোলন দমানো যাবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। আন্দোলন সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য জনগণও প্রস্তুত, তাদের উত্তাল তরঙ্গে সরকার ভেসে যাবে। এবার জয়ী হবই।’ তিনি বলেন, এবার ’১৪ ও ’১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করতে পারবে না আওয়ামী লীগ। জনগণ যেমন প্রতিরোধ করবে, তেমন অবাধ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক চাপও আছে। বিএনপি কিংবা জোট নয়, আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্বও পরিষ্কার করে বলছে, দুটি নির্বাচন ঠিক হয়নি। সুতরাং এবার নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-

নিরপেক্ষ সরকার। শুভবুদ্ধির উদয় ঘটিয়ে ক্ষমতাসীনরা দেশকে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করবে বলেও প্রত্যাশা করেন বিএনপি মহাসচিব। সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে থাকা মির্জা ফখরুলের এই সাক্ষাৎকার মঙ্গলবার দুপুরে মুঠোফোনে নেওয়া হয়। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন, যুগপৎ-এ দলের পরিধি বাড়ানো, দলের বর্তমান অবস্থা, সিঙ্গাপুরে বৈঠকের দাবি প্রসঙ্গ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, দেশের অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৪৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যোগ দেন ভাসানী ন্যাপে।

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর থেকে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকিটে সংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেও ২০০১ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত হলেও শপথ গ্রহণ করেননি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের ৫ম কাউন্সিলে তাকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব

নির্বাচিত করা হয়। ২০১১ সালের মার্চে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। শীর্ষ দুই নেতার সশরীরে অনুপস্থিতিতে সমন্বয় করে সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল। প্রশ্নকর্তা: ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ এ সময়ে দলটি জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছে। সাফল্য ও ব্যর্থতা কী। মির্জা ফখরুল : সবচেয়ে বড় সাফল্য শহিদ জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই দল। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের এই দলটি ঐক্যবদ্ধ

করেছিল। যখন উনি প্রতিষ্ঠা করেন তখন বিভিন্ন দলের সবচেয়ে দেশপ্রেমিক, যোগ্য এবং রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের নিয়ে দল তৈরি করেছিলেন। ফলে পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদল বিপদগামী সেনা সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হলেও তার হাতে গড়া দলটি শুধু বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে টিকে গেছে। শহিদ জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক কর্মসূচি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, মুক্ত সমাজ ও বহুদলীয় গণতন্ত্রসহ মোটা দাগে যেসব মৌলিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার ওপর ভিত্তি করেই কিন্তু বাংলাদেশটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে একটা নতুন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। যে ধারাটা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে, টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা হচ্ছে-এই আওয়ামী লীগ যখনই

ক্ষমতায় এসেছে তখনই বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। নিয়ে এসেছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা। এই দলটি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত করেছে। আজকেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এই সময়টাতে বিএনপির অর্জনগুলো হচ্ছে ১৯৭৯ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। আবার দীর্ঘ ৯ বছর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে ১৯৯১ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যাওয়া। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে কতগুলো মৌলিক কাজ এ দেশে করতে সক্ষম হয়। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করাসহ সংসদীয় গণতন্ত্র ভালোভাবে চর্চা করেছে। অন্যদিকে অর্থনীতিকে সচল অবস্থায় নিয়ে গিয়ে তাকে একটা ইমাজিং টাইগার হিসাবে

