অগ্নিকুণ্ডের ওপর ঢাকার মানুষ – U.S. Bangla News




অগ্নিকুণ্ডের ওপর ঢাকার মানুষ

ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স:-
আপডেটঃ ২ মার্চ, ২০২৪ | ৬:২৮
ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কেমন হবে আইনে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। অথচ ভবন মালিকরা জেনেবুঝেও তা মানছেন না। যত্রতত্র রাখা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে না ফিটনেস। আবাসিক ভবনে কেমিক্যাল রাখা বন্ধ হয়নি। ওদিকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোও আগের ভূমিকায়। ঘুসের বিনিময়ে সবকিছু জায়েজ করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগও আছে। আইনের কিছু দুর্বলতাও বিদ্যমান। তবে এসব নিয়ে দায়িত্বশীলদের মাথাব্যথা কম। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কিছুদিন হইচই। তারপর সবকিছু আগের মতো। এসব কারণে নিয়ম না মানার এক প্রতিযোগিতা চলছে সর্বত্র। এর ফলে রাজধানী নগরী ঢাকা এখন রীতিমতো অগ্নিকুণ্ডের ওপর বসে আছে। বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের অনেকে শুক্রবার কাছে এমন মন্তব্য করেন। তাদের মতে, আবাসিক

ভবন, বাণিজ্যিক ভবন, হোটেল, রেস্টুরেন্টের কোথায় কি ধরনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে তা জাতীয় বিল্ডিং কোডে স্পষ্ট করে বলা আছে। কিন্তু ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ভবনে সেসব মানা হচ্ছে না। গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ভবনের নিচে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার কথা। সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। প্রত্যেক ভবনে আগুনের সতর্ক করার যন্ত্র, আগুন নির্বাপণ যন্ত্র, পানির রিজার্ভার, ফায়ার এক্সিট রাখার কথা বলা আছে। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভবনগুলো গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেওয়াও বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকি তৈরি করছে। এই প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ মো. নুরুল হুদা বলেন, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে জাতীয় বিল্ডিং কোডে

অনেক নির্দেশনা দেওয়া আছে। ঢাকার ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ ভবনে তা মানা হচ্ছে না। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে অগ্নিদুর্ঘটনায় এত হতাহত হতো না। তিনি বলেন, ঢাকায় রাজউকের পরিদর্শক, অথরাইজড অফিসাররা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা এতটা দুর্বল হতো না। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস বিভাগেরও বড় দায় রয়েছে। গ্যাসের সিলিন্ডার যারা তৈরি করছেন, তাদের ওপর সরকারি তদারকি সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারি করতে হবে। অসাধু চক্র বাজারে ব্র্যান্ডের কোম্পানির নামে নকল সিলিন্ডারও তৈরি করছে। এসব ভালোভাবে দেখভাল করতে হবে। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবু সাদেক বলেন, ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার জন্য বিল্ডিং কোড, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে

নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তবুও ঢাকার ৯৫ ভাগের বেশি ভবনে তা মানা হচ্ছে না। রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগ সেসব বিষয়ে খেয়াল রাখছে না। অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এসব বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ভবনের সিঁড়ি বা যে কোনো ফ্লোরে গ্যাসের সিলিল্ডার রাখার কথা নয়। গ্রাউন্ড ফ্লোর বা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গ্যাসের সিলিন্ডার রাখার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ভবনে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। এখানে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সমঝোতারও অভিযোগ রয়েছে। তিনি জানান, অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে বিল্ডিং কোডেও কিছু দুর্বলতা রয়েছে। যেটা সংশোধন করতে হবে। ২০২০ সালের বিল্ডিং কোড প্রণয়নের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। অনেকে অনেক ধরনের অভিযোগ করলেও বাস্তবে ৫ ভাগের বেশি

ত্রুটি নেই। এগুলো ছাড়াও কোডে সেসব নির্দেশনা রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তৎপর হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত এক যুগের ব্যবধানে ঢাকা শহরে তিনটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীর ভবনের নিচে অবৈধ রাসায়নিক গুদাম থেকে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা। এতে মারা যান ১২৪ জন। এরপর সেখান থেকে রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু নানা প্রক্রিয়ার অজুহাতে স্থান নির্ধারণের পরও অদ্যাবধি স্থানান্তরিত হয়নি একটি গুদাম বা কারাখানা। ২০১৯ সালে পুনরায় পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টার রাসায়নিক গুদামের আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। তখন পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম সরানোর অনেক আলোচনা হয়, জোরালো দাবি