পরিচিতি দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উত্তরণের পথকে কিন্তু সুগম করেছিল বিএনপি। দুর্ভাগ্যের কথা, আওয়ামী লীগ সে জায়গাগুলো সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ আজকে বাংলাদেশকে একটা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। প্রশ্নকর্তা : বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন? মির্জা ফখরুল : শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে সাহস ও সাফল্যের সঙ্গে বিএনপি সব মোকাবিলা করছে। সেখানে প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে এই সরকার। ছয়শ মানুষকে গুম করেছে। এক হাজারেরও অধিক মানুষকে হত্যা করেছে। আমাদের শীর্ষ নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা দোষে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একইভাবে মিথ্যা মামলায়

সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। এ রকম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপি কিন্তু আজকে শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। এখানে সত্যিকার অর্থেই যদি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপি সবচেয়ে বেশি আসন লাভ করবে। প্রশ্নকর্তা : সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে আপনারা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার নামে বৈঠক করেছেন বলে ক্ষমতাসীন দল দাবি করেছে। মির্জা ফখরুল : ক্ষমতাসীন দল সব সময় দুঃস্বপ্নে ভোগে। আমরা সিঙ্গাপুরে কাকতালীয়ভাবে, যেভাবেই হোক আমাদের নিজেদের চিকিৎসার জন্য এসেছি। আমি চিকিৎসার জন্য এসেছি। একইভাবে মির্জা আব্বাসও নিজের চিকিৎসার জন্য এসেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রাজপথে

কর্মসূচি করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে অবস্থায় তাকে সিঙ্গাপুরে আসতে হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে ২২টি রেডিও থেরাপি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ তো সব সময় ভয় পায়। তারা উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার, মিথ্যা প্রচার করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নদিকে নিতে চায়। এটি হচ্ছে তাদের অপকৌশল। এসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগকে তারা এখন আর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে দেখতে চায় না। প্রশ্নকর্তা : নির্বাচনকে সামনে রেখে সমঝোতার একটা চেষ্টা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে, শোনা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধি নিয়ে একটি সরকার গঠনের। মির্জা ফখরুল : এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমার জানা নেই। প্রশ্নকর্তা : আগামী নির্বাচনকে
Warning: Undefined array key 8 in /home/usbagzpe/public_html/usbangla24.news/wp-content/themes/pitwmeganews/functions.php on line 406
সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হচ্ছে। বিএনপির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে আপনাদের দলের একটি অংশকে নিয়ে ভোটে যেতে পারেন। এমন আশঙ্কা আপনিও করেন? মির্জা ফখরুল : কখনোই পারবে না। এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। বিএনপির মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। আমাদের দল ঐক্যবদ্ধ আছে। ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মধ্যে আছে। প্রশ্নকর্তা : চলমান আন্দোলনে লক্ষ করা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। এর পেছনে কি মার্কিন ভিসানীতির প্রভাব কাজ করছে? মির্জা ফখরুল : মার্কিন ভিসানীতি কিন্তু সেদিন হয়েছে। আর আমরা সংগ্রাম করছি দীর্ঘকাল থেকে। গত এক-দেড় বছর থেকে জোরদার হয়েছে। এখানে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাওয়া, নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জন্য। সেই ভোট ব্যবস্থাটা তো সরকার নষ্ট করে দিয়েছে। ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই মানুষ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। প্রশ্নকর্তা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েকবার আপনিসহ সিনিয়র নেতাদের সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। উনার ভাবনা ও দেখানো পথেই কি আন্দোলন করছেন? মির্জা ফখরুল : দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলা যায় গৃহবন্দি অবস্থায়। তিনি রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নন। কিন্তু তার যে স্পিরিট ও ইমেজ, তার যে প্রভাব দলের মধ্যে তা তো অবশ্যই কাজ করে। মানুষের মধ্যে ইতিবাচকভাবে কাজ করছে। আমাদের দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী মনে করেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ক্যারিশম্যাটিক লিডার, গণতান্ত্রিক নেতা। তাকেই তারা অভিভাবক মনে করেন। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই সুদূরে থাকলেও তার নেতৃত্বেই দল কিন্তু ঠিকই চলছে। প্রশ্নকর্তা : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরা নিয়ে নানারকম আলোচনা চলছে। শিগগিরই কি তার দেশের ফেরার সম্ভাবনা আছে? মির্জা ফখরুল : তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। আমরা মনে করি, তার এই মুহূর্তে দেশে আসার কোনো কারণ নেই। আসার সেই পরিবেশও নেই। এখানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে তিনি যদি দেশে আসেন তার ওপর নির্যাতন শুরু হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো মামলায় তাকে সাজাও দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের নেতৃত্বকে কিছুটা অক্ষত রাখতে চাই। যে কারণে দল মনে করে, এই মুহূর্তে তার দেশে আসার দরকার নেই। প্রশ্নকর্তা : কেউ কেউ বলছেন বিএনপি সরকার গঠন করলে নেতৃত্ব কে দেবেন। বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট আছে। মির্জা ফখরুল : দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তার ক্যারিশম্যাটিক লিডারশিপ দিয়ে, সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে বিএনপিকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছেন যে দল এখন একটা সঠিক লিডারশিপে চলছে। আমরা তো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সুতরাং তার কাছ থেকে যেটুকু নির্দেশ ও পরামর্শ পাওয়ার কথা তা পাচ্ছি। তার সঙ্গে আমাদের নিু পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের সবার যোগাযোগ আছে, চমৎকার সম্পর্ক আছে। সেই সম্পর্ক দিয়ে দলটি ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে চলছে। প্রশ্নকর্তা : সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একটা দূরত্বের গুঞ্জন রয়েছে। মির্জা ফখরুল : এসবের কোনো ভিত্তি নেই। এখানে কোনোরকম দূরত্বের প্রশ্নই ওঠে না। বরং আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে আগের চেয়ে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আন্দোলনের মধ্যেই তা লক্ষ করছেন। আগে কিন্তু জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক এত ঘন ঘন হতো না। এখন প্রতি সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। যেটা একটি দলের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচবক, গতিশীলতা বাড়তে থাকে। প্রশ্নকর্তা : আপনারা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ভোটে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আবার সরকার বলছে সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী? মির্জা ফখরুল : সংবিধানে সুযোগ নেই কথাটি সঠিক নয়। সাংবিধানিকভাবেই আদালতের রায়ের দৃষ্টান্ত যারা দেন, তার মধ্যে কিন্তু পরিষ্কার করে বলা আছে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আরও দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। ওই জায়গা থেকে ওনারা সরে গেছেন। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। যেখানে সব রাজনৈতিক দল, এমনকি আওয়ামী লীগ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে ছিলেন। এমিকাস কিউরির ৯ জনের মধ্যে আটজনই তারা এর পক্ষে কথা বলেছিলেন। ফলে এখন সমাধানটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে শাসকগোষ্ঠীর ওপর। এজন্য আমরা পরিষ্কার করে বলেছি-এখনো ফিরে আসার সুযোগ আছে। সংসদ আছে। আমরা কীভাবে করেছিলাম, তত্ত্বাবধায়কের বিধান কিন্তু সংসদ নির্বাচন করে টু-থার্ড মেজোরিটি নিয়ে আমরা করেছিলাম। আজকে তাদের সংসদে টু-থার্ড মেজোরিটি আছে। সুতরাং সহজেই তারা করে নিতে পারেন। আর বিকল্প তো একটাই। পদত্যাগ। পদত্যাগ করলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তখন নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। ওই জায়গাটা সংবিধানে সংশোধন করতে হবে। প্রশ্নকর্তা : দাবি আদায়ে সামনে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বলছেন। আন্দোলনে সফল হওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? মির্জা ফখরুল : আন্দোলন কি কখনো দিনক্ষণ তারিখ দিয়ে হয়? আন্দোলন চলছে। ইতোমধ্যে বহু দল যুক্ত হয়েছে। আমরা সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এত অত্যাচার-নির্যাতন, গায়েবি মামলার মুখেও আমরা তাদের উসকানিতে পা দেইনি। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবেই কর্মসূচি দিচ্ছি। কোনো ধরনের অশান্তি হতে পারে, সহিংসতা হতে পারে-সে ধরনের কোনো কর্মসূচি দেইনি। হরতাল-অবরোধ তো দিইনি। মিছিল, গণমিছিল, পদযাত্রা, সমাবেশ, মানববন্ধন এগুলোর মধ্যেই চলছি। এখন পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অত্যন্ত সফল করেছে। কারণ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। এবার আমরা জয়ী হবই। প্রশ্নকর্তা: ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন, আবার ২০১৮ সালে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এতে করে কী প্রমাণ করতে চেয়েছেন? মির্জা ফখরুল : এতে করে আমরা দুটি জিনিস প্রমাণ করতে সম্ভব হয়েছি। একটা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না-তা প্রমাণ হয়েছে ২০১৪ সালের নির্বাচনে। সে সময় ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। জনগণ অংশগ্রহণ করেনি। বর্জনের ডাকে মানুষ সাড়া দিয়ে দুই শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যায়নি। ২০১৮ সালে গিয়ে প্রমাণ করেছি, দলীয় সরকারের অধীনে যদি আমরা নির্বাচনে যাই, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। প্রশ্নকর্তা: দাবি না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা হলেও দলের অবস্থান কী হবে? মির্জা ফখরুল : আমার বিশ্বাস জনগণই এই দাবি আদায় করে নেবে। নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন-এটা জনগণ তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আদায় করবে। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। অতীতের ইতিহাস বলে জনগণ সত্যিকার অর্থে যেটা চায়, সরকার শেষ পর্যন্ত তা মেনে নিতে বাধ্য হয়। প্রশ্নকর্তা : ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করা কৌশলগত কারণে কোনো ভুল ছিল কিনা? মির্জা ফখরুল : এটা কখনোই আমরা মনে করি না। কারণ এটা আমাদের একটা সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। আর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কিন্তু কোনো ফ্রন্ট আমরা করিনি। আমরা করেছিলাম সব দলগুলোকে একসঙ্গে নিয়ে। যেহেতু তিনি সিনিয়র ছিলেন, সামনে আসছেন। কিন্তু এ ধরনের কোনো আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত কোনোটাই হয়নি যে ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে থাকছেন। প্রশ্নকর্তা : ভোটের সঙ্গে জোটের একটি সমীকরণ আছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের নতুন কোনো ভাবনা আছে? মির্জা ফখরুল : আমরা এবার কিন্তু কোনো জোট করিনি। জোট হয়েছে বামদলগুলোর, ডানপন্থি দু-তিনটি জোট হয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে আছি। বাম-ডান সবাই মিলে একসঙ্গে আন্দোলনটা করছি। একই দাবিতে, একই রকমের কর্মসূচি দিয়ে। সবাই কিন্তু একই দাবি তুলছেন। যেমন-কমিউনিস্ট পার্টি বলেছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়, সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনও একই কথা বলছে। প্রশ্নকর্তা : জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক ঐক্য, সখ্য ও সরকারের অংশীদার নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। এখন জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কী? মির্জা ফখরুল : জামায়াত তাদের মতো করে রাজনীতি করছে। আমরা আমাদের মতো রাজনীতি করছি। কমিউনিস্ট পার্টি তাদের মতো রাজনীতি করছে। সবাই আলাদাভাবে রাজনীতি করছে। তবে একটা বিষয়ে সবাই কিন্তু এক। সেটি হলো এই সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রশ্নকর্তা : নির্বাচন এলেই ভূরাজনৈতিক কারণে কয়েকটি দেশ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে, সংকট সমাধানে সংলাপ বা আলোচনার তাগিদ দেয়। এই প্রথম তারা সংলাপের কথা না বলে শুধু অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছেন। এর কারণ কী হতে পারে? মির্জা ফখরুল : সংলাপের অভিজ্ঞতা আমাদের সুখকর নয়। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী ডেকেছিলেন, নির্বাচনের আগে দুবার। দুবারই উনি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সাত দিনও যায়নি সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সমানে অত্যাচার-নির্যাতন-গ্রেফতার করেছে। তখন ২৯ জন প্রার্থী গ্রেফতার হয়েছিল। কীভাবে সেই সংলাপকে আমরা বিশ্বাস করব। এজন্য আমরা বলেছি, সংলাপ যদি করতে হয় তা হলে তার বিষয়বস্তু হতে হবে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক অথবা নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন। প্রশ্নকর্তা: এ বিষয়ে কারও সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ কি হয়েছে? মির্জা ফখরুল : না, আমাদের সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমাদের কাছে সে রকম কোনো প্রস্তাবও কেউ পাঠায়নি। প্রশ্নকর্তা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠতা বেশি বলে অনেকে মনে করেন। বিএনপির সম্পর্ক কেমন? মির্জা ফখরুল : যেহেতু ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এবং ওখানে যে প্রবাসী সরকার ছিল, সে সময় ভারত সরকার ও জনগণ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থন দিয়েছিলেন। সে কারণে একটা ঘনিষ্ঠতা তো তাদের আগে থেকেই আছে। বিএনপির সঙ্গে যে নেই তাও তো নয়। বিএনপির অনেক নেতাই আছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাই আছেন যারা ভারতের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখেন। আমাদের কারোর সঙ্গেই কোনোরকম ভালো সম্পর্ক নেই-বাস্তব অবস্থা তা কিন্তু নয়। প্রশ্নকর্তা : সম্প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিদল ভারত সফর করে এসেছে। বিএনপির সঙ্গে এ ধরনের সফর বিনিময় হচ্ছে? মির্জা ফখরুল : এখনো ওই ধরনের কোনো কিছু হয়নি। তবে বিএনপি যেহেতু বিরোধী দলে নেই, সংসদে নেই, সে কারণে সাংবিধানিকভাবে হয়তো তারা আমাদের এখনো ডাকেনি। তবে তারা ডাকল কী ডাকল না এটা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ভারতের যে কটি রাজনৈতিক দল আছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এছাড়া আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ এবং চিন্তার মধ্যে আমরা সব সময় বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থটাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সবার আগে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ। প্রশ্নকর্তা : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। মির্জা ফখরুল : আপনাকে এবং আপনাদের সকল পাঠককে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ইসিতে ৩৩৮ ওসির বদলির তালিকা দড়ি ছিঁড়ে নানা ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি: রাসিক মেয়র কাপাসিয়ায় চলন্ত কাভার্ডভ্যানে দুর্বৃত্তদের আগুন বিএনপিতে ফেরার প্রশ্নে শাহজাহান ওমর বললেন ‘তওবা-আস্তাগফিরুল্লাহ’ বিদেশিদের কমিশনের ওপর চাপ দেওয়ার কোনো অধিকার নেই: ইসি আলমগীর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও একজোড়া নতুন ট্রেন বিএনপির সঙ্গে বেইমানি করেছেন কিনা প্রশ্নে যা বললেন শাহজাহান ওমর জাতীয় পার্টি আ.লীগের সঙ্গে থাকতে পারে-তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে যা বললেন চুন্নু প্রথম ফুটবলার হিসেবে যে নজির গড়লেন মেসি এবার ডিবি অফিসে ভাত খেলেন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর হানাহানি-সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার জন্য ভুয়া অনলাইন দায়ী: তথ্যমন্ত্রী আরাফাতের ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ছয় মাস পর শূন্য গাজা ‘ছাড়ো নয় মরো’ জলবায়ু সম্মেলন ৪ দিনে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল ঘোষণা স্বামীর অনুপস্থিতিতে বুশরা বিবির বাড়িতে আসতেন ইমরান খান! সৌদি আরব ও ইউএই সফরে যাচ্ছেন পুতিন নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনীর ‘ভুল’ হামলায় নিহত ৮৫ বড় নয়, ধরা খেলেন ছোট ঋণখেলাপিরা ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জুম মিটিং ফের মাঠের ঐক্য চায় বিএনপি-জামায়াত