ওঠে। কিন্তু অদ্যাবধিও পুরান ঢাকা থেকে কোনো কেমিক্যাল কারখানা সরেনি। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারের আগুনে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ। বিভিন্ন ভবন ও মার্কেটের তালিকা করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এরপর থেমে গেছে সবকিছু। ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা না মেনেই সবকিছু হচ্ছে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। সেসব ব্যর্থতায় এবার বেইলি রোডে সিলিন্ডারের আগুনে পুড়েছে অর্ধশত প্রাণ। আবারও সক্রিয় হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো। গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনও জমা হবে। কিন্তু আগের মতো এ কমিটির সুপারিশও ফাইলবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। বিশেষজ্ঞদের অনেকে জানান, দেশে বড়

কোনো দুর্ঘটনা বা দুর্যোগ হলেই তৎপর হয়ে উঠে সরকারের সংশ্লিষ্টরা। শুরু হয় তাদের দৌড়াদৌড়ি-হুড়োহুড়ি। গঠন করা হয় নানা কমিটি ও কমিশন। দেওয়া হয় একের পর এক সুপারিশ ও নির্দেশনা। কিন্তু পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আবার থেমে যায় সবকিছু। ঝুলে যায় অধিকাংশ উদ্যোগ। এটা এক ধরনের ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে না এলে অগ্নিকুণ্ডে রূপ নেওয়া রাজধানী ঢাকায় নিমতলী, চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার এবং সর্বশেষ ঘটে যাওয়া বেইলি রোডের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন ও জাতীয় বিল্ডিং কোডে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে কিছু পার্থক্য রয়েছে।

বিল্ডিং কোডে বহুতল বলতে ১০ তলার উপরের ভবন বোঝানো হচ্ছে আর ফায়ার সার্ভিসের আইনে সাত তলার উপরের ভবন বোঝাচ্ছে। ভবনের আয়তন বিবেচনায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার কিছু শর্ত কমবেশি রয়েছে। এটা আইনগত একটি ত্রুটি। যা সমাধান করা মামুলি বিষয়। অথচ ঝুলে আছে। আর এসব ফাঁকফোকরের সুযোগ নিচ্ছেন এক শ্রেণির ভবন মালিক। তিনি বলেন, পুরো ভবন কাচের গ্লাসে মুড়িয়ে দেওয়া বিপজ্জনক। এতে অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন কাজ করা হচ্ছে। এটি বন্ধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ভবন নির্মাণের অনুমোদনকারী সংস্থা ও ফায়ার সার্ভিস বিভাগের দুর্বলতার কারণে ঢাকার

ভবনগুলো অগ্নিনিরাপত্তা মানছে না। বিল্ডিং কোড, অগ্নিপ্রতিরোধ আইন, ইমারত নির্মাণবিধিমালার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে তাদের কাজ করতে হবে। নইলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে।
ট্যাগ:

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
কারফিউ তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ে ৫ চ্যালেঞ্জ চার দিনে খান ইউনিস ছেড়েছেন পৌনে ২ লাখ ফিলিস্তিনি দেশে আর কতদিন কারফিউ থাকবে? কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্তদের চোখে শুধুই নীরব অশ্রু গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বহু সাধারণ শিক্ষার্থী জনজীবন স্বাভাবিক হলে কারফিউ প্রত্যাহার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারা অধিদপ্তরে জরুরি সিকিউরিটি সেল সীমিত আকারে চলছে দূরপাল্লার বাস, যাত্রী কম ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ১০ দিনে কারাগারে ৩৩০ চট্টগ্রামে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা ‘তারেক রহমানের হামলার নির্দেশনার অডিও সরকারের কাছে’ সরকার দিশেহারা হয়ে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে: জামায়াত সব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান বিএনপির মাঠে থাকার অঙ্গীকার আ.লীগ নেতাদের ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা পেতে যা করবেন কী হয়েছিল জাহ্নবীর? সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে: ডিবিপ্রধান প্রকৃত কোনো ছাত্রই এই হামলায় জড়িত ছিল না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